কেন্দ্রের আর্থিক প্যাকেজ কি ভারতবাসীর কাছে উপহাস?প্রশ্ন উঠেছে নানামহলে–
দূরদৃষ্টি পাতাটি নিউজ সারাদিনের পাঠকদের জন্য, পাঠকের নিজস্ব মতামতের জন্য দায়ী নয় নিউ সারাদিন কর্তৃপক্ষ।
ঝুম্পা দেবনাথ,; ——–করোনার আবহে ভারতবাসী বিপন্ন এবং ভীত-সন্ত্রস্ত। লকডাউনের জেরে রুজি-রোজগার হারিয়েছেন অনেক মানুষ। ফলত ভারতের অর্থনৈতিক পরিকাঠামো অচল হতে বসেছে। এমতবস্থায় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ সাংবাদিক বৈঠক করে ২০ লক্ষ কোটি টাকার আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করেন, যা অনেক লাভজনক মনে হয়েছিল প্রথম দিকে। মেলায় বিক্রি হত্তয়া হাউইমিঠাই-র যেমন মুখে দিলেই মিলিয়ে যায়, তেমনি এই প্যাকেজও পরবর্তীকালে এই হাউইমিঠাই-র মতোই মিলিয়ে যেতে লাগল তার আর্থিক লাভজনক রূপ, এমনি দাবি বিরোধী মহলের একাংশের।
অসাধু ব্যবসায়ীরা যাতে খাদ্যশস্য যথা তেলের বীজ, ভোজ্য তেল, ডাল ইত্যাদি গুদামে মজুত করে রেখে কৃত্রিমভাবে যাতে খাদ্যশস্যের দাম না বাড়াতে পারেন সেই দিকেই নজর রেখেই তৈরি হয়েছিল নানারকম বিধিনিষেধ। কিন্তু অর্থমন্ত্রী এই ২০ লক্ষ কোটি টাকার করোনা প্যাকেজে এই সমস্ত বিধিনিষেধ তুলে দেত্তয়ার কথা বলেছেন। বিরোধীমহলের একাংশের প্রশ্ন, সরকার যদি মনে করেন এই পুরানো বিধিনিষেধ তুলে দেওয়া দরকার, তাহলে তা সংসদে আলোচনা করা হোক কিন্তু তা এই করোনা প্যাকেজের সাথে কেন যোগ করা হল?
এই প্যাকেজে নরেন্দ্র মোদির ভাবনায় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ ঘোষণা করেছেন অনলাইন ই-বিদ্যা প্রকল্প। বিরোধীরা এই ই-লার্ণিং প্রকল্পের সমালোচনায় সমীক্ষাকে হাতিয়ার করেছেন। বিরোধীরা সমীক্ষাকে ভিত্তি করে দাবি করছেন, ই-লার্ণিং-র জন্য দরকার বিদ্যুৎ কানেকশন। ২০১৭-১৮ সালে করা এক সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে ভারতের ১৬% বাড়িতে ১-৮ ঘন্টা থাকে বিদ্যুতের কানেকশন। ৯-১২ ঘন্টা বিদ্যুৎ-র কানেকশন থাকে ৩৩% বাড়িতে। সারাদিনে ১২ ঘন্টা বিদ্যুৎ-র কানেকশন পায় ৪৭% বাড়ি। এবার বিরোধীদের একাংশ বলেন ই- বিদ্যা তথা অনলাইন পড়াশোনার জন্য দরকার স্মার্টফোন বা কম্পিউটার। সমীক্ষায় জানা যায়, ২৪% মানুষের কাছে আছে এই স্মার্টফোন এবং ১১% মানুষ কম্পিউটারের সুযোগ পেয়ে থাকেন এবং ইন্টারনেটের সুবিধা পেয়ে থাকেন ৯%। কিন্তু নীতিশ কুমার শাসিত বিজেপি সরকারের বিহার রাজ্যে এই ইন্টারনেটের সুবিধা অনেক কম। ৪-৬% মানুষ ইন্টারনেট সুবিধা পেয়ে থাকেন। আবার দিল্লি রাজ্যে বিহারের তুলনায় অনেক বেশি ৩৫% মানুষ ইন্টারনেট সুবিধা পেয়ে থাকেন। কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন দফতর ই-লার্ণিং-র ক্ষেত্রে সরকার ২০১৯ সালে ৬০৪ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন। কিন্তু ২০২০ সালে বাজেটে তা কমিয়ে ৪৯৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির এই ই-লার্নিং-র ভাবনাকে কি সত্যিই সরকার সাফল্য করতে চান? এমনই প্রশ্ন তুলছেন বিরোধী মহল। যদি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির এই ভাবনা সাফল্য লাভ করেও তাহলে যেসকল ছাত্র-ছাত্রীর ইন্টারনেট সুবিধা নেই, তাহলে ভবিষ্যত প্রজন্মের সেই সকল ছাত্র-ছাত্রীরা কি অশিক্ষার চাদরে নিমজ্জিত হবেন? বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছে সরকারের কাছে।
অর্থমন্ত্রী প্যাকেজে আবার বলেন, করোনাকে সামাল দেওয়ার জন্য রাজ্যসরকারগুলি জিডিপি-র ৩% র বদলে ৫% পর্যন্ত ধার নিতে পারবে। কিন্তু তার পরবর্তীতে তিনি রাজ্যসরকারকে জলকর, প্রণালীকর ইত্যাদি নেওয়ার কথা বলেছেন। এই নিয়ে ও বিরোধিতা করে বিরোধীরা বলেন , অর্থমন্ত্রী বলতে পারতেন আয় বাড়ানো দরকার , কিন্তু করের ঘোষণা করলেন কেন? আবার এটা ও বলে বিরোধীরা যে সরকার কর বসতেও পারেন আবার তুলতেও পারেন।
বিরোধীমহল দাবি করেন , অনেক সময় কেন্দ্রীয় সরকার বলে থাকেন এক দেশ, এক ভাষা। এই একের ভাবনা নরেন্দ্র মোদি ভাবলেও অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ করোনা প্যাকেজে কেন এই ভয়াবহ দুঃসময়ে মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য কিছু বললেন না? প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। সেন্ট্রাল বোর্ড অফ হেল্থ ইন্টারলিজিয়েন্সের সমীক্ষায় রাজ্য ও কেন্দ্র মিলিয়ে জিডিপি-র ১.২% অর্থ, এখন তা বেড়ে হয়েছে ১.২৯% অর্থ।ব্রিটেনের অর্থনীতিবিদ উইলিয় হেনরি ব্যাভেরেজ “ইউনিভার্সাল বেসিক ইনকাম” তথা ” সবার জন্য ন্যূনতম আয়” নীতির কথা বলেছিলেন। এই নীতিতে বলা আছে, বেকার, অসহায়, দরিদ্র , বিধবা মহিলা প্রভৃতিদের একটি ন্যূনতম টাকা নেওয়া হবে। এর ফলে তারা এই টাকায় তাদের প্রয়োজনীয় জিনিস কিনবেন। ফলে চাহিদা ও যোগানের মাত্রা ঠিক থাকবে এবং অর্থনৈতিক চাকা টাও সচল থাকবে। বিট্রেন, ফান্স, ইতালি সহ অন্যান্য ইউরোপীয় দেশে এই নীতির কথা ভাবছে এই করোনার আক্রমণে অসহায় পরিস্থিতে। অর্থমন্ত্রী যে সাংবাদিক বৈঠকের মাধ্যমে ২০ লক্ষ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করলেন তাতে জনকল্যাণকামী কিছু নেই, সবই গ্যাস ফোলানো বেলুনের মতো , যা দেখতে খুব সুন্দর কিন্তু মানুষের প্রয়োজনের কিছুই নয়, এমনই নানা কথায় সমালোচনার ঝড় তুলেছেন বিরোধীদের নানা মহল।