রাজ্য

ব্যক্তির অন্তর্নিহিত শক্তির উদ্বোধন ঘটাতে সুন্দরবনে গৌতম হালদার।

সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়:এ যুগে কেউ কারো নয়, কার ক্ষতি হলো বা না হলো কারবা কিসের যায় আসে। নিজের স্বার্থের জন্য সব কিছু করতে রাজি আছি, মানুষ সেবাতে নয়। রাজনীতির জালে বিপদে ফেলে মানুষের কাছে থেকে মুনাফা লুটছে একশ্রেণীর নেতারা।কারোর জমি নেতাদের একাংশ দেখিয়ে বিক্রি করে দিচ্ছে অন্য লোকের কাছে। জমির মালিক কে মেরে ধরে রাজনীতির ক্ষমতা দেখিয়ে মুখ বন্ধ করে দিচ্ছে প্রয়োজনে খুন করছে। এসব চলে এই রাজ্যের রাজনীতিতে।চেনা অচেনার মানুষের মাঝে এমনও মহান মানুষ আছে, সবকিছুর ঊর্ধ্বে গিয়ে মানুষ সেবায় নিয়োজিত হয়েছেন। ঘুম থেকে উঠেই সারা দিনের মত মানুষ সেবায় নিয়োজিত হয়ে যান ।ওয়ার্ড নং ০০৪, কলকাতা পৌর সংস্থা শ্রী গৌতম হালদার, পৌর সমন্বয়কারী।আলোয় ফেরার সংস্থার সম্পাদক। সোজা কথা সোজা ভাবে বলা ভালো, বর্তমান যুগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতা-নেত্রীরা ,দিদির সাথে ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করে বড় বড় গালগপ্প দেয়। আর অন্যদিকে মানুষের সঙ্গে রাতদিন পড়ে রয়েছে গৌতম হালদার।মানুষের সঙ্গে জনসংযোগ বজায় রেখেছে সমস্যার কথা তার কানে পৌঁছালে সমাধান করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন গৌতম।মানুষের বাড়িতে গিয়ে গিয়ে কার কি সমস্যা খোঁজ নেয় প্রতিদিন, এভাবে শুরু করে সকাল থেকে রাত বারোটা পর্যন্ত। মানুষের সুবিধা অসুবিধার জন্য,দিনকে রাত করে, রাতকে দিন করে । এমনি মানুষের মন কেঁদে ওঠে সুন্দরবন বাসীর জন্য, আমফান ঘূর্ণিঝড়ে তছনছ করে দিয়ে গেছে সুন্দরবনের সর্বত্র এলাকায়। সুদূর বেলগাছিয়া থেকে আলোয় ফেরার সংস্থার কর্ণধার গৌতম হালদার ছুটে আসেন সুন্দরবনের মানুষের জন্য।সামাজিক দায়বদ্ধতার অঙ্গীকারে
আলোয় ফেরার উদ‍্যোগে ঘুর্নীঝড় আমফান – পরবর্তী দূর্গত ও বিপর্যস্তের প্রতি সহায়তার প্রয়াস।গৌতম হালদারের কথা লিখতে বসে স্বামী বিবেকানন্দর স্মরণীয় নামটা মনে পড়ে যায়।সেই সময় একজন মানুষ সেবায় নিয়োজিত অন্যজন কবির কথা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। সে প্রসঙ্গে আমার কলমে তুলে ধরছি।ভুবনের আর এক মহামানব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিবেকানন্দ সম্পর্কে বলেছেন :তার বাণী মানুষকে যখনই সম্মান দিয়েছে তখনই শক্তি দিয়েছে। সেই শক্তির পথ কেবল একঝোঁকা নয়। তা কোনো দৈহিত প্রক্রিয়ার পুনরাবৃত্তির মধ্যে পর্যবসিত নয়, তা মানুষের প্রাণমনকে বিচিত্রভাবে প্রাণপণ করেছে।’
