আগুন দিয়ে জঙ্গল কে ধ্বংস নয়, সৃষ্টির দিকে এগিয়ে আসুক পৃথিবীর মানুষ।
মৃত্যুঞ্জয় সরদার:আমরাই ধ্বংসলীলায় মেতে উঠেছে,এক দিকে মানবসভ্যতাকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে, আর অন্যদিকে প্রাকৃতিক পরিবেশ।আমরা সবকিছু জেনে বুঝেও এই ধ্বংসের নীলা খেলা খেলছি নিজে হাতে।পুলিশ প্রশাসন আইন নেতা-মন্ত্রী কারোর কাছে বিষয়গুলো অজানা নয়। একদিন হয়তো মানবজাতির ধ্বংস হয়ে যাবে আমাদের নিজেদের ভুলের কারণ বসত! সেটা কবে, কিভাবে, কেন? কোথায়, কখন বলার সাধ্য আজও পর্যন্ত কারণ নেই। তবেই প্রতিদিন অতিবাহিত হচ্ছে আর আমাদের আবাসভূমি পুড়ে ছাই হচ্ছে। ভূমি দখল, গাছ উজাড় করায় কাঠ ব্যবসায়ীদের আনাগোনা বেড়েই চলেছে। আমরা খুবই মর্মাহত। কারণ আমাদের বন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আমরা অনুভব করছি। এ সময় বিশ্বের জন্য বন খুবই প্রয়োজন।’সব কথা আমরা ভুলতে বসেছি, নিজেদের স্বার্থের জন্য
পৃথিবী এখন নানা কারণেই উত্তপ্ত। দেশে দেশে হানাহানি, রক্তপাত, মৌলবাদী-গোষ্ঠীর নির্বিচার নরহত্যা-পৃথিবীকে নিয়ে যাচ্ছে ধ্বংসের দিকে। একবিংশ শতাব্দীর এই উৎকর্ষের মুহূর্তে পৃথিবীর এই রক্তাক্ত অবয়ব আমরা কেউই দেখতে চাই না। অথচ আজ আমাদের এই রক্তঝরা দৃশ্যই বার বার দেখতে হচ্ছে। কেন মানুষ পৃথিবীকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে, কি কারণে পৃথিবীকে স্বর্গ না বানিয়ে আমরা নরক বানানোর প্রচেষ্টায় লিপ্ত সেই বিষয়গুলো আজ আমাদের খতিয়ে দেখা দরকার।
বর্তমান বিশ্বের দিকে তাকালে দেখতে পাই পৃথিবী আজ ক্রান্তিকালে এসে দাঁড়িয়েছে। ‘ক্রান্তিকাল’ শব্দের আভিধানিক অর্থ হলোÑ ‘অবস্থা পরিবর্তনের সময়’। পৃথিবী এখন যে অবস্থায় আছে সেই অবস্থা বিন্দু থেকে বাঁক পরিবর্তনের সময় এসেছে। পৃথিবীর এই বাঁকবদল এখন বিশ্ববাসীর জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে নাকি পৃথিবীকে বিনষ্ট করবেÑ সেই শঙ্কা আজ পৃথিবীর সকল শান্তিকামী মানুষকেই ভাবিয়ে তুলছে। যারা শান্তির সপক্ষে দ-ায়মান, তারা জোর দাবি তুলছে কল্যাণকর চিন্তাই হোক পৃথিবীবাসীর লক্ষ্যবিন্দু, কিন্তু যারা পুঁজির পূজারী তারা চাচ্ছে ঠিক এর উল্টোটা। কল্যাণ এবং অকল্যাণের এই দ্বন্দ্বই আজ পৃথিবীকে উত্তপ্ত করে তুলেছে। মানুষের মনে যদি শুভভাবের উদয় না হয়, মানুষ যদি মানুষের জন্য আন্তরিক না হয়, তাহলে মানুষের পৃথিবী আর বাসযোগ্য থাকবে না। এই পৃথিবী দ্রুতই ধ্বংস হবে। ছারখার হয়ে যাবে মানুষের সকল আশা-ভরসা। আজ পৃথিবীর সকল মানুষকেই এই বিষয়টি গভীর মনোযোগ দিয়ে ভাবতে হবে। আজ একমাত্র মানবপ্রেমী ভাবনাই মানুষকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে পারে। এ ছাড়া আর কোনো কিছুই অনাগত বিনাশ থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করতে পারবে না।
