মতামত

গঙ্গার সঙ্গে সাগর রাজের মিলন ঘটান কপিলমুনি।

মৃত্যুঞ্জয় সরদার: ইতিহাসকে যেমন আমরা অস্বীকার করতে পারি না, ঠিক তেমনি বিধাতার লিখন কে খন্ডন করা যায়না।আর সেই কারণে এই ধরাধামে কেউ রাজা আর কেউবা ফকির। সবই ভগবানের ইচ্ছা, ভগবান ছাড়া জীবের কোন গতি নাই। কর্মই ধর্ম, কর্মেই মনুষ্যত্ব বিচারের ফল। কর্মের মাধ্যমে মানুষকে শ্রেষ্ঠ ও ভগবান করুনা প্রকাশ পায়। বহু প্রাচীনকাল থেকেই এই বিশ্ব মাঝারে পাপীতাপী ও ভয়ঙ্কর ব্যক্তিদের নির্মূল করেছেন স্বয়ং ঈশ্বর।ঈশ্বর অহংকার আর অত্যাচারের কোনদিনই সহ্য করতে পারে না, আর সেই কারণে বিশ্বে অতি মহামারী তৈরি হয়েছে করোনাভাইরাস। ধ্বংসের নিলায় মেতে উঠেছেন তিনি।যতদিন না এই অত্যাচারী ,অহংকারী ,আর অবিচারই মানুষগুলো শেষ হচ্ছে ততদিন , তার রুষ্ট থামছে না ।। সারা পৃথিবী জুড়ে বিজ্ঞান এত উন্নতি আর তেমনি অভিশাপ প্রাকৃতিক শক্তির কাছে হার মানতে বাধ্য হয়েছে। লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে, অনেকেই মৃত্যুবরণ করেছে। আজও তেমনি কিছু করতে পারল না বিজ্ঞানীরা ,সবই তো তার লীলা খেলা। রাখে হরি মারে কে, ভগবানের মার দুনিয়ার বার ,এ কথাটি আর যেন চিরন্তন সত্যের মত প্রমাণিত। সত্যের পথে চলতে গিয়ে আমার জীবনে বহু বাধা-বিপত্তি ,অত্যাচার, অবিচার অনাচার ,কিনা হয়নি আজও তা অব্যাহত। সবিতার মহিমা তিনি যা করাচ্ছেন তাই আমার জীবনে ঘটে চলেছে।তবে সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা হাজার চেষ্টা চালিয়ে আমাকে সত্যের পথ থেকে আজও সরাতে পারিনি ভবিষ্যতে পারবেও না।তবে আমি আজ স্মরণ করিয়ে দিতে চাই দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা বিগত দিনে বহু প্রাচীনকালে এটা ছিল এখানে মুনি-ঋষিদের বাসস্থান ও তপস্যার উপযুক্ত একটি জায়গা।বঙ্গোপসাগরের উপকূলবর্তী তীরে গড়ে উঠেছিল এই মনিঋষিদের তপস্যা কেন্দ্রিক বাসস্থানটি, প্রাচীনকালে সব ধ্বংস হয়ে গেছে।আ র ইতিহাস অনুসন্ধান করতে গিয়ে বেরিয়ে এল আর এক মনীষীর কথা।কপিল মুনির জন্ম ৩৫০ খ্রিস্টাব্দ পুর্বে| তাঁর বর্তমান বযস অনুমানিক ২,৭৭০ বছর|হিন্দু পৌরাণিক কাহিনি মতে― ঋষি বিশেষ। কর্দম প্রজাপতির ঔরসে দেবহুতির গর্ভে এঁর জন্ম হয়েছিল। ইনি সাংখ্যদর্শন প্রণেতা। এই দর্শনে ঈশ্বরের সত্তা অস্বীকার করা হয়েছে। তাঁর মতে জগত্ জড়-প্রকৃতি থেকে উদ্ভূত। তাঁর রচিত সাংখ্যদর্শনের সংখ্যা ২৫টি। ইনি এই সাংখ্য-দর্শন আসুরি নামক জনৈক শিষ্যকে দান করেন। পরে আসুরির শিষ্য পঞ্চশিখ তা সমগ্র ভারতে প্রচার করেন। একাগ্র চিত্তে তপস্যার জন্য ইনি পাতালে আশ্রম তৈরি করেছিলেন। ধ্যান ধারণার মধ্যে বিশাল সেতুবন্ধন তৈরি করে দিয়েছিল কপিল ।