মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সমীপেষু
দূরদৃষ্টি পাতাটি পাঠকদের নিজস্ব মতামত লেখার জন্য, পাঠকদের মতামত তাদের একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়। এই মতামতের জন্য নিউজ পোর্টাল কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়।
মহাশয়,
আমি শুভাশিস ঘোষ,একজন ক্ষুদ্র পত্রিকার মালিক তথা সাংবাদিক।
গত ২/৪/২০ তারিখে জাতির উদ্দেশে আপনার ভাষণ শুনলাম।ঐদিন আপনি করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের বিরুদ্ধে দেশবাসীকে লড়াইতে একসাথে আগামী ৫ তারিখ রাত নটায় বাড়ির সব আলো নিভিয়ে শুধু মোমবাতি ,প্রদীপ, টর্চের আলো, মোবাইলের আলো ইত্যাদি প্রজ্জ্বলন করতে বলেছেন। একজন দেশনেতা হিসাবে এটা আপনার দেশবাসীর উদ্দেশ্যে পরামর্শ না আদেশ সেটা অবশ্য আপনিই ভাল বলতে পারবেন।যদিও আপনার এই নির্দেশ কে শিরোধার্য ধরে নিয়ে দেশের একশো সাইত্রিশ কোটি মানুষ