পৃথিবীর বৃহৎ পরিবর্তন একদিনে বা এক মুহূর্তেই লক্ষ্য করা যায় না। যেকোনো দৃশ্যমান পরিবর্তনই সময় সাপেক্ষ ও শ্রমসাধ্য বিষয়। দৃশ্যমান পরিবর্তনের জন্য কখনো কখনো শতাব্দীকাল পর্যন্তও অপেক্ষা করতে হয়। আজ একবিংশ শতাব্দীতে এসে আমরা পৃথিবীর যে চেহারা দেখতে পাচ্ছি এই রূপে পৃথিবীকে সাজাতে অনেক কিছুই বিসর্জন দিয়েছে মানুষ। বিসর্জন না দিলে অর্জনের গৌরব অনুভব করা যায় না। আজ আমরা পৃথিবীবাসী এমন এক মুহূর্তের মুখোমুখি হয়েছি যে মুহূর্তে এসে চিন্তা করতে বাধ্য হচ্ছি আমাদের ভবিষ্যৎ কী? কোন পথে যাত্রা করছি সমগ্র মানবসমাজ? নিশ্চয় এই সময়ে এই নেতিবাচক শঙ্কা আমাদের মধ্যে থাকার কথা ছিল নাÑ অথচ কি আশ্চর্য আজ দুনিয়ার সব মানুষকেই এই নেতিবাচক ভাবনা দারুণ এক সংকটের মধ্যে নিপতিত করেছে।
আমাদের তো সবকিছু অনেক দেরি হয়ে গেছে, ধ্বংসের নীল মেতে ওঠার পরেই, পিছনের ইতিহাসের কথা, শেষ মুহূর্তে ভাবছি।আর সে কারণেই আমরা ধ্বংস চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি। উপায় তো আর নেই,আমাজনের জঙ্গল এর ভাগ্য আর এই পৃথিবীর ভাগ্য একসূত্রে গাঁথা। একে বলা হয় ‘পৃথিবীর ফুসফুস’। কেননা, পৃথিবীর যতটুকু অক্সিজেন আছে তার ২০ শতাংশ আসে আমাজন বন থেকে। আবার প্রতিবছর ২০০ কোটি মেট্রিক টন কার্বন-ডাই অক্সাইড শোষণ করে এই বন। অথচ গত এক দশকে আমাজনে এমন ভয়াবহ আগুন লাগেনি। ভাবুন একবার। দিকে দিকে সে আগুনে ছড়িয়ে পড়ছে আর তাতে পুড়ে কয়লা হচ্ছে শতসহস্র বর্গমাইলের চিরহরিৎ বন। প্রাণ বাঁচাতে আগুনের মুখে ছুটছে অবলা সব প্রাণি। আশ্রয় খুঁজে না পেয়ে সেখানেই পুড়ে কয়লায় পরিণত হচ্ছে। যেন কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না সে আগুন। তবেই ঘটনার সূত্রপাত সোমবার রাতে। জলদাপাড়া রেঞ্জের মালঙ্গি বিটে আচমকা আগুন লেগে যায়। প্রথমে ঘাসবনে আগুন লাগলেও শুষ্ক আবহাওয়ার ফলে আগুন ছড়িয়ে পড়তে সময় লাগেনি। কিছুক্ষণের মধ্যেই ভয়াবহ দাবানলের গ্রাসে চলে যায় ৮ বর্গ কিলোমিটার গভীর জঙ্গল।তবে মঙ্গলবার সকাল হতেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার খবর পাওয়া যায়। কিন্তু কী ভাবে ওই আগুন লাগল, তা নিয়ে চিন্তিত অভয়ারণ্য কর্তৃপক্ষ। প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে প্রাকৃতিক কারণ নয়, আগুন লাগানো হয়েছে জলদাপাড়ার এই অঞ্চলে।
আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও বহু বন্যপ্রাণীর জীবনহানির আশঙ্কায় রয়েছে বন দফতর। এদের মধ্যে একশৃঙ্গ গন্ডার, বাইসন, হরিণ, নীলগাই, ময়ুর ও অন্যান্য পশু-পাখিও রয়েছে। অন্য দিকে জলদাপাড়া সংলগ্ন অঞ্চলের বাসিন্দারা উদ্বিগ্ন ও সন্ত্রস্ত। কারণ, আগুনের লেলিহান শিখায় এবং তাপে ভয় পেয়ে বন্য জীবজন্তুরা লোকালয়ে ঢুকে পড়তে পারে।এই আশঙ্কায় রয়েছে জলদাপাড়ার এলাকার স্থায়ী বাসিন্দাদের। তবে পরিবেশবিদেরা জানাচ্ছেন, পরিবেশ ও জাতীয় উদ্যানের বাস্তুতন্ত্রের জন্য অগ্নিকাণ্ডের ওই ক্ষতি অপূরণীয়। এতে তৃণভোজীদের বাসস্থান, খাদ্য সঙ্কট হতে পারে। পরিবেশপ্রেমী সংস্থা ন্যাফের মুখপাত্র অনিমেষ বসু বলেন, “ক্ষতিগ্রস্ত ঘাসবন এলাকা গন্ডার, বাইসন, হরিণের মতো তৃণভোজীর খাদ্যভাণ্ডার। প্রচুর কীটপতঙ্গ, পাখি, ছোট জীবজন্তুর বাসভূমি। এখানে আগুন লাগলে জঙ্গলের বাস্তুতন্ত্রের অপূরণীয় ক্ষতি হয়।’’ কিন্তু এই আগুন লাগল কী ভাবে? বন দফতর সূত্রে বলা হচ্ছে, মনে করা হচ্ছে জ্বলন্ত বিড়ি বা সিগারেট থেকে এই আগুন ছড়িয়েছে। তা-ই বা লাগল কী ভাবে? বন দফতর সূত্রের দাবি, একাধিক কারণে তা লাগতে পারে। প্রথমত, গরু চড়াতে জঙ্গলে ঢুকে পড়া কেউ যদি জ্বলন্ত বিড়ি বা সিগারেটের টুকরো ফেলে, তার থেকে শুকনো পাতায় আগুন ধরে যেতে পারে। এখন আবহাওয়াও শুকনো। তাই দ্রুত সেই আগুন ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। দ্বিতীয়ত, এই সময়ে তোর্সায় মাছ ধরতে আসে অনেকে। তখন তাদেরই কেউ হয়তো জ্বলন্ত বিড়ি বা সিগারেট ফেলেছে। তৃতীয়ত, অনেক সময়ে এই ভাবে আগুন লাগিয়ে শুকনো ঘাস পোড়ানোও হয়। এই আগুন যে লাগানোই হয়েছে, সে কথা বুঝিয়ে দিয়ে রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) রবিকান্ত সিংহ বলেন, ‘‘উত্তরবঙ্গে প্রাকৃতিক ভাবে সাধারণত জঙ্গলে আগুন লাগে না।’’ তিনি আরও জানান, বড় কোনও জন্তুর মৃত্যুর খবর আপাতত নেই। জলদাপাড়া যে বন্যপ্রাণ এলাকার আওতাধীন, সেই কোচবিহার বন্যপ্রাণ বিভাগের ডিএফও কুমার বিমল বলেন, “তোর্সার চর ও লাগোয়া ঘাসবনের ৭০-৭৫ হেক্টর এলাকা আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।” তাঁর কথায়, “ওই দিনই নজরমিনার থেকে ধোঁয়া দেখে।আর যাই হোক না কেন ধ্বংসলীলায় মেতে উঠেছি আমরা, বিগত দিনের ইতিহাস কি বলছে সে কথা স্মরণ করিয়ে দিই।ব্রাজিলের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা দ্য ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্পেস রিসার্চ (ইনপে) জানিয়েছে, চলতি বছরের প্রথম আট মাসে আমাজনে রেকর্ডসংখ্যক আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। গত বছরের এই সময়ের তুলনায় এ বছর ৮৫ শতাংশ বেশি আগুন লেগেছে।