জাতীয়

সরকার কি অভুক্ত , স্বহায়সম্বলহীন মানুষের জীবন নিয়ে খেলছেন? তাহলে তাদের বিচার হবে কোন আদালতে? প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা

ঝুমা দেবনাথ ; করোনার থাবায় ধীরে ধীরে বাংলায় বাড়ছে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা। লকডাউন করেও আটকানো যাচ্ছে না এই করোনা আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা, লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে তা। এই পরিস্থিতিতে রোজগার হারিয়ে বেকার অনেকেই। এই বেকারের তালিকা থেকে বাদ যান নি ভিন্ন রাজ‍্যে রোজগারের আশায় যাওয়া শ্রমিকরা তথা পরিযায়ী শ্রমিকরা। কাজের অভাবে পেটের দায়ে এই পরিযায়ী শ্রমিকরা কখনো প্রধানমন্ত্রী আবার কখনো রাজ‍্যের মুখ‍্যমন্ত্রীর কাছেও বারবার অনুনয়-বিনয় করছিলেন যাতে তারা তাদের পরিবারের কাছে পৌঁছতে পারেন। অবশেষে ‘শ্রমিক স্পেশাল’ ট্রেন এবং বাসের মাধ্যমে তাদের বাড়ি ফিরে দেওয়ার ব‍্যবস্থা করা হল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জানান, পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য এই ট্রেনে পর্যাপ্ত খাবার, জলের ব‍্যাবস্থা থাকবে।প্রধানমন্ত্রীর এই ভরসা শুনতে ভালোই লেগেছিল প্রথমদিকে, কিন্তু পরবর্তীতে তা দিনের আলোর মতো পরিস্কার হয়ে যায় যে, এটা আষাঢ়ে গল্পের মতো নিছকই একটা প্রতিশ্রুতি মাত্র, যার প্রমাণ হিসাবে পরিযায়ীরা তাদের জীবনের শেষ নিংশ্বাস দিয়ে বুঝিযে দিচ্ছেন, এমনই মন্তব্য করেছেন বিরোধীরা।
কিন্তু অভুক্ত, স্বহায়সম্বলহীন পরিযায়ীরা এইসমস্ত রাজনীতি না বুঝেই, প্রধানমন্ত্রীর এই আশ্বাস বাণীকে ভরসা করেই গত শনিবার এক মহিলা‌ পরিযায়ী শ্রমিক গুজরাটের আমেদাবাদ থেকে বিহারের পাটনা যাওয়ার উদ্দেশ্যে ট্রেনে উঠেছিলেন তার দেড় বছরের এক বাচ্ছাকে নিয়ে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর কথা মতো ট্রেনে মিলল না কোথায় জল বা দু-মুঠো অন্ন। খিদের জ্বালায়, জলের তেষ্ঠায় প্রচন্ড গরমে ক্রমশ অসুস্থ হয়ে যান, সেই দেড় বছরের বাচ্ছা কোলে থাকা মহিলা টি। গত সোমবার বিহারের মুজফ্ফরপুর স্টেশনে ঢোকার কিছুক্ষনের মধ্যেই জ্ঞান হারান তিনি এবং এই প্ল‍্যাটফর্মেই মৃত্যু হয় এই ২৩ বছরের মহিলাটি পরিযায়ী শ্রমিকটির। কিন্তু কোলে থাকা দেড় বছরের বাচ্ছাটি তো আর জানে না যে তার মা চলে গেছে চিরঘুমের দেশে। সেই বাচ্ছাটি তাই টলমল পায়ে মায়ের গায়ে থাকা চাদর টেনে মাকে ডাকার চেষ্টা করে যায় বারংবার।
এই মর্মান্তিক ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হতেই আলোড়ন পড়ে যায় সোশ্যাল মিডিয়ায় । এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিজেপির রাজ‍্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ঘটনাটি দুঃখজনক হলেও এটি একটি ছোট ঘটনা। টলমল পায়ে সারা প্ল‍্যাটফর্ম ঘুরে বেড়ানো শিশুটি জানেই না যে তার মা আজ আর এই পৃথিবীতে নেই, তার মা কে তাকে খিদে পেলে খাইয়ে দেবে না, আদর করবে না , এইরকম এক বেদনাদায়ক ঘটনাকে কি করে দিলীপ ঘোষ বললেন ‘ছোট ঘটনা’, এই নিয়ে সমালোচনার সুর চরিয়েছেন বিরোধীরা। আবার তৃণমূলের সাংসদ অধ্যাপক সৌগত রায় জানান, এটি অত্যন্ত হৃদয়বিদারক ঘটনা। গত মে মাস জুড়ে যে পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘিরে ঘটনাগুলো ঘটল এই ঘটনাটি তারই এক দৃষ্ঠান্তস্বরূপ। তিনি দিলীপ ঘোষের কথার সমালোচনা করে বলেন যে , তিনি দিলীপ ঘোষের কাছ থেকে এর থেকে বেশি কিছু আশা করেন না।