মতামত

চুপ বিচার চলছে


——————————
“মহামান্য হুজুর এবারের মর্তে কেন মা দূর্গা আসছেন আমরা বুঝতে পারছি না,দয়া করে আপনি মা দূর্গার এই বছর মর্ত্য সফরের উপর এখনি নিষেধাজ্ঞা জারি করুণ।না হলে এই মর্ত্যবাসী মহা বিপদে পড়বে।”এতক্ষণ স্বর্গে বসে দেবরাজ ইন্দ্র ও তার সভাসদরা, পার্থ- মিত্ররা ধৈর্য্য ধরে এই শহরের কিছু মর্ত্যবাসীর আদালতে তাদের নষ্টামি দেখছিলেন আর প্রবল রাগে থরথর করে কাঁপছিলেন।রাগে থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে দেবরাজ ইন্দ্র বললেন,”বেটারা বলে কি আমাদের দেবী দূর্গা মর্ত্যে গেলে নাকি ওদের মহা বিপদে পড়তে হবে! যে জগৎ জননী মা দূর্গা এক সময় অসূর নিধন করে গোটা মানব জাতীকে তার ধ্বংস হতে রক্ষা করেছিলেন আজ নাকি তিনিই হলেন মর্ত্যবাসীর কাছে সবচেয়ে বিপদের কারণ”! মর্ত্যবাসীর আজ একি হাল? এতো ঘোর অনাচার অন্ধকারে ডুবে যাওয়ার সময়”।

এই বলে দেবারাজ ইন্দ্র দেবাদিদেব নারদের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলেন”হে মহাপ্রভু দেবাদিদেব, আপনি এখনি কৈলাশে মহামায়ার কাছে দূত পাঠিয়ে তার মর্ত্যে যাওয়া রোধ করুণ।না হলে মর্ত্যে তার অপমান হতে পারে।যা আবার নতুন করে দেবাদিদেব মহাদেবের ক্রোধের সঞ্চার ঘটাতে পারে।শুনে নারদ মুনি অত্যন্ত চিন্তিত ভাবে বললেন,আপনি মহারাজ ঠিকই বলেছেন এখনই সন্দেশটা কৈলাশে পাঠানো উচিত। তাদের বলে দেওয়া হক যে দেবী দুর্গাকে যাতে মর্ত্যে ঢুকতে দেওয়া না হয় তার জন্য কিছু অশূরপন্হী দুর্জন মানুষ সেখানকার আদালতে মামলা ঠুকেছে।এরা করোনাসূরের অনুগত।এদের আসল উদ্দেশ্য হল করোনা ভাইরাস মহামারির অজুহাতে মর্ত্যে দেবী দুর্গার পুজোই বন্ধ করে দেওয়া।আর সেই জায়গায় শ্রীরামের নামে বাঁদরামি করা।

এই কথা শুনে আশ্চর্য নেত্রে দেবরাজ ইন্দ্র বললেন, সেটা আবার কিভাবে সম্ভব? যেখানে স্বয়ং শ্রীরাম রাবণ বধের জন্য দেবী দুর্গাকে আবাহন করেছিলেন সেই দেবীপূজাকে অগ্রাহ্য করে তার অণুগতকে নিয়ে আদিখ্যেতা! এবার নারদ মুনি বললেন,আসলে মর্ত্যে এখন পলিটিকস চলছে যা ঘোর কলিকালের এক অবসম্ভাবি ফল। ওখানে এক ধরণের মানুষ আছেন যারা আমাদের নিয়ে ব্যবসা করেন।এরা এখন করোনাসূরের ভয়াবহতা দেখিয়ে বাঙালীর মধ্যে বিভেদ তৈরি করে নিজেদের রাজনৈতিক ফায়দা তুলছে।না হলে দেবীর আগমনকে স্বাগত জানিয়ে যখন সেরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সব ভক্তদের উৎসাহিত করতে ক্লাবগুলোকে ৫০,০০০ করে টাকা অনুদান প্রদান করে তখন তার যৌক্তিকতা নিয়ে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলে আদালতে মামলা রুজু করল! যাতে আদালত এই বছরে পূজো বন্ধের নিদান দেন।

ভাবুন দেবরাজ এরা কতবড় খচ্চর পাপীষ্ঠা। নাম কিনা মা দূর্গা মর্ত্যে এলে করোনা রোগভোগের প্রাদুর্ভাব আরো বেড়ে যাবে।তাই আজ সারাদিন মর্ত্যবাসীর নজর ছিল কোলকাতা হাইকোর্টের দিকে।নারদ বললেন,আদালত জানিয়েছেন সরকারি অনুদান প্রাপক পূজো কমিটিগুলো একটি টাকাও নাকি দেবীপূজায় খরচ করতে পারবেন না।এই টাকার সবটাই মানুষের মুখের মাস্ক ও হ্যান্ডসানিটাইজারের পিছনেই খরচা করতে হবে।যা দেবী মাকে আরো অসম্মান করার সামিল। আমাদের দেবী দূর্গা কি আজ এতটাই অস্পৃশ্য যে তাকে মন্ডপে দেখতে আসার আগে মুখে মাস্ক জাতীয় ঢাকনা দিতে হবে আর ভাল করে হাত ধুতে হবে।