স্যাটেলাইট ছবি গবেষণা করে ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ স্পেস রিসার্চ (ইনপে) দেখতে পেয়েছে, গত জানুয়ারি মাস থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত আমাজনের বনে ৭২,৮০০টি আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। গত বছরের আগস্ট পর্যন্ত এ সংখ্যা ছিল প্রায় ৪০১৩৬ বার।২০১৩ সালে পুরো ব্রাজিলে যত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিল (৩৫,৫৬৭ বার), চার মাস বাকি থাকতেই এ বছর তার চেয়ে বেশি আগুন লেগেছে। শুষ্ক মৌসুমে, বিশেষ করে জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত আমাজনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা একেবারেই ঘটে না তা নয়। তবে এবারের মতো এত ভয়াবহ আগুনে কখনও পোড়েনি এই বনাঞ্চল।বারবার এমন অগ্নিকাণ্ডে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্তও হচ্ছে ব্রাজিলের উত্তরাংশের রাজ্যগুলো। বিশেষ করে উত্তরাংশের চারটি রাজ্যে গত চার বছরে আগুন লাগার হার বেড়েছে ব্যাপকভাবে। পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে, আমাজনে লাগা আগুনের কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রোরাইমা, একর, রন্ডোনিয়া ও আমাজোনাস— এই চারটি প্রদেশ। গত চার বছরে রোরাইমাতে ১৪১, একরে ১৩৮, রন্ডোনিয়ায় ১১৫ ও আমাজোনাসে ৮১ শতাংশ আগুন লাগার হার বেড়েছে। এ ছাড়া দক্ষিণের প্রদেশ মাতো গ্রোসো দো সালে আগুন লাগার হার বেড়েছে প্রায় ১১৪ শতাংশ। অগ্নিকাণ্ডের ফলে ধ্বংস হচ্ছে সমস্ত জীব কুল । সেদিকে লক্ষ্য করলে ঠিক দেখা যাচ্ছে, কালের বিবর্তনে বিভিন্ন প্রজাতির ডাইনোসর কিভাবে অস্তিত্ব হারাল। পরবর্তী সময়ে আমরা পৃথিবীতে মানবজাতির অস্তিত্ব দেখতে পাই। সমস্ত প্রাণিকুলের মধ্যে মানুষজাতি সবচেয়ে বুদ্ধিমান; এর কারণ হল, মানুষ তার বুদ্ধি এবং চিন্তাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে যে কোনো সমস্যা সমাধান করার ক্ষমতা রাখে।যে মানবজাতি একসময় পাহাড়ের গুহায় বসবাস করত, সেই মানবজাতি এখন শততলা ভবন নির্মাণ করে তাতে বসবাস করছে। যে মানুষজাতির আগুন আবিষ্কার করতে কয়েকশ’ বছরের প্রয়োজন হয়েছিল, আজ তারা খুব অল্প সময়ে মরণাস্ত্র উদ্ভাবন করছে; একইসঙ্গে চাঁদ-মঙ্গলসহ অন্যান্য গ্রহে মানুষ পাঠিয়ে বিভিন্ন অনুসন্ধানধর্মী কাজ করে যাচ্ছে।