সাগরের সঙ্গে গঙ্গার মিলন ঘটিযে ছিলেন কপিল মুনি তপস্যা করে| গঙ্গার সঙ্গে সাগর রাজের মিলন ঘটান তিনিই| ফলে গঙ্গার জল কোনও সমযে শুকনো হয না| সব সমযে জলে পরিপূর্ণ থাকে| ভারতবর্ষে ্প্রাণ হচ্ছে গঙ্গা নদী| কোটি কোটি ভারতবাসীর ্প্রাণকে রক্ষা করছে গঙ্গা|এর ফলে সারা ভারতবর্ষের মানচিত্র টা অন্যরকম রূপ নিয়েছে তিন ভাগ জল আর এক ভাগ স্থল, প্রাচীন জনপদ সব নদীগর্ভে বা সমুদ্র গর্ভে তলিয়ে গিয়েছে। আজও তার ধ্বংসস্তূপ সুন্দরবন নদীগর্ভে বুক থেকে খনন করলে উঠে আসে।তবে সুন্দরবনকে নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে গবেষকরা বিভিন্ন দেবতার প্রতিষ্ঠানে নিয়ে আজও পর্যন্ত একমত হতে পারিনি। ভবিষ্যতে গবেষণায় প্রমাণ হবে এ কথাগুলো বর্তমানে প্রমাণিত। এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য আমার গবেষণায় উঠে এসেছে।আজ থেকে ২৭০০ কি ২৭৫০ বছর আগে আমাদেরই এই মনোরম বাংলায় জন্ম নেন এক প্রাজ্ঞ ব্যক্তি। মানুষের চিরন্তন জীবন-জিজ্ঞাসার উত্তর খুঁজে পেতে মিথ-মুক্ত র‍্যশনাল এনালাইসিস সম্পন্ন এক নতুন ধরণের জ্ঞান চর্চা শুরু করেন তিনি, এর নাম ‘দর্শন’। গ্রীসের প্রথম দার্শনিক থেলিস-এরও অন্ততপক্ষে এক শত বছর আগে জন্ম জ্ঞানী কপিল-এর। রাজপুত্র সিদ্ধার্থের (বোধি লাভ করে যিনি হয়েছিলেন গৌতম বুদ্ধ) জন্ম কপিল মুনির ১০০ বা ১৫০ বছর পর। দর্শনের প্রবক্তা কপিলের প্রবর্তিত দর্শনের নাম হয় ‘সাংখ্য’ দর্শন। “সাংখ্য” শব্দটির অর্থ “অভিজ্ঞতা-প্রসূত” বা “সংখ্যা-সম্বন্ধীয়”। কপিল প্রাচীন বাংলার অধিবাসী ছিলেন। প্রাচীনকালে যশোরের কপোতাক্ষ নদের পাশে কপিলমুনি গ্রামে এই দার্শনিকের জন্ম হয়েছিল-অনেকেই এরকম অনুমান করেন। কপিলের শেষ জীবন কেটেছিল বর্তমান পশ্চিম বাংলায় । এ প্রসঙ্গে একজন ভারতীয় পন্ডিতের মন্তব্য: …. Sagara an island on the bank of Ganga 90 miles form Calcutta spend later life and meditated. প্রাচীন ভারতে ছটি দার্শনিক মত ছিল। সাংখ্য, যোগ, মীমাংশা, বেদান্ত, ন্যায়, এবং বৈশেষিক। এর মধ্যে কপিল-প্রবর্তিত সাংখ্যই সবচাইতে প্রাচীন দর্শন। সাংখ্য দর্শন অবৈদিক উৎস থেকে উদ্ভূত হয়েছে। ধ্রুপদি সাংখ্য যে বেদ-সহ রক্ষণশীল ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত হয়নি, তাতেও আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। সাংখ্য বেদ সম্পর্কে নীরব। বেদের রক্ষক (ব্রাহ্মণ সমাজ), সমগ্র জাতিভেদ ব্যবস্থা, বৈদিক দেবদেবীদের সম্পর্কে সাংখ্য নীরব। প্রাচীন বৈদিক ধর্মে যে পশুবলি প্রথা প্রচলিত ছিল, তার বিরুদ্ধেও সাংখ্য যৎসামান্য সরব। যে কপিলের মেধা আজও বিশ্বের দার্শনিক