যখন পরাধীন ভারতবাসী আত্মশক্তি হারিয়ে ফেলেছিল, তখন তিনি চেয়েছেন মানুষের আত্মশক্তির বিকাশ। ব্যক্তির অন্তর্নিহিত শক্তির উদ্বোধন ঘটাতে চেয়েছিলেন তিনি। তিনি মনে করতেন মানুষ তার পরিপূর্ণ শক্তির সদ্ব্যবহার করলে সে পূর্ণত্বের দিকে যাবে। প্রতিটি ব্যক্তির ভেতরেই রয়েছে অফুরন্ত শক্তি। সেই শক্তির উদ্বোধন চেয়েছেন তিনি। বলেছেন :
‘তোমরা ঈশ্বরের সন্তান, অমৃতের অধিকারী, পবিত্র ও পূর্ণ। তুমি নিজেকে দুর্বল বলো কী করে? ওঠো, সাহসী হও, বীর্যবান হও।… জেনে রাখ, তুমি তোমার অদৃষ্টের সৃষ্টিকর্তা। তুমি যে শক্তি বা সাহায্য চাও [বিধাতা থেকে] তা তোমার ভিতরেই রয়েছে।’
সম্পূর্ণ নতুন কোনো কথা যে বিবেকানন্দ বলেছেন তা নয়। কিন্তু তার বলার ধরন অন্য যে কারও চেয়ে আকর্ষণীয়। অতীতের মহামানবদের কথাই তিনি নতুন করে বলেছেন, ‘সমস্ত জগতের মানুষ একই ঈশ্বরের সন্তান।’এই কথাগুলো স্মরণ এর মধ্যে রেখেছেন গৌতম হালদার তাই নিজে মানুষ সেবায় ঝাঁপিয়ে পড়েছেন । নিজের জীবনকে পরোয়া না করে মাঠে নেমে তিনি অসহায় মানুষের কথা ভাবেন।নিজের উপার্জনের টাকায় অসহায় গরীব মানুষকে সাহায্য হাত বাড়িয়ে দেন তিনি হচ্ছেন গৌতম হালদার।সেই কারণে গৌতম হালদারের কথার মধ্যে বিবেকানন্দ প্রসঙ্গ টেনে তুলে ধরাই এই লেখাটিই পূর্ণরূপ পাবে।নিস্তেজ ও তমসাচ্ছন্ন একটি জাতির মধ্যে জাগরণ আনতে তিনি অতীতকে অতি বেশি মহিমান্বিত করেছেন। অবশ্য তার সমসাময়িক আরও অনেক কবি-সাহিত্যিক তা করেছেন। বহু জাতি ধর্মের মানুষ অধ্যুষিত ভারতবর্ষে তার ফল তিনি যেমনটি চেয়েছিলেন তেমনটি হয়নি। তিনি ছিলেন উদার, অসাম্প্রদায়িক ও প্রকৃষ্টচিত্ত। কোনো ধর্মীয় সম্প্রদায়ের প্রতিই তার কোনো বিদ্বেষ ছিল না। তা থাকলে তিনি বলতেন না উপমহাদেশে একদিন এক শ্রেণিহীন সাম্যবাদী সমাজ গড়ে উঠবে, যে সমাজের দেহ হবে ইসলামিক আর মস্তিষ্ক হবে বৈদান্তিক। তিনি হিন্দু ও মুসলমানের সম্প্রীতি ও মিলন প্রত্যাশা করেছেন। অতি স্পষ্টভাষায় তিনি বলেছেন :’আমি দিব্যচোখে দেখতে পাচ্ছি যে, বৈদান্তিক মস্তিষ্ক এবং ইসলামিক দেহ নিয়ে ভবিষ্যৎ ভারত গৌরবমণ্ডিত হয়ে উঠবে। আমার মাতৃভূমির পক্ষে হিন্দু ও ইসলাম ধর্মরূপ এই দুই মহান মতের সমন্বয়ই একমাত্র আশা।’ধর্মীয় ও সামাজিক প্রথার শিকার হয়ে সমাজের নিচে যারা পড়ে রয়েছে, যারা শোষিত-বঞ্চিত, একদিন তাদেরও উত্থান ঘটবে। বর্ণ হিন্দুদের চিরকাল আধিপত্য অক্ষুণ্ন থাকবে না, শূদ্র ও অচ্ছুতও ক্ষমতার অধিকারী হবে। তার ভাষায়, ‘জগতে এখন বৈশ্যাধিকারের (বণিকদের)। তৃতীয় যুগ চলিতেছে। চতুর্থ যুগে শূদ্রাধিকার (শ্রমজীবী ও সর্বহারা) প্রতিষ্ঠিত হবে।’স্বামী বিবেকানন্দর কথা আজ বিশ্ব জগতের যেমন প্রতিষ্ঠিত, সেই সর্বহারা অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে উদ্যোগী হয়েছেন উত্তর কলকাতার গৌতম হালদার।

Related Articles

Back to top button