এখন মানুষকে আর বনে বনে ফলমূল খুঁজে অথবা পশুপাখি শিকার করে খাবার জোগাড় করতে হয় না। মানুষ প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটিয়ে অথবা প্রযুক্তির ব্যবহার করে নিজেদের চাহিদা মিটিয়েছে; পাশাপাশি অনেক সমস্যার সমাধানও করতে পারছে।মানুষ সভ্যতা ও জীবনমান উন্নয়ন এবং চাহিদা মেটানোর জন্য প্রচুর পরিমাণে কারখানা স্থাপন এবং বন উজাড় করে বসতি স্থাপনের মাধ্যমে পৃথিবীর পরিবেশের যে অপূরণীয় ক্ষতি করেছে, সেসব ক্ষতি হতে পারে মানুষের অস্তিত্ব সংকটের অন্যতম কারণ। গ্লোবাল ওয়ার্মিং পৃথিবীর অন্যতম প্রধান সমস্যা। বর্তমান পৃথিবীতে প্রায় ২৩০টি দেশ রয়েছে এবং এসব দেশ অর্থনৈতিক উন্নয়ন করতে গিয়ে প্রচুর পরিমাণে কারখানা স্থাপন করেছে। কারখানাগুলো থেকে নির্গত বিষাক্ত গ্যাস, রাসায়নিক দ্রব্য ও অধিকমাত্রায় জ্বালানি পোড়ানোর ফল স্বরূপ পৃথিবীর তাপমাত্রা ক্রমশ বেড়েই চলছে এবং জলবায়ুর পরিবর্তন হচ্ছে।
আমরা বিশ্ব উষ্ণায়ন বা গ্লোবাল ওয়ার্মিং সমস্যার পেছনের কারণগুলো আরও বিস্তারিত জানার চেষ্টা করব। কারণগুলো জানার পূর্বে আমাদের জানতে হবে, বিশ্ব উষ্ণায়ন বা গ্লোবাল ওয়ার্মিং ধারণা আসার প্রেক্ষাপট সম্পর্কে।সহজে বুঝতে গেলে আমরা দেখি বন উজাড়, কারখানা বা যানবাহন হতে নির্গত বিষাক্ত গ্যাস পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা ক্রমাগত বৃদ্ধি করে চলছে। বিগত ৮০০ বছর ধরে এই তাপমাত্রা প্রায় স্থির ছিল। কিন্তু গত ১০০ বছরের হিসাবে প্রমাণিত যে, এই তাপমাত্রা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।গবেষণা করে দেখা গেছে, বিগত ১০০ বছরে পৃথিবীর তাপমাত্রা ০.৫০ঈ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, ২০৫০ সালের মধ্যে পৃথিবী পৃষ্ঠের তাপমাত্রা ১.৫০-২.০০ঈ পর্যন্ত এবং ২১০০ সালের মধ্যে ১.৮০ঈ থেকে ৬.৩০ঈ-এর মতো বৃদ্ধি পেতে পারে।সারা পৃথিবীজুড়ে উষ্ণতার এই ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধিকেই বিজ্ঞানীরা বিশ্ব উষ্ণায়ন বা গ্লোবাল ওয়ার্মিং নামে অভিহিত করেছেন। গ্লোবাল ওয়ার্মিং-এর কারণগুলোর মধ্যে প্রথমেই আমরা যে কারণটি খুঁজে পাই তা হল, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি। সভ্যতা গড়তে বা আধুনিক বিশ্বে টিকে থাকতে প্রয়োজন শক্তি। কল-কারখানা, যানবাহন, বিদ্যুৎ উৎপাদন সবকিছুতেই ব্যবহার করা হয় জীবাশ্ম জ্বালানি। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহারের ফলে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের নির্গমনের পরিমাণ ও আনুপাতিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।