আশ্বিনের শেষদিনে ‘ডাক সংক্রান্তি’, কৃষি-সমৃদ্ধির প্রার্থনায় ঝাড়গ্রামে মনসা পুজো
স্বপ্নীল মজুমদার, ঝাড়গ্রাম: জঙ্গলমহলের মূলবাসীর আরাধ্য মনসা কেবল সর্পদেবী নন, কৃষি-সমৃদ্ধির দেবীও। কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িয়েই আশ্বিন সংক্রান্তির মনসা পুজোর চল।
শনিবার, ১৭ অক্টোবর আশ্বিন মাসের সংক্রান্তি। জঙ্গলমহলে এই বিশেষ দিনটিকে ডাক সংক্রান্তি বলা হয়। শহর, গাঁ-গঞ্জ জুড়েই মনসার পুজোর আয়োজন করা হয়েছে। শুক্রবার ঝাড়গ্রামের বাজারে মনসা মূর্তির পসরা নিয়ে বসেছিলেন বিক্রেতারা। করোনা আবহে অবশ্য এবার বড় মূর্তির তুলনায় ছোট মূর্তি বেশি বিক্রি হয়েছে।
তবে অন্যান্য বারের মতো উচ্ছ্বাস এবার নেই। অন্যান্য বছর ডাক সংক্রান্তির আগের দিনে বাজারে থিকথিকে ভিড় হতো। এবার অবশ্য করোনা আবহে ততটা ভিড় বাজার ছিল না। ডাক সংক্রান্তি হল রাঢ়-বাংলার একটি লৌকিক উৎসব।
এই সময় মাঠের ফুল ধরা সবুজ ধানগাছকে গর্ভিণীজ্ঞানে পুজো করা হয়। সম্পদের অধিষ্ঠাত্রী লক্ষ্মীদেবীর আরাধনা করা হয়। তাছাড়া, বিভিন্ন অনুষ্ঠান-আয়োজনের মাধ্যমে কিংবদন্তির ‘ডাক পুরুষ’-এর আশীর্বাদ লাভ করার কামনা করা হয়। তবে ঝাড়গ্রাম সহ জঙ্গলমহলের বিস্তীর্ণ এলাকায় এদিন মনসার পুজো হয়।
ঝাড়গ্রামের বিশিষ্ট লোকশিল্প ও সংস্কৃতি গবেষক সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের ব্যাখ্যা, ভরন্ত এই সময়ে জঙ্গলমহলের মনসা পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ভাল ফসলের আকাঙ্ক্ষা। কয়েকশো বছর ধরেই এই পুজোর চল। শুরুতে প্রধানত সরীসৃপ ও কীটপতঙ্গের আক্রমণ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার লক্ষে মনসা পুজো করা হত বলে গবেষকদের একাংশের মত।
ক্রমে বিপদনাশের পাশাপাশি, কৃষির সমৃদ্ধি-প্রার্থনায় গৃহস্থ বাড়িতে ঘটা করে বিষহরির আরাধনা শুরু হয়। বাড়ির উঠোনে ‘সিজ’ (ফনি-মনসা জাতীয় ক্যাকটাস) পুঁতে সেই গাছের তলায় মনসা-থানে পোড়া মাটির হাতি ও ঘোড়া রেখে পুজো হয়। সুব্রতবাবু জানান, জঙ্গলমহলের লৌকিক পুজোয় মূর্তির চল ছিল না।
তবে এখন মূর্তিপুজোও হচ্ছে। শালুক ফুল, চিঁড়ে-কলা-দুধ ও কালিয়াকড়া নামের একটি বিষফল দিয়ে নৈবেদ্য সাজিয়ে দেবীর পুজো হয়। ১৬ প্রহরে ১৬ বার পুজোর সঙ্গে চলে জগৎগৌরীর (মনসার অপর নাম) বন্দনা-গান। যে পুজোয় বলি হয়, সেটি আমিষ পুজো। এমন পুজোয় পায়রা, হাঁস, ভেড়া, পাঁঠা বলি দেওয়ার রেওয়াজও রয়েছে।