ধর্মীয় উৎসব আনন্দেও কি কোর্ট শেষ কথা!
লেখক এর নিজস্ব মতামত ,এর জন্য সম্পাদকমন্ডলী দায়ী নয়।
——————————————————–
শুভাশিস ঘোষ–ভারতবর্ষের বিচারালয়ে এখন এক নয়া ট্রেন্ড দেখা যাচ্ছে।আর সেটা হল বিভিন্ন ধর্মীয় বিষয়েও দেশের বিভিন্ন আদালত এখন স্পষ্টতই তাদের রায় ঘোষনা করে দিচ্ছেন।তা সে যতই বিতর্কিত বিষয় হক না কেন।বলতে দ্বিধা এইসব ব্যাপারে কখনো কখনো কোর্টের অতি সক্রিয়তাও লক্ষ করা যাচ্ছে।যা অতীতের তুলনায় নজিরবিহীন তো বটেই কোথাও কোথাও সাংবিধানিক রীতিনীতির পরিপন্হী বলেও মনে হতে পারে।যদিও দেশের আইন ও বিচার ব্যবস্হার উপর সম্পূর্ণ আস্হা ও বিশ্বাস রেখে একজন অতি সাধারণ মানুষ হিসেবে আমার মনে হয়েছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কোর্ট এতটা সক্রিয়তা না দেখালেও পারে,যা কিনা একশ্রেণীর মানুষের ধর্মাবেগে আঘাত করার সামিল।সম্প্রতি দুর্গাপুজো উপলক্ষে কলকাতা হাইকোর্টের নিশেধাজ্ঞা খানিকটা ধর্মাচারণে আঘাতের সামিল কিনা সেই প্রশ্নেই এই কথা বলা।একথা ঠিক কোভিড ১৯ এখন দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা।যে সমস্যাটাকে আরো দ্বিগুন বাড়িয়ে তুলছেন আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলো।
এই লেখার সময় শেষ পাওয়া করোনা আপডেট থেকে জানতে পারছি এপর্যন্ত আমাদের দেশে প্রায় সাড়ে সাত লক্ষ মানুষ করোনা সংক্রমিত এবং যাদের মধ্যে ইতিমধ্যেই প্রায় ছয় লক্ষের উপর মানুষ সুস্হ্য হয়ে গেছেন।যেখানে এপর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা এক লক্ষের কিছু বেশি।একই ভাবে পশ্চিমবঙ্গে এপর্যন্ত করোনা সংক্রমণের সংখ্যা লাখ ছাড়ালেও মৃত্যুর সংখ্যা ছয় হাজারের কিছু বেশি।যা রাজ্যের মোট জনসংখ্যার এক শতাংশও ছুঁতে পারেনি।একই সময় অন্য একটি পরিসংখ্যানও উঠে আসছে যা হল আমাদের দেশে রোজ অপুষ্টিতে শিশু মৃত্যুর হার কিন্তু ২২০০ যেখানে শুধু মাত্র পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার ৪৩০র মত।অথচ করোনা কাপালিকের ভয়ে আমরা এতটাই ভিত যে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গা পুজোটাকে প্রায় জবাই করে দিলাম।আমাদের উজবুক বাঙালিরা এটা বুজলো না পুজোর এই কটা দিন লোকে শুধু ঠাকুর দেখে না।
তারা প্রচুর খাওয়া দাওয়া কেনাকাটাও করেন।আর সেগুলো সাজিয়ে গুছিয়ে দোকান ব্যবসা দিয়ে কিছু মানুষ পুজোর কটাদিন অর্থ উপার্জন করেন।যাদিয়ে তাদের পেট চলে।পরিবারের পাঁচজনের মুখে হাসি ফোটে।কিন্তু এসব এখন শুধুমাত্র স্বপ্ন।যেখানে মহামান্য আদালতই বলে দিয়েছেন এবারে বাঙালির পুজো দেখা নৈবঃ নৈবঃ চ।যা নজিরবিহীন শুধু নয় বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবের উপর এক চরম অন্যায় আঘাতও বটে।বলা হচ্ছে এই উৎসব ঘিরে যেভাবে মানুষের ঢল নামবে তাতে নাকি আগামী দিনে করোনায় রাজ্য ভরে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেবে।হু হু করে মানুষ করোনায় আক্রান্ত হবে।হাজারে হাজারে মানুষ বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে কারণ এত করোনা আক্রান্ত মানুষের জন্য চিকিৎসার সুযোগও থাকবে না।সবটাই ধরে নেওয়া যুক্তি।