দিন শেষে এই কার্বন-ডাই-অক্সাইডকে আমাদের পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা হয়। এর পরেই যে কারণটিকে দায়ী করা হয়, তা হল- ক্লোরোফ্লোরোকার্বনের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার। ক্লোরোফ্লোরোকার্বন (CFC11,CFC12) বা ফ্রেয়ন একটি বিশেষ যৌগ, যা ওজোন স্তর বিনাশের জন্য বিশেষভাবে দায়ী। উক্ত ঈঋঈ প্রধানত ফোম শিল্প, রং শিল্প, প্লাষ্টিক শিল্প, রেফ্রিজারেটর, এয়ারকন্ডিশনার, সুগন্ধি শিল্প, কম্পিউটার ও অন্যান্য যন্ত্রের সার্কিট পরিষ্কার প্রভৃতি থেকে নির্গত হয়। যার ফল হিসেবে ওজোন স্তর ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি সরাসরি পৃথিবীতে প্রবেশ করে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগসহ মরণব্যাধি ক্যান্সারের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।এছাড়া কৃষিক্ষেত্রে রাসায়নিক সারের ব্যবহার, ট্যানারি শিল্প-কারখানার বর্জ্য, অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র প্রভৃতি থেকে নাইট্রাস অক্সাইড, নাইট্রোজেন, অক্সাইড এবং সালফারের কণা পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও অনুকূল ভূমিকা পালন করছে। পাশাপাশি বাসস্থানের চাহিদা মেটানোর জন্য অথবা নগরায়নে যে প্রচুর গাছপালা উজাড় করা হচ্ছে, এর ফলে বায়ুমণ্ডলের কার্বন-ডাই-অক্সাইড শুষে নেয়ার ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। ফলে ক্রমেই উষ্ণতা বেড়ে চলেছে। বিশ্ব উষ্ণায়ন বা গ্লোবাল ওয়ার্মিং-এর প্রভাব পৃথিবী ধ্বংসের অন্যতম কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। আমরা পৃথিবীতে বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাব দেখতে শুরু করেছি। আসল কারণ জঙ্গল কে আগুন জ্বালিয়ে ধ্বংস করে দেওয়ার ফল। মানব জাতি ছাড়া আর কেউ এটা রক্ষাকর্তা নয়,সেই কারণেই জড় পৃথিবীর সাধ্য নেই জীবন ও পরিবেশের জন্য কল্যাণকর কোনো সমাধান দেওয়া, যদি পৃথিবীর মানুষ কল্যাণের দিকে এগিয়ে না যায়। আমরা মানুষেরা আবার কি আদিম অসভ্য সমাজে ফিরে যেতে চাই? আমরা কি জড়িয়ে পড়তে চাই অযৌক্তিক ও অপ্রয়োজনীয় ধর্মযুদ্ধে? আমরা কি ঠুনকো কোনো বিষয় নিয়ে বাঁধিয়ে দিতে চাই সর্বগ্রাসী তৃতীয় মহাযুদ্ধ? এসব আজ ঠা-া মাথায় ভেবে দেখা দরকার। আমাদের পূর্বপুুরুষেরা যে সীমাহীন ত্যাগ ও সংগ্রাম করে আজ আমাদের এইখানে পৌঁছে দিয়েছে সে ত্যাগ ও সংগ্রামকে আমরা বিফলে যেতে দিতে পারি না। আজ ধ্বংসের জন্য নয়, সৃষ্টির জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। লোভ ও লাভের চিন্তা বলি দিতে হবে। শুধু মুনাফা নয়, মানুষের কল্যাণের দিকেই এখন সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে যাত্রা করতে হবে। ধ্বংস নয়, সৃষ্টির দিকে যাত্রা করুক আমাদের প্রিয় পৃথিবীতে সমস্ত মানুষ। অগ্নিগর্ভ হাত থেকে রক্ষা পাক আমাজন জলদাপাড়ার জঙ্গল।