রাজ্য

করোনার আবহে শিল্প-সংস্কৃতির জরাজীর্ণ!

ঝুম্পা দেবনাথ-:করোনার থাবা থেকে রাজ‍্যবাসীকে সুরক্ষিত করতে লকডাউন হল একমাত্র পন্থা। এই লকডাউনের ফলে করোনা সাধারণ মানুষের শরীরে থাবা বসাতে না পারলেও , কিন্তু থাবা বসাতে পেরেছে বাংলার শিল্প – সংস্কৃতিতে। গত ২৩শে মার্চ থেকে বাংলায় টানা ২ মাস লকডাউন চলছে। লকডাউনের ফলে তালাবন্ধ হয়েছে সমস্ত রাজ‍্যের শিল্পগুলি। এই শিল্প – সংস্কৃতিকে কেন্দ্র করে বহু সাধারণ মানুষ তাদের রুজি-রোজগার করে থাকেন । সেই সমস্ত মানুষদের অবস্থা আজ বড়ই সঙ্গিন। কিভাবে সংসার চলবে? কিভাবে হবে রুজি-রোজগার? এই রকম নানা চিন্তার ভাঁজ পড়েছে শিল্প – সংস্কৃতিকে কেন্দ্র করে সংসার চালানো মানুষদের কপালে।
লকডাউনে বন্ধ হয়ে গেছে বিদ‍্যালয় , কলেজ এবং একই ভাবে বন্ধ কোচিং সেন্টার গুলিও। এর ফলে অর্থাভাবের সম্মুখীন হয়েছেন বহু গৃহ শিক্ষকেরাও। খুব শোচনীয় অবস্থার মাধ্যমে জীবন নির্বাহ করছেন গৃহশিক্ষকেরা। পশ্চিমবঙ্গ গৃহ শিক্ষক কল‍্যাণ সমিতির, কেন্দ্রীয় কমিটির এক্সিকিউটিভ মানিক দেবনাথ জানান, গত দুই মাস ধরে টানা লকডাউন। এর ফলে তাঁরা কোন ‍রকমভাবেই বেতন পাচ্ছেন না। কোনো কোনো গৃহ শিক্ষক আছেন বাড়ি ভাড়া নিয়ে পড়ান, লকডাউনের ফলে রোজগারের অভাবে ভাড়া মিটিয়ে সংসার চালাতে তাঁদের নাভিশ্বাস উঠছে। কেন্দ্রীয় কমিটি এবং জেলা কমিটির পক্ষ থেকে ত্রাণ দিয়ে সাহায্য করেও কোনো লাভ হচ্ছে না বলেই জানান তিনি। তাই সমস্ত গৃহশিক্ষকের পক্ষ থেকে এক্সিকিউটিভ মানিক দেবনাথ বাংলার মুখ‍্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে দাবি রেখেছেন যে , কিছু সংখ্যাক ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে যেন কোচিং সেন্টার চালানো অনুমতি দেওয়া হয় । তার পাশাপাশি অর্থনৈতিক দিক দিয়েও সাহায‍্যের জন্য দাবি জানিয়েছেন মানিক দেবনাথ।শুধু মাত্র গৃহশিক্ষকের অবস্থাই শোচনীয় তা নয় আরো শোচনীয় অবস্থার মাধ্যমে দিনযাপন করছেন নামি-বেনামি শিল্পের মজুরেরা। উওর ২৪ পরগনার বেলঘড়িয়ার ব‍্যাগ শিল্পের মাধ্যমে অনেক সাধারণ মানুষ রোজগারের মাধ্যমে তাদের সংসার চালাতেন। কিন্তু লকডাউনের পর থেকে বন্ধ হয়ে গেছে এই শিল্প কারখানা গুলি। মূলত এই কামারহাটি পুরসভার ৩০ ও ৩১ নম্বর ওয়ার্ড এবং উওর দমদম পুরসভার ৬ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডে রয়েছে প্রায় ১০০ ও ৩০০ টি এই ব‍্যাগ কারখানা। লকডাউনের এই কারখানাগুলি বন্ধ হওয়ার জন্য এই শিল্পকে কেন্দ্র করে প্রায় কয়েক শো পরিবারের রোজগার আজ বন্ধ। শ্রমিকমন্ডলের একাংশের দাবি আর্থিকভাবে সাহায্য করতে হবে সরকারকে‌। দুই মাস রোজগার বন্ধ থাকায় পেটের দায়ে সবজি বিক্রি করছেন এক ব‍্যাগ কারখানার শ্রমিক। এই সমস্ত কারখানাগুলিতে দূরদূরান্ত থেকে কাজ করতে আসেন শ্রমিকেরা। হর্ঠাৎ -ই লকডাউনের ফলে তারা বাড়ি ফিরতে পারেন নি।এই সমস্ত অসহায় মানুষের সহযোগিতায় এগিয়ে আসেন উওর দমদম পুরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রনব কুমার ঘোষ। তিনি জানান, আঞ্চলিক আর্থিক অবস্থা একদম ভেঙে পড়েছে। তিনি আরও বলেন, পেটে ভাত না থাকলে লকডাউন মানবেন না কেউই । তিনি অসহায় মানুষদের আহারের ব‍্যাবস্থা করেছেন। ব‍্যাগ শিল্পের সাথে সাথে প্লাস্টিক শিল্পের অবস্থা ও খারাপ। প্লাস্টিক শিল্পের সাথে জড়িত শ্রমিকরাও আর্থিক অনটনের সম্মুখীন হচ্ছেন। শ্রমিকরা জানান, কাজকর্মের অভাবে রোজগার হারিয়ে তারা সংসার চালাতে পাচ্ছেন না। তাই তাদের দাবি, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব লকডাউন তোলার।
কোচবিহার চকাচকা শিল্পকেন্দ্রে অল্প সংখ্যক শ্রমিক নিয়ে শুরু হয়েছে জুটমিলগুলি‌। সমস্ত বিধিনিয়ম মেনে ৫০ জন শ্রমিককে স‍্যানিটাইজ করে ও হাত হ‍্যান্ড ওয়েজ নিয়ে পরিস্কার করিয়েই প্রবেশ করানো হচ্ছে কারখানার ভিতরে। কম সংখ্যক শ্রমিক নিয়ে কাজকরানোর জন্য উৎপাদন কমে
যাচ্ছে অনেক এবং লাভের তুলনায় ক্ষতির ই মুখ দেখছেন শিল্প কারখানা গুলি।
লকডাউনের ফলে বন্ধ বিভিন্ন মন্দিরগুলিও। এর ফলে পুরোহিতদের বন্ধ হয়ে গেছে রোজগার। পুরোহিতও আজ চরম অর্থকষ্ঠের সম্মুখীন হয়েছেন। সেই সাথে সাথে ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছেন ফুল ও ডেকরেটার শিল্পগুলিও। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বাংলার ভ্রমণপিয়াসী ভাবনা। এব ফলে প্রায় বন্ধ হতে বসেছে পর্যটন শিল্পগুলিও।আবার দেখাযাছে বরানগর সহ কলকাতার বেশ কিছু অঞ্চলের স্বর্ণ ব‍্যবসায়ীরা সোনার বদলে বিক্রি করছেন আলু, পেঁয়াজ সহ বিভিন্ন সবজি। তাদের দাবি কাজ নেই, তাই পেটের দায়ে সবজি বিক্রিকেই একমাত্র পন্থা করেছেন তারা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button