আমরা যদি একটু পিছনে তাকাই তাহলে কিন্তু এই যুক্তি ধোপে টেঁকে না।গত নয়মাস ধরে করোনা সংক্রমণের যে ছবি আমাদের সামনে তুলে ধরা হচ্ছে তার সাথে বাস্তবের মিল কতটা একবার সেটা কেউ ভেবে দেখেছেন?২২ মার্চ জনতা কারফিউ দিয়ে আমাদের করোনা ভাগাও পর্ব শুরু হয়েছিল।যার আগে একমাস করোনা প্যান্ডামিক সম্পর্কে হু বারবার সাবধান করা সত্বেও আমরা দেখেছি কিভাবে নমস্তে ট্রাম্পের সম্বর্ধনে গোটা দেশ সেজে উঠেছিল।লাখ মানুষের জমায়েত থেকে সেদিন কোভিড ছড়ায় নি।দিল্লির দাঙ্গায় অংশ নেওয়া হাজার হাজার ভক্তজনদের উপস্হিতিতে নরমেধ যজ্ঞতেও ছিল না কোভিড আশঙ্কা।তারপর পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরার সেই মর্মান্তিক দৃশ্য।এসবই হয়েছিল মহামান্য দেশের শীর্ষ আদালতের সম্মুখে।তবুও কোন অজানা কারণে শীর্ষ আদালতের বিচারপতিদের টনক নড়ানো যায়নি।অথচ সেই সময়ই যদি দেশের সর্বোচ্চ আদালত এটা বলে দিতেন যে যতদিন না পৃথিবী থেকে কোভিড সংক্রমণ চিরতরে দূর না হচ্ছে ততদিন ভারতের কোন প্রান্তেই কোনরূপ লোকজমায়েত হতে পারে এমন কোন ধর্ণা,মিছিল মিটিং,পুজোপার্বণ ও সামাজিক যে কোন অনুষ্ঠান কিছুই করা যাবে না।যা সব জাতি ধর্ম বর্ণ ও দলমত নির্বিশেষে সবাই মানতে বাধ্য।
কিন্তু সেটা হয়নি।উল্টে আদালতের রায়ে আমরা দেখেছি কিভাবে রামমন্দির নির্মাণের উদ্বোধন হল।বর্ণাঢ্য সেই অনুষ্ঠানে দেশের প্রায় প্রতিটি রাজ্য থেকে ঘড়া ঘড়া গঙ্গার জল শিলান্যাস অনুষ্ঠানে পাঠানো হয়েছিল।স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী সেই অনুষ্ঠানে সামিল হলেও করোনা বিধি নিয়ে কেউ প্রশ্ন তোলার সাহস দেখালেন না।একই সাথে চলেছে রাজনৈতিক দলগুলোর মিছিল মিটিং ও নানা জায়গায় বিক্ষোভের কর্মকাণ্ড।বলা বাহুল্য সর্বত্রই লোক সমাগম হয়েছে যা কোথাও কোথাও জনজোয়ারেও পরিণত হয়েছে।তখন কেন তাকে বন্ধ করার জন্য কেউ আদালতে গেলেন না?নাকি এই নিয়ে আদালতে গেলে পাছে নিজেদের করেকম্মে খাওয়াই বন্ধ হয়ে যায় সেই আতঙ্কে।আরো আশ্চর্যের এই যে দূর্গা পুজো হবে বলে যেদিন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ঘোষনা করে ছিলেন সেদিনও কেউ আদালতে মামলা করেনি করোনা বিধিকে সঠিকভাবে পালন করার দাবি নিয়ে।মামলাটা হল ঠিক মুখ্যমন্ত্রী যখন এই কঠিন সময় যাতে পুজো কমিটিগুলোকে অসুবিধায় পড়তে না হয় তার জন্য অনুদান ঘোষনা করলেন।
ঠিক তখন থেকেই কিছু বাঙালির ফাটতে শুরু করল।কারণ তারা পুজো মানেন না।তারা নাস্তিক।প্রকাশ্যে গোমাংস ভক্ষণ করে ধর্মনিরপেক্ষতার পরীক্ষা দেন।আসলে বাপ রাশিয়া মা চীন আর ছেলেপুলেরা এদেশে কেরসীন সেই প্রবাদটাকে সামনে রেখেই বাঙালির উৎসব আনন্দে জল ঢেলে দিতে তৎপর এই উচ্ছ্বিষ্ট মালগুলো এখন সম্পুর্ণ জনগণ বর্জিত এক রাজত্বহীন সারমেয়র দল যাদের কাজই হল যে কোন কাজেই ঘেউ ঘেউ করা।কিন্তু এরা জানেনা’রাজা চলে বাজার আর কুত্তা ভোঁকে হাজার’ এক্ষেত্রেও সেটাই হবে।
থাকলো গিয়ে কোর্টের রায়।ওটাতো কেমন দেখতে হয় সেটা আদালতের দেওয়ালে টাঙানো ওই চোখে কাপড় বাঁধা হাতে দাঁড়ি পাল্লায় ঝুঁকে থাকার ছবিটাই প্রমাণ করে।যেখানে দেশের এই মুহূর্তে জমে থাকা মামলার সংখ্যা তিন কোটি ছাড়িয়ে গেলেও তা নিয়ে বিচারকদের কোন চিন্তা নেই,যার রায় বেরোতে আরো একশো বছর লেগে যাবে বলে ওয়াকিবহালদের ধারণা।আর এখন কোভিড১৯র কারণে বিচার ব্যবস্হা তো আরো বেহাল।বহু মামলা জমে যাচ্ছে।সবচেয়ে বড় কথা বেল জামিনের মামলাগুলোর পর্যন্ত শুনানি ঠিকমত না হওয়ায় বহু নিরাপরাধীদের জেলের মধ্যেই আটকে থাকতে হচ্ছে।
যা নিয়ে ভিডিও কনফারেন্স কিংবা ভারচুয়াল শুনানি করে কেন মামলাগুলোর জরুরি নিস্পত্তি করা হচ্ছে না সেই বিষয়ে একটিও কথা নেই।শুধু খোঁচা কেসে তড়িঘড়ি রায় ঘোষনা।না হলে যে কমিটমেন্টের দায় থেকে যায়।আর বিচারপতিদের মাইনাটা যখন এই কোভিড প্যান্ডামিকেও বন্ধ হয়নি তখন দুর্গাপুজোর উৎসবে কিছু মানুষ বঞ্চিত হলই বা তাতে কি যায় আসে।পলিটিক্যাল মাইলেজ পাওয়া থেকে কাউকে রুখে দেওয়া গেল।হোক না তাতে বাঙালির শুকনো মুখ।