আবার সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিম বলেন, দিলীপ ঘোষের মতো নেতারাই এই অবস্থার জন্য দায়ী। তিনি আরও জানান, দিলীপ ঘোষের মতো মানুষেরা ভাবছেন তাঁরা স্বর্গরাজ‍্য তৈরি করে দিয়েছেন। কিন্তু অসহায় , নিরন্ন মানুষেরাও যে মানুষ, তাদের জন্যও কাজ করতে হবে এটা তাঁরা ভুলে গেছেন। আবার ট্রেনের টিকিট পাওয়ার জন্য কোন কোন পরিযায়ী দালালের সাহায্য নিচ্ছেন। এই সুযোগে দালালও অসহায় মানুষগুলোর থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন ৫০০ টাকা আবার কখনো ৬০০ টাকা। কোথাও আবার পরিযায়ীদের বাড়ি ফেরার তাড়ায় শিকেয় উঠেছে সামাজিক দূরত্ব। ফলে ভয় বাড়ছে করোনা আতঙ্কের। আবার কখনো পরিযায়ীদের মৃত্যু সংবাদও শোনা যাচ্ছে। পরিযায়ী শ্রমিকদের এহেন অবস্থার দায় নেবেন কে? এই প্রক্ষিতে কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গাঁধী বলেন, গরিব মানুষের দরকার টাকা। তাই গরির পরিবারের ব‍্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে এককালীন টাকা দেওয়া হোক বলে দাবি জানান তিনি। এই পরিযায়ী শ্রমিক সংক্রান্ত মামলায় গত বৃহস্পতিবার সুপ্রিমকোর্ট অন্তর্বতী নির্দেশ দিয়েছে। এই নির্দেশে বলা হয়েছে, ট্রেন-বাসের টিকিটের ভাড়া পরিযায়ী শ্রমিকদের থেকে নেওয়া যাবে না, ভাড়া বহন করবে সংশ্লিষ্ট রাজ‍্য সরকার। নির্দেশে আরও বলা হয়েছে, পরিযায়ীদের থাকা- খাওয়ার ব‍্যাবস্থা করতে হবে এবং বাস বা ট্রেন কখন কোথায় ছাড়া হবে এবং কোথায় যাবে সেই বিষয়েও প্রচার বাড়াতে হবে। রেল কতৃপক্ষকে সুপ্রিমকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন, রাজ‍্য ঘখনই ট্রেন চাইবে, তখনই ট্রেন দিতে হবে এবং সেই সঙ্গে ট্রেনে শ্রমিকদের খাবার ও জলের ব‍্যাবস্থা করতে হবে রেলকে। ৫ই জুন পরবর্তী শুনানি হবে, তার মধ্যে কেন্দ্র ও রাজ‍্যকে কোথায় কতজন পরিযায়ী শ্রমিক আছে এবং তাদের নিয়ে কি পরিকল্পনা করেছেন তা লিখিতভাবে জানতে হবে বলে জানিয়েছে আদালত। আদালতের বিচারপতিরা দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, পরিযায়ী শ্রমিক নিয়ে অনেক সময় নষ্ঠ হয়েছে। অনেক কষ্ঠ ভোগ করেছেন তারা, নাম নথিভুক্ত করেও বাড়ি ফেরা নিয়ে কোনো কাজ হয় নি, সবকিছুতেই চরম অব‍্যাবস্থা চলছে। কিন্তু আদালতের এই নির্দেশে কি সত্যিই কি কিছু পরিবর্তন হবে? মুজফ্ফরপুরে মা কে হারানো দেড় বছরের শিশুটি আর ফিরে পাবে তার মা কে? তাহলে এইসমস্ত স্বহায়সম্বলহীন মানুষেরা সুবিচার পাবেন কোন আদালত? এইরকম নানা বেদনাদায়ক প্রশ্নে মুখর হয়েছে বিরোধীমহল।…

Related Articles

Back to top button