যেখানে পুজোর কোন ত্রুটি যাতে না হয় সেই বিষয়ে স্বয়ং আদালতের একটাও মন্তব্য শোনা গেল না। নারদের মুখে এই কথা শুনে আরো বিচলিত ভঙ্গিতে দেবারাজ ইন্দ্র বললেন,এক মহা সর্বনাশ এই বাঙালী জাতি তথা মর্ত্যের মানুষের জন্য অপেক্ষা করে আছে।যারা মায়ের পুজোকে বানচাল করতে চাইছে তাদের যাতে নরকেও স্হান না হয় সেটা আগে আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। এরা নিজেদের পু- লিঙ্গ মুখে নিয়েই এখন দেবীর দূর্গার আগমনকে বিঘ্নিত করছে।তাই এদের মুখে মাস্কের বদলে কন্ডম পড়িয়ে দাও, যাতে এদের চিৎকার তীব্র তর হলেও তা স্বর্গে না পৌঁছায়।আর এখনি দেবী মাকে খবর দিয়ে বল তিনি যেন আমাদের স্বর্গলোক ত্যাগ না করেন। যাইহোক দেবরাজ ইন্দ্রের নির্দেশে নারদ মুনি অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে প্রস্হান করলেন এবং কৈলাশের উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন।নারদ সেখানে পৌঁছে দেখলেন, মহামায়া ও ভোলানাথ চুপচাপ বসে আছেন।

নারদ তাদের উদ্দেশ্যে বন্দনা করতে করতে যেই না মর্ত্যের প্রসঙ্গ পেড়েছেন অমনি ভগবান শ্রী শ্রী ভোলানাথ বলে উঠলেন,আমি জানি নারদ মুনি তুমি কি বলতে এসেছ। মর্ত্যবাসীর একটা অংশ আদালতে মামলা ঠুকেছে যাতে দেবী দুর্গাকে মর্ত্যের যাওয়া থেকে আদালত বিরত করেন।নারদ সায় দিয়ে বললেন,একদম ঠিক মহাপ্রভু।ওরা দেবী মাকে মর্ত্যের যাওয়া থেকে বিরত করতে যেভাবে আদালতে মামলা ঠুকেছে তাতে মায়ের ঘোর অসম্মান হচ্ছে। যেখানে আদালত দেবী মায়ের পুজোর জন্য প্রাপ্ত সরকারি অনুদানের একটাকাও নাকি মায়ের পুজোতে খরচ করা যাবেনা এমনটাই নিদান দিয়েছেন।ওই টাকার সবটাই যেন করোনাসূরের পিছনে খরচ করা হয়।এটা তো ঘোর অন্যায়।যা মায়ের পক্ষে অপমানও বটে।

নারদ বলল,অথচ মহাপ্রভু দেখুন মাত্র কিছুদিন আগেই এই মর্ত্যবাসীদের একাংশ বিরাট অর্থ খরচ করে ভগবান শ্রী রামের মন্দির নির্মাণ করলেন তখন তো মর্ত্যের বিচারপতিরা মুখে কুলুপ দিয়ে ছিলেন তখনও তো করোনা অতিমারির ভ্রুকুটি ছিল তাহলে দেবী পূজার সময় কেন এত নিষেধাজ্ঞা জারি করা হচ্ছে?শুনে ক্রোধান্বিত ভোলানাথ বললেন শোন তবে নারদ “,মর্ত্যবাসীদের এখন ধ্বংসের শুরু।ওরা আজ পাপে পরিপূর্ণ। ওদের মুখ নিঃসৃত ভাষা আজ এতটাই অবদমিত যে নিজেরাই নিজেদের মুখ ঢাকছে মাস্ক দিয়ে।এর থেকে আর নির্মমতা কি হতে পারে।ওরা এতটাই পাপে নিমুজ্জিত যে একে আপরকে আলিঙ্গন তো দূর ছূঁতেও সাহস পাচ্ছে না। ওদের দেখে তোমার কি মনে হয় ওরা জীবন্ত? একদমই না। ওরা হল সবাই চলতি ফিরতী একেকটা লাশ।

শুধু প্রবল দুর্যোগে ভেসে যাওয়ার অপেক্ষায়।নারদ তখন বললেন,তা প্রভু তাহলে এখনোও কেন এদের টিকিয়ে রেখেছেন!শুনে মহামায়াকে দেখিয়ে বাবা ভোলানাথ বললেন,”ওর অনুরোধে, পৃথিবীর সব প্রাণী যে ওর সন্তান,তাই দোষগুণ সবই যে ওর বিচার্য। সেখানে আমি মাথা গালাই কিভাবে? মর্ত্যবাসীদের একাংশ যে ওকে এখনো ভালবাসে।যারা চায় মনেপ্রাণে মা দূর্গার পুজো করতে।ছোট ছেলে মেয়েদের মুখে হাসি ফোটে ও গেলে।তাই এবারেও ও যাবে।তা সে মর্ত্যের আদালত যাই নিদান দিক না কেন।না হলে পুরো ভুবনে যে করোনা সূর ছরিয়ে পড়বে।সে তো আরো ভয়ঙ্কর হবে।

Related Articles

Back to top button