পরিমন্ডলে কে বিস্ময়াভূত করে রেখেছে। কপিলের অগ্রসর মনন সম্বন্ধে জার্মান ভারততত্ত্ববিদ অধ্যাপক Richard Garbe লিখেছেন, `In Kapila’s doctrine, for the first time in the history of the world, the complete independence and freedom of the human mind, its full confidence in its own powers were exhibited. একজন দার্শনিক হিসেবে কপিল যথার্থই বিশ্বাস করতেন মানবজীবনে দর্শনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, জীবন দুঃখময়। দুঃখের হাত থেকে পরিত্রাণ পেতে দর্শন চর্চা জরুরি । জার্মান অধ্যাপক Richard Garbe তাঁর Die Sāmkhya-Philosophie বইতে কপিলের সময়কাল খ্রিস্টপূর্ব ৭ম শতক বলে নির্ধারণ করেছেন। (কিন্তু উল্লেখ করতে ভুলে গিয়েছেন যে কপিলের জন্ম প্রাচীন বাংলায়!) পন্ডিতগণ আরও মনে করেন যে ‘তত্ত্বসমাস’ ও ‘সাংখ্য প্রবচন’ এই দুই গ্রন্থ ঋষি কপিল রচিত| যাই হোক। দার্শনিক বলেই একদল লোক ভাবলো যে, কপিল নিরেশ্বরবাদী এবং বেদ বিরোধী। সে জন্য উত্তর ভারতের আর্য ব্রাহ্মণ্যবাদীরা কপিলের ঘোর বিরোধীতা করেছে এবং কপিলের মূল রচনাবলী নষ্ট করে ফেলেছে। তাহলে আমরা কি ভাবে সাংখ্যদর্শন সম্বন্ধে জানতে পারলাম? প্রাচীন ভারতীয় দার্শনিক মহলের একটি বৈশিষ্ট্য হল এই যে-কোনও মত খন্ডন করার আগে সেই মতের পূর্ণ উল্লেখ করা। কাজেই কপিলের মতবাদ খন্ডন করার আগে আর্যপন্ডিতেরা কপিল-এর সাংখ্যদর্শনের পূর্ণাঙ্গরূপে উল্লেখ করেছিলেন। এ ছাড়া খ্রীষ্টীয় ৩০০ শতকে ঈশ্বরকৃষ্ণ নামে একজন পন্ডিত সাংখ্যদর্শনের ওপর ‘সাংখ্যকারিকা’ নামে একটি গ্রন্থ রচনা করেছেন। যাতে কপিলের বহু উক্তি রয়েছে। ওই গ্রন্থটি কপিলের সাংখ্যদর্শনের ওপর একটি মূল্যবান তথ্যের উৎস।) কর্দমা ও দেবধুতির সন্তান প্রাজ্ঞ কপিল বলেছিলেন: জগতে প্রত্যেক প্রাণি দুঃখভোগ করে। তিনি আরও বলছেন যে, ‘প্রকৃতির সহিত সংযোগই পুরুষের দুঃখের কারণ।’ সাংখ্য দর্শনের মুখ্য প্রতিপাদ্য বিষয় হল ‘দুঃখ নিবৃত্তি’ অর্থাৎ মানুষের জীবনে দুঃখের অবসান ঘটাতে হবে|সে দুঃখ অবসান ঘটাতে গিয়ে, তিনি সংখ্যা দর্শন উল্লেখ করেছিলেন এই বিশ্ব তার রূপ আর মহিমা কথা।তিনি আস্তিক না নাস্তিক এসব বিষয়ে বলাটা বড় দায়ী ছিল। তবে কপিলের মতে সমস্ত জগৎ প্রকৃতি (জড় প্রকৃতি) হইতে উদ্ভূত। পরমাত্মা ও প্রকৃতি উভয়ই অনাদি। তিনি সৃষ্টি করেন না, দ্রষ্টা মাত্র। মানবের কর্ম্মফলানুসারে আত্মা দেহান্তর আশ্রয় করে। কর্ম্মক্ষয়ে দেহান্তরে প্রবেশ করে না, পৃথক অবস্থান করে। কপিলের মতে বস্তু মাত্রই সৎ, সৎ হইতে সতের উৎপত্তি। বীজ ভূমিতে উপ্ত হইলে বীজের ধ্বংস হয় বটে কিন্তু ইহার সম্পূর্ণ ধ্বংস হয় না। বীজের অবয়ব বর্ত্তমান