মতামত

কোরনার অাবহে স্বাস্থ্যপরিকাঠামো…তথৈবচ অবস্থা রোগীদেরও

ঝুম্পা দেবনাথ,: সারা দেশে চলছে তৃতীয় দফার লকডাউন। তা স্বতেও করোনাকে ঠেকাতে নাভিশ্বাস উঠেছে রাজ‍্যবাসী। লকডাউনের ৪৯ তম দিনেও করোনা নিয়ে উদ্বেগ তুঙ্গে। কলকাতার অনেক জায়গায় লকডাউনের নিয়মবিধি সঠিকভাবে না মেনে চলার জন্য করোনার সংক্রমণ বাড়ছে ক্রমশ এমনটাই মত প্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞদের। এই করোনা সংক্রমণকে ঘিরেই সবথেকে মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে কলকাতা। ক‍লকাতায় সংক্রমণকে ঘিরে কনটেইনমেন্ট জোনের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩৮টি। কলকাতা পুরসভার তথ্য অনুযায়ী ১ থেকে ৯ এবং ১৫ নম্বর এই বরোগুলিতেই সংক্রমণের মাত্রা সবথেকে বেশি। ৪ নম্বর বরো অর্থাৎ বড়োবাজার সংলগ্ন এলাকা এবং ১৫ নম্বর বরো অর্থাৎ গার্ডেনরিচ সংলগ্ন এলাকা করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বেশি হওয়ার জন‍্য কনটেইনমেন্ট জোন হয়েছে এই এলাকাগুলি। এছাড়াও বিধান সরণি, হেমন্ত কুমার স্ট্রিট, মণ্মথ ভট্টাচার্য লেন সহ অন‍্যান‍্য জায়গাগুলিও কনটেইনমেন্ট জোনের অধীনে রয়েছে।সঠিক সাস্থ্য নীতি না নিলে এই পরিস্থিতি আরো ভয়ঙ্কর হবে !
করোনার ফলে অনেক হাসপাতাল, নার্সিংহোম বন্ধ হয়ে গেছে। আপাতত কলকাতা মেডিকেল কলেজকে করোনায় আক্রান্ত মানুষদের চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত করা হয়। ১১ মে থেকে বন্ধ হয়ে যায় আউটডোরের চিকিৎসা পরিষেবা। তখনই অনেকের মনে উঁকি দিয়েছিল একটাই প্রশ্ন, তাহলে ক‍্যান্সার , থ‍্যালাসেমিয়া বা অন্যান্য মারণ‍ রোগে আক্রান্ত রোগীরা যাবেন কোথায়? মকরা, রায়গঞ্জ প্রভৃতি জায়গায় বসবাসকারী রোগীদের ভরসা হল এই মেডিকেল কলেজ।মেডিকেল কলেজের আউটডোর বন্ধ থাকার জন্য বহু মানুষ হারাছেন তাদের প্রিয়জনদের। কেমোথেরাপি না পেয়ে প্রবল বিপাকে পড়েছেন ক‍্যান্সার রোগীরা। কেমোথেরাপির অভাবে ২ বছবের শিশুকন্যা প্রিয়ংশীর মৃত্যু হয়। আগের বছর আজকের দিনেই তার একটি কেমো দেত্তয়া হয়েছিল বলেই দাবি করেছেন মৃতের মা বাবা। তাদের দাবি, বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরেও শিশুকন্যাটির চিকিৎসা না হত্তয়ায় মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ে এই প্রিয়াংশী। করোনার আবহে স্বাস্থ্যব‍্যবস্থা যে অথই জলে চলে গেছে, তা বোঝা যায় ১৪ এপ্রিল প্রসূতি আদুলী দাসের মৃত্যুকান্ডেকে কেন্দ্র করে। ১৪ এপ্রিল আদুলী দাসকে প্রসবের জন্য ভর্তি করা হয় উলুবেড়িয়ার হাসপাতালে। তারপর কোভিড টেস্টের জন্য তাকে পাঠানো হয় উলুবেড়িয়া সঞ্জীবন হাসপাতালে। এরপর থেকেই উঠে আসে নানা মিসিং লিঙ্ক। চলে দুই হাসপাতালে মধ্যে টানাপোড়েন এবং হাসপাতাল কতৃপক্ষ পরিবারকে কিছু জানান নি বলেই পরিবারের অভিযোগ। গত ১লা মে তার পরিবার উলুবেড়িয়া হাসপাতাল থেকে জানতে পারেন, আদুলীর মৃত্যু হয়েছে সপ্তাহ দুয়েক আগেই ওই উলুবেড়িয়া হাসপাতালেই‌। এই ঘটনার পরেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে পরিবারের লোকজন। তাদের প্রশ্ন ,তাদের কেন কিছু জানানো হল না? আদুলী বাচ্ছাটাই বা কোথায়? এর পরিপ্রেক্ষিতে মৃতার বাবা উলুবেড়িয়ায় মৃত আদুলী দাসের ময়নাতদন্ত ও ডিএনএ টেস্ট এবং আদুলী দাসের সন্তান ফেরতের দাবি জানান। এর পাশাপাশি মৃতার বাবা শঙ্কর রুইদাস হাসপাতালে বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে প্রশাসন, রাজ‍্য স্বাস্থ্য দফতর, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকে, চিফ জাস্টিন অফ কলকাতার দফতরে, রাজ‍্য পুলিশের ডাইরেক্টর জেলারেলের দফতরে, মুখ‍্যমন্ত্রীর দফতরে, রাজ‍্য মানবাধিকার কমিশনের দফতরে, রাজ‍্যপালের কাছেও পাঠিয়েছে অভিযোগপত্রের প্রতিলিপি।
এই ঘটনার পাশাপাশি নজির বিহীন সাক্ষী হয় রাজ‍্য।৫ মে কাশীপুরের এক যুবক হাই সুগার নিয়ে ভর্তি হন মেডিকেল কলেজে। পরেরদিনই চিকিৎসকেরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ, পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়নি মৃতদেহ, বরং পরিবারের লোকজনকেই বলা হয় পিপিই পড়ে মর্গে মৃতদেহ দিয়ে আসতে। এইরকম নানা রোগীদের হয়রানির চিত্র ফুটে ওঠে মেডিকেল কলেজের আউটডোর বন্ধ হত্তয়ার পর থেকে। বহু মূমুর্ষ রোগী তথা থ‍্যালাসেমিয়া, ক‍্যান্সার, প্রসূতি মহিলার ফিরে গেছেন চিকিৎসার অভাবে। করোনা ছাড়া অন্যান্য মুমুর্ষ রোগীদের কপালে পড়াছে এখন চিন্তার ভাঁজ।কোথায় হবে তাদের চিকিৎসা? নাকি চিকিৎসার অভাবে প্রাণ হারাতে হবে তাদের? এই রকম নানা চিন্তায় চিন্তিত রোগীর পরিবার।…………

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button