আমপানের ক্ষতিপূরণে স্বজনপোষণ, ক্ষোভ!
প্রদীপ কুমার মাইতি, পূর্ব মেদিনীপুর ঃ আমপানের ক্ষতিপূরণ না পাওয়া এবং তা নিয়ে শাসক দলের স্বজনপোষণ ও দূর্নীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চলছেই। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার নন্দীগ্রাম, কাঁথি, মহিষাদল, চণ্ডীপুর, খেজুরি, পটাশপুর, ভগবানপুর, তমলুক, কোলাঘাট, হলদিয়া, পাঁশকুঁড়া, রামনগরের পর এবার আমপানের ক্ষতিপূরণ না পাওয়া ও শাসকদল তথা তৃণমূলের স্বজনপোষণের অভিযোগ উঠলো এগরায়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় শোরগোল পড়ে গিয়েছে। তৃণমূল পরিচালিত এগরা-১ ব্লকের পাঁচরোল গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ব্যাপক স্বজনপোষণের অভিযোগ উঠলো। স্থানীয় এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, এলাকায় দলের পদাধিকারীদের আশেপাশের ও ঘনিষ্ঠ লোকজনই ক্ষতিপূরণের তালিকায় স্থান পেয়েছেন। যাঁরা প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত তাঁদের কপালে ক্ষতিপূরণ জোটেনি। গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য- সদস্যা, পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ, দলের অঞ্চল সভাপতি, বুথ সভাপতির ঘনিষ্ঠরাই ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন। কিন্তু ক্ষতিপূরণ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন প্রকৃত গরিব মানুষ। বিলবড়া গ্রামের বাসিন্দা গৌরীশঙ্কর বারিক বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূল করছি। কিন্তু আমপানে ক্ষতিপূরণের তালিকা বেরোনোর পর দেখা গেল দলে যাঁরা পদে রয়েছেন তাঁদের ঘনিষ্ঠরাই ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন। রবিবার এ ব্যাপারে ব্লক নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।” পাঁচরোল গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান রবীন্দ্রনাথ সোম বলেন, “যখন প্রথম সরকারি নির্দেশিকা এসেছিল তখনও পর্যন্ত কারা পাবে সেরকম কোনও কথা বলা হয়নি। পরবর্তীকালে দলের নির্দেশে পরিবর্তন করতে হয়েছে। ইতিমধ্যেই এলাকার গ্রাম পঞ্চায়েতে ১৩৯ এবং পঞ্চায়েত সমিতির ৩৭ জন মিলিয়ে মোট ১৭৬ জনের নাম তালিকায় উঠেছে। বেশ কয়েকজন বাদ দিয়ে সবাই ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন।” কিন্তু প্রশ্ন! শাসক দলের ঘনিষ্ঠদের কি টাকা ফেরত দিতে বলা হয়েছে? এই প্রশ্নের জবাবে স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান বলেন, “এখনও টাকা ফেরত দিতে বলিনি। তবে আমরা পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে তদন্ত করে দেখছি।” কিন্তু ওই গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার তৃণমূলের একাংশের অভিযোগ, ক্ষতিপূরণের তালিকায় দলের অঞ্চল সভাপতি অশোক দাস তাঁর স্ত্রী অঞ্জলি দাস ও পাঁচরোলের (পূর্ব) গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যা চন্দনা গিরি’র (মাইতি) দেওর দীপঙ্কর মাইতি, বাহিয়া বুথের পঞ্চায়েত সদস্য সবিতা মহাপাত্রের সুপার ভাইজার পূণ্য ঘোড়াই ও উনার কাজের লোক সাবিত্রী সাউ ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়েছেন। অথচ যাঁরা প্রকৃতপক্ষে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার অধিকারী তাঁদের নাম তালিকায় নেই। যদিও অভিযুক্তদের দাবি, “যাঁরাই প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাঁরাই পেয়েছেন। কোনরকমের স্বজনপোষণ আদৌও হয়নি।” এগরা-১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি বিজনবিহারী সাউ বলেন, “বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে যদি এরকম কিছু হয়ে থাকে তাহলে দলীয় ভাবে আমরা উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। দলের পক্ষ থেকে টাকা ফেরত দিতে বলা হবে। আমি জেলা নেতৃত্বকে বিষয়টি জানিয়েছি।” পুরো বিষয়টি নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিজেপি।তবে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার সর্বত্র প্রায় একই রকম অবস্থা ,এমনই অভিযোগ বিজেপি নেতার মুখ থেকে শোনা গেল! সাংবাদিকরা সত্য খবর প্রকাশ করে বলে তার পরিবারকেও ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পরও আরফানের টাকা দিচ্ছেনা একশ্রেণীর নেতারা ।যতদিন এগিয়ে আসছে স্বজনপোষণ ও ভরণপোষণের মতন দুর্নীতিগ্রস্ত নেতারা টাকা তছরুপ করছে অভিযোগ করেছে বিরোধী দলের একাংশ নেতৃত্ব বর্গরা। কাঁথি সাংগঠনিক জেলা বিজেপির সভাপতি অনুপ চক্রবর্তী বলেন, “শুধু এগরাতে নয়, গোটা জেলাতেই তৃণমূল ঘনিষ্ঠ বহু মানুষ যাঁরা ক্ষতিপূরণ পাওয়ার যোগ্য নন, তাঁরা তা পেয়েছেন। যাঁরা প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত তাঁদের নাম আর তালিকায় ওঠেনি। কাটমাণি নিয়ে তৃণমূল নেতারা নিজেদের ঘনিষ্ঠদের ক্ষতিপূরণের টাকা পাইয়ে দিয়েছেন। তবে জেলা সিপিএম নেতা মামুদ হোসেন বলেন, “জেলার সর্বত্র আমপানে স্বজনপোষণ ও ভুরি ভুরি দূর্নীতির অভিযোগ উঠছে। কাউকে দল থেকে শো- কজ করলে কি হবে? তৃণমূল যে দূর্নীতি করেছে তা প্রমাণিত। এটা কেবলমাত্র তৃণমূলের আইওয়াশ। আগামী ২০২১ এর নির্বাচনে মানুষ যোগ্য জবাব দেবে।” এগরার মহকুমাশাসক অপ্রতীম ঘোষ বলেন, “নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে পদক্ষেপ করা হবে।”