থাকে এই ভাবভূত অবয়ব হইতে অঙ্কুর উৎপন্ন হয়। কপিলের মতে দুঃখ ত্রিবিধ—আধ্যাত্মিক, আধিভৌতিক ও অধিদৈবিক। বাতপিত্তাদির বৈষম্যনিবন্ধন শারীরিক এবং ক্রোধাদিজনিত মানসিক দুঃখকে আধ্যাত্মিক দুঃখ বলে। মনুষ্য-পশ্বাদি হইতে জাত দুঃখ আধিভৌতিক এবং যক্ষ, পিশাচাদি হইতে অথবা ভূমিকম্পাদি প্রভৃতি হইতে জাত দুঃখকে অধিদৈবিক দুঃখ বলে। এই ত্রিবিধ দুঃখের আত্যন্তিক নিবৃত্তিই মুক্তি। এই মুক্তিলাভের একমাত্র উপায় জ্ঞান লাভ। সাংখ্য মতে জগৎ ব্যক্ত ও অব্যক্ত এই দুই ভাগে বিভক্ত। ব্যক্ত শব্দে প্রতীয়মান জগৎ এবং অব্যক্ত শব্দে প্রকৃতি বুঝায়। সাংখ্য মতে জগৎ সত্য কিন্তু ক্ষণিক। বেদান্ত মতে জগৎ মিথ্যা। বৈদান্তিক মতে রজ্জুতে সর্প জ্ঞানের ন্যায় ভ্রান্তি মাত্র। ইহার উত্তরে সাংখ্য বলেন,—সর্পের স্থানে যেমন রজ্জু, আছে, তদ্রূপ সংসার স্থানে একটা কিছু থাকা চাই এবং ইহাই প্রকৃতি। (২) অগ্নিপুরাণের ৩৯ অধ্যায়ে শিল্প শাস্ত্রকার এক কপিলের উল্লেখ আছে। (৩) কাশ্মীরপতি হর্ষদেব (১০৮৯—১১০২ খ্রীঃ) লোহর প্রদেশের সামন্ত নরপতি উদয়সিংহের মৃত্যুর পরে তাঁহার অন্যতম সেনাপতি ক্ষেমের পৌত্র কপিলকে লোহার রাজ্যে প্রতিষ্ঠিত করিয়াছিলেন। উচ্চল কাশ্মীর সিংহাসন অধিকার করিবার উদ্যোগী হইলে, কপিল উচ্চলের সৈন্যদলকে বাধা দিতে যাইয়া পরাজিত হন। পরে বিদ্রোহী গর্গের সহিত যুদ্ধে তিনি নিহত হন। এসব কথা আজ ইতিহাস, তানার কর্মই আজও চেয়ে শ্রেষ্ঠ তা প্রমাণিত চিরন্তন সত্য।আটটি সত্যটাকে আমরা অস্বীকার করি বারাবার, নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য।মানুষের সঠিক কর্ম তার ঈশ্বর প্রাপ্তির যোগ শুরু হয়ে যায় তার অজান্তে। তেমনি ইতিহাস
সাগর দ্বীপের কপিল মুনির আশ্রম বা মন্দির কত কালের? কেউ বলেন ভগীরথের গঙ্গার আনয়নের পূর্বে সাগরতীর্থ বা মন্দির বর্তমান ছিল, কেউ বলেন তা নয়। এসব কত কালের ঘটনা তার একটা হিসেব করতে পারা যায়।যোগেশচন্দ্র রায় তাঁর ‘পূজাপার্বণ’ গ্রন্থে এ প্রসঙ্গে বলেছেন, কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে সূর্যবংশীয় রাজা বৃহদবল নিহত হয়েছিলেন। ভগীরথ তাঁর পূর্বপুরুষ। উভয়ের মধ্যে ৫২ পুরুষের ব্যবধান। ৫৩ পুরুষে ১৩০০ বছর। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ খ্রিষ্টপূর্ব ১৪৪১ অব্দে। অতএব ভগীরথ খ্রিষ্টপূর্ব ২৭৪১ অব্দে ছিলেন। এই সময়ে কপিল মুনির আশ্রম ছিল। সেই সময়ে তৎকালীন রাজা মাধব বিশাল বিষ্ণু মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু কোথায় ছিল এই মন্দির তাঁর হদিশ আজ জানা যায় না।