ডক্টর প্রদীপ কুমার ভট্টাচার্য করোনা পজেটিভ নিয়ে ভর্তি মেডিকা হসপিটালে, সরকারকে পাশে থাকার আহ্বান পরিবারের
সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়:তিন পুরুষের বাস শ্যামনগরে। দাদু ছিলেন শ্যামনগরের প্রথম এমবিবিএস ডাঃ বিভূতিভূষন ভট্টাচার্য। তিনি ছোট থেকে শিখেছিলেন মানব সেবাই পরম ধর্ম। স্বপ্ন দেখতো ছোটবেলা থেকেই তিনি ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করবে।যার মধ্যে ইচ্ছাশক্তি প্রবল থাকে, তিনি একদিন তার লক্ষ্যভেদে পৌঁছায় তারই উদাহরণ ডক্টর বিভূতিভূষন ভট্টাচার্য।স্কুল ফাইনাল পাশ করার পরে উচ্চ শিক্ষার জন্য ভর্তি হয়ে ,একদিন তিনি ডাক্তারী পড়ার সুযোগ পেয়ে যান। সত্যিকারেই ডাক্তারী পাশ করে, প্রথম তিনি ডাক্তার হন শ্যামনগর এলাকাতে। সেই পরিবারের ছেলে ডক্টর প্রদীপ কুমার ভট্টাচার্য ১৯৮৮ সালে ডাক্তারি পাশ করে বেরিয়েছেন নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ থেকে। আজ প্রায় ৩০ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে তাঁর ডাক্তারি পেশায়। ছোট থেকেই ইচ্ছে ছিল, সমাজে নিজেকে ডাক্তার হিসাবে প্রধিষ্ঠিত করা। কিন্তু কখনোই সরকারি চাকরি করার ইচ্ছে ছিল না। তাই তিনি তিন পুরুষের ভীটে বাড়িতেই আজও ডাক্তারি করে চলেছেন তিন পুরুষের সম্মান বজায় রেখে। গোটা বিশ্বজুড়ে যখন এই করোনা ভাইরাস আক্রমণ শানিয়ে চলেছে, তখন ডাক্তারবাবুরা নিজেদের চেম্বারে বসতেও রীতিমতো ভয় পাচ্ছেন। ঠিক সেই সময়ই শ্যামনগরের ডাক্তার প্রদীপ ভট্টাচার্য সব নিয়ম মেনেই সাধারণ মানুষের জন্য প্রতিদিন নিজের চেম্বার খুলে বসছিলেন এবং চিরাচরিতোভাবে চিকিৎসা করে যাছিলেন।যেসব গরীব মানুষগুলো চিকিৎসা করার টাকা ছিল না, তাদেরকে বিনামূল্যে চিকিৎসা করেছেন ।সময় অসময়ে নিজের উপার্জনের টাকায় ওষুধ কিনে দিয়েছেন। বেশিরভাগ সময়ে নিজের উপার্জনের অর্থ সাধারণ গরিব মানুষের মধ্যে বিলিয়ে দিতেন। তবে করোনাভাইরাস অতি মহামারীর সংকটের সময় প্রতি তিন দিন অন্তর স্যানিটাইজ করা হয়েছে চেম্বারকে এবং মানুষকে সঠিক পরিষেবা দিতে দুই বেলাই তিনি চেম্বার খুলে বসেছেন। এটুকু শুনলে আপনারা বলবেন, এ তো অনেকেই করে থাকে। কিন্তু যে কারণে এতোগুলি কথা লেখা এই দুর্দিনের বাজারে হয়তো তিনিই প্রথম একজন ডাক্তার যিনি মুখ্যমন্ত্রীর করোনা ভাইরাস ত্রান তহবিলে ৫১ হাজার টাকা নিজের থেকে দিয়েছেন। ভাটপাড়া পৌরসভার চেয়ারম্যান অরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে চেক তুলে দিয়েছেন তিনি। তাঁর স্ত্রী ও পুত্রকে সঙ্গে নিয়ে তাঁর চেম্বারে বসেই। তাঁর বক্তব্য বলেছিলেন “কেন্দ্রীয় সরকার চীরকালই বাংলাকে বঞ্চনা করে এসেছে। আমি আমার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে এবং তাঁদের মতামত নিয়ে সামান্য নিজের রোজগারের টাকা জমিয়ে এই ৫১ হাজার টাকা তুলে দিয়েছি মুখ্যমন্ত্রীর ত্রান তহবিলে।” তাই ইতিহাসের পাতায় প্রদীপ বাবুর নাম থাকবে কিনা তা হয়তো আমাদের কারোর জানা নেই কিন্তু তিনি এই বিপর্যয়ের সময় যে কাজটি করলেন তা যে সবার কাছেই যে প্রশংসনীয় হয়ে থাকবে , কিন্তু এমনই পরিস্থিতির মাঝে আজ তার পরিবার খুবই অসহায় দিন কাটাচ্ছে। এই মুহূর্তে নিজের চিকিৎসার অর্থ সহযোগিতা করার মতন তার পাশে, আজ আর কেউ নেই। যে মানুষটি মানুষের জন্য সবকিছু করলো ও তার নিজের চিকিৎসার আজ বিপন্নের পথে। তিনি করোনাভাইরাস পজিটিভ নিয়ে, মুকুন্দপুর মেডিকা হসপিটাল ভর্তি আছেন। এমনি পরিস্থিতিতেই নিজের জীবন খুবই বিপন্ন,আজ মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে ডক্টর প্রদীপ কুমার ভট্টাচার্য । এই সংকটময় পরিস্থিতিতে ,সরকারকে তার পরিবারের পাশে থাকার আহ্বান জানিয়েছে ডক্টরের স্ত্রী ও পুত্র।