মতামত

স্বাস্থ্য ব‍্যবস্থা পরিষেবার ভূত- ভবিষ্যৎ কি? এর পর পরিশেবা দেবে কারা! মানুষের জীবন কি সংশয়ের মুখে?


ঝুম্পা দেবনাথ: লকডাউনের জন্য সকলেই গৃহবন্দি হয়ে করোনা থেকে সুরক্ষিত থাকার চেষ্টা ক‍রছেন। কিন্তু করোনা থেকে অসুস্থ ব‍্যক্তিদের জীবন রক্ষা করতে জীবনপণ লড়াই করে চলেছেন যেসমস্ত চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ‍্যকর্মীরা, এবার সেই করোনার থাবায় স্বয়ং তাঁরাই। প্রতিদিন কোনো না কোনো চিকিৎসক বা নার্স বা স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। এর ফলে কোথাও না কোথাও বন্ধ রাখতে হচ্ছে পরিষেবা। এর ফলে কি বেহাল হয়ে পড়বে স্বাস্থ‍্য পরিষেবা?পরিসংখ্যানের দিকে চোখ রাখলে চিত্রটা স্পষ্ট উপলব্ধি করা যেতে পারে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত ৩০ শে মার্চ হাওড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে এক করোনা আক্রান্ত মহিলার মৃত্যু হয়। অন‍্যদিকে হাওড়ারই আই এল এস হাসপাতালে এক ব‍্যক্তির করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ আসে। যার ফলে চিকিৎসক, স্বাস্থ্য কর্মী ও নার্স মিলিয়ে ৩৬ জনকে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়। ৫ এপ্রিল এন আর এস -র নার্স ও চিকিৎসক মিলিয়ে ৩২ জনকে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়, ফলে ৪৮ ঘন্টার জন্য বন্ধ রাখা হয় মেডিসিন বিভাগ। ৭ এপ্রিল এন আর এস-র কোয়ারেন্টাইনের সংখ্যা দাঁড়ায় ৭৯। ১১ এপ্রিল আরজি করের দুই রোগীর করোনা ধরা পড়ে। তাই মেডিসিন বিভাগ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ৯ এপ্রিল হাওড়া হাসপাতালের সুপারের রিপোর্ট পজিটিভ আসে এবং স্থগিত রাখা হয়েছিল পরিষেবা।১২ এপ্রিল ৮১ বছরের বৃদ্ধের কোভিড পজিটিভ আসে তাই বন্ধ হয়ে যায় চার্নক হাসপাতাল। ১৬ এপ্রিল ন‍্যাশানাল মেডিকেল কলেজের ১ জনের করোনা ধরা পড়ে। ফলে ১৭ জন স্বাস্থ্যকর্মী ও ২৮ জন নার্সকে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়। ১৮ এপ্রিল সেন্ট্রাল মেডিকেলের এক অফিসার করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় এবং আক্রান্ত ছিলেন আরও ৩ জন নার্স। ২০ এপ্রিল মেডিকেল কলেজের ৪ জন পিজিটির করোনায় আক্রান্তের খবর মেলে। আবার ঐ একই দিনে আরজি কর হাসপাতালের কার্ডিও বিভাগের এক জন পিজিটি, এক জন স্বাস্থ্য কর্মী ও এক জন নার্স করোনায় আক্রান্ত হন। ২১ এপ্রিল মেডিকেল কলেজে আবার আক্রান্ত হন ৫ জন। ২৩ এপ্রিল আবার সেই মেডিকেল কলেজে আক্রান্ত হন ৪ জন স্বাস্থ্য কর্মী ও এক জন চিকিৎসক।২৫ এপ্রিল বেহালার এক নাসিংহোমের চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হন। ফলে বন্ধ করতে হয় সেই নাসিংহোম। এই দিনই বেলেঘাটা আইডি-তে আক্রান্ত হন একজন জুনিয়র চিকিৎসক। আবার সেই ২৫ এপ্রিল হাওড়ার নারায়না হাসপাতালে আক্রান্ত হন ৫ জন স্বাস্থ্যকর্মী। ফলে বন্ধ করে দিতে হয় সেই হাসপাতাল।এই পরিসংখ্যান থেকে উঠে আসে অনেক প্রশ্ন। আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার সাথে কি কোনো পর্যাপ্ত সুরক্ষা নেওয়া হয়েছিল? এর ফলে চিকিৎসা ব‍্যবস্থা পুরোপুরি বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে না তো? ব‍্যাক আপ প্ল‍্যান বা প্ল‍্যান বি কি তৈরি করা হয়েছে? স্বাস্থ‍্যভবন কি এই নিয়ে কোনো ব্লু প্রিন্ট তৈরি করেছিল?
স্বাস্থ্যব‍্যবস্থার বেহাল অবস্থা নিয়ে আমরা বিজেপি রাজ‍্যসভাপতি দিলীপ ঘোষের সাথে কথা বলি। উনি জানিয়েছেন, করোনা নিয়ে সঠিক তথ্য জানানো হচ্ছে না সাধারণ মানুষকে। ব‍্যাপক টেস্টের যেকথা বলা হয়েছিল তা হচ্ছে না। কোয়ারেন্টাইনে একসাথে অনেকজন মানুষকে রাখা হচ্ছে, এর ফলে সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে । আমরা চিকিৎসা প‍রিষেবার সাথে যুক্ত একজন ডাক্তার আধিকারিকের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি যে, সার্জারি করছেন যেসমস্ত ডাক্তাররা তাঁরা নিজেরাই হিমশিম খাচ্ছেন। ডাক্তারদের অপারেশনের নিয়মাবলী অনুযায়ী রোগীকে অপারেশনের রিপোর্ট না আসার আগে অন্য ওয়ার্ডে রাখা উচিত। কিন্তু ডাক্তাররা জানতে পারেন না রিপোর্ট পজিটিভ আসবে কি না। তিনি আরও জানান চিকিৎসা ব‍্যবস্থার পরিকাঠামো খুবই দুর্বল। তাঁরা নিজেরাও বুঝতে পারছেন না এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে তাঁরা ঠিক কোথায় দাঁড়িয়ে আছেন।আবার আমরা পশ্চিমবঙ্গ রাজ‍্যের সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের সঙ্গে কথা বলি। উনি জানান, চিন থেকে আগত এই করোনা ভাইরাস থেকে নিজ নিজ রাজ‍্যকে সুরক্ষিত করতে প্রত‍্যেকটি রাজ‍্যই যথেষ্ট সুযোগ পেয়েছিল। কিন্তু কেরালা ছাড়া কোনো রাজ‍্যই সঠিক কর্মসূচি গ্ৰহণ করেনি। ৩৫ দিন লকডাউন করা হল।কিন্তু না ক‍রা হল টেস্ট না নেওয়া হল কর্মসূচি, যার জন্যই এই ভয়াবহ অবস্থা। টেস্ট বাড়াতে হবে। লকডাউন সফল করতে হবে। করোনা যদি ধীরে ধীরে চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের আক্রান্ত করতে থাকে, তাহলে চিকিৎসা ব‍্যবস্থার হাল ধরবেন কারা? এই প্রশ্ন তাঁর রাজ‍্যের শাসক গোষ্ঠীর কাছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button