হিউল ও বার্নেলের ‘হবসন রবসন’-এ দেখা যায়— হেজেস নামে এক নাবিক ১৬৮৩ সালে প্যাগোডা বা মন্দির দেখেছিলেন। অর্থাৎ, তখনও মাধব মন্দির ছিল। পণ্ডিত জগন্নাথ পঞ্চাননের পিতৃব্য ভবদেব ন্যায়ালঙ্কার সংস্কৃতে ‘তীর্থসার’ নামে একটি পুঁথি লেখেন। পুঁথিটি লেখা হয় ১৭২৯-৩০ খ্রিষ্টাব্দে। গঙ্গাসাগর তীর্থের পরিচয় দিতে গিয়ে তিনি শ্বেত দ্বীপের রাজা মাধব ও তাঁর প্রতিষ্ঠিত মাধব মূর্তির কথা বলেছেন। বলেছেন কপিল মুনির বিগ্রহের কথাও। ষোড়শ শতকের প্রাচীন পুঁথির তীর্থতত্ত্বপ্রদায়িনীতে কপিল মুনির মন্দিরের উল্লেখ রয়েছে। সেই মন্দির আজ অবস্থিত
৫৮০ বর্গ কিমি জুড়ে সাগরদ্বীপ অঞ্চল। সাগরদ্বীপ কলকাতা থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। যদিও স্থানটি কলকাতার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত নয়। প্রথমে বাসে করে কাকদ্বীপে পৌঁছে, লঞ্চে মুড়িগঙ্গা পেরিয়ে কচুবেড়িয়ায় পৌঁছতে হবে। সেখান থেকে বাসে ৩০ কিলোমিটার গেলে পৌঁছনো যাবে সাগরদ্বীপের গঙ্গাসাগর মেলা প্রাঙ্গণে । এ ছাড়া নামখানা দিয়েও যাওয়া যায় গঙ্গাসাগর কপিল মুনির আশ্রম। গঙ্গাসাগর মেলা দ্বিতীয় বৃহত্তম হিন্দু মেলা (কুম্ভমেলার পরে)। সাগর দ্বীপের দক্ষিণে হুগলি নদী বঙ্গোপসাগরে পতিত হচ্ছে। এই স্থানটি হিন্দুদের কাছে পবিত্র তীর্থ। তাই প্রতিবছর মকর সংক্রান্তির দিন এখানে বহু লোক তীর্থস্নান করতে আসেন; তবে বিহার-উত্তরপ্রদেশ থেকে আগত অবাঙালি পুণ্যার্থীদের ভিড়ই হয় সর্বাধিক।তবে
অন্য এক ইতিহাস বলছে— ৪৩০ খ্রিষ্টাব্দে রানি সত্যভামা প্রথম কপিল মুনির মন্দির তৈরি করেন। সেই মন্দির নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার পরে ১৫০০ খ্রিষ্টাব্দে আবার এখানে মন্দির তৈরি হয়। এর পরে প্রায় ছ’বার ছ’টি মন্দির বিলীন হয়ে যায় সমূদ্র গর্ভে। বর্তমান মন্দিরটি আদি মন্দির স্থল থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ১৩৮০-৮১ (ইং ১৯৭৩-৭৪) বঙ্গাব্দে প্রায় লক্ষাধিক টাকা ব্যয়ে এটি তৈরি করেন অযোধ্যার হনুমান গড়ি মঠের মোহান্ত রামদাসজি মহারাজ। কথিত মেদিনীপুরের এক রাজা যদুরাম কিছু পশ্চিমি ব্রাহ্মণকে সাগরদ্বীপে এনে দেখা শোনার ভার দিয়েছিলেন। যেহেতু রাজা সগর, ভগীরথ এঁরা সূর্যবংশের রাজা ছিলেন। তাই সূর্যবংশের পরবর্তী প্রজন্ম অযোধ্যা হনুমানগড়ির মোহান্ত সীতারাম দাসকেই রাজা যদুরাম পুরোহিত নিযুক্ত করেন। সেই থেকে মন্দিরের মালিক তাঁরাই।কপিলমুনি আসলেকে ছিল তার ইতিহাস অনেকের কাছে অজানা।কপিল মুনি ছিলেন একজন বৈদিক ঋষি| তাঁকে সাংখ্য দর্শনের অন্যতম ্প্রবর্তক বলা হযে থাকে| ভাবত পুরাণে তাঁর সাংখ্য দর্শনের আস্তিক্যবাদ ধারাটির উল্লেখ পাওযা যায| হিন্দুদের ্প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে তিনি ব্রহ্মার পৌত্র মনুর বংশধর| ভগবদ গীতায কপিল মুনিকে সিদ্ধযোগী বলে উল্লেখ করা হযেে| ভাগবত পুরাণে তৃতীয স্কন্দে কপিলের জীবনের বর্ণনা পাওযা যায| এখানে তাঁকে কর্দম মুনি ও দেবাহুতির পুত্র বলা হযেে| তিনি সতী অনুসূযার ভ্রাতা এবং গুরু| স্বর্গের নদী গঙ্গার মর্ত্যে কাহিনীতে কপিল একজন ্প্রধান চরিত্র|  রামের পূর্ব পুরুষ সগর ৯৯ বার অশ্বমেধ যজ্ঞ করেছিলেন| শততম যজ্ঞের সময দেবরাজ ইন্দ্র ইর্ষান্বিত হযে যজ্ঞের ঘোড়াটি অপহরণ করে কপিলের আশ্রমে রেখে গেলেন| সগরের ষাট হাজার পুত্র ঘোড়াটিকে খুঁজতে  বের হলেন| তাঁরা কপিলকে চোর অপবাদ দিলে কপিল তাঁদেরকে ভস্ম করে দিলেন| সগরের পৌত্র অংশুমান কপিলের  কাছে এসে ্প্রাণ ফিরিযে দেওযার অনুরোধ করলেন| কপিল বললেন, স্বর্গের নদী গঙ্গা নেমে এসে তাঁদের স্পর্শ করলে তবেই তাঁরা ্প্রাণ ফিরে পাবেন| পরে সগরের বংশধর ভগীরথ তপস্যা করে গঙ্গাকে মর্ত্যে নিযে এসেছিলেন| সেই কপিল মুনির মন্দিরকে ঘিরে গঙ্গা সাগরে ্প্রতি বছর গঙ্গা সাগর স্নান সহ পুজোরতি করা হযে থাকে|অন্যদিকে কপিলমুনির আশ্রম নিয়ে নানা মত বিরোধ আছে গবেষকদের।তবে কিছু গবেষকদের মতে এখানে সাংখ্যদর্শনের আদি-প্রবক্তা কপিলমুনির আশ্রম ছিল। একদা কপিলমুনির ক্রোধাগ্নিতে সগর রাজার ষাট হাজার পুত্র ভস্মীভূত হন এবং তাঁদের আত্মা নরকে নিক্ষিপ্ত হয়। সগরের পৌত্র ভগীরথ স্বর্গ থেকে গঙ্গাকে নিয়ে এসে সগরপুত্রদের ভস্মাবশেষ ধুয়ে ফেলেন এবং তাঁদের আত্মাকে মুক্ত করে দেন । মহাভারতের বনপর্বে তীর্থযাত্রা অংশে গঙ্গাসাগর তীর্থের কথা বলা হয়েছে। পালবংশের রাজা দেবপালের একটি লিপিতে তাঁর গঙ্গাসাগর-সঙ্গমে ধর্মানুষ্ঠান করার কথা বলা হয়েছে। লোক-কাহিনী অনুযায়ী এখানে কপিল মুনির একটি আশ্রম ছিল। একসময় সেটি সমুদ্রগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। পরবর্তীকালে গড়ে ওঠা নতুন আশ্রমটিকে কেন্দ্র করে তাঁর ভক্তদের সমাগম বাড়তে থাকে। প্রত্যেক বছর জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি মকরসংক্রান্তি বা পৌষ-সংক্রান্তির পূণ্যতীথিতে লাখো লাখো লোকের সমাগম ঘটে এই সঙ্গমে। পুণ্যার্থীরা গঙ্গা ও বঙ্গোপসাগরের সঙ্গম স্থলে স্নান করে পুণ্যার্জন করতে এখানে আসেন তারপর তাঁরা কপিল মুনির আশ্রমে পুজো দেন। এই বৃহৎ মেলার কথা রামায়ণ, মহাভারত থেকে বঙ্কিমচন্দ্রের কপালকুণ্ডলা উপন্যাস কিংবা রবীন্দ্রনাথের কবিতা, সর্বত্রই স্থান করে নিয়েছে এই গঙ্গাসাগর তীর্থের কথা । এছাড়া বহু হিন্দু পুরাণেও গঙ্গাসাগর তীর্থের উল্লেখ আছে। এই সমাগমকে ঘিরে গড়ে উঠেছে বিরাট মেলা যার নাম গঙ্গাসাগর-মেলা ।

Related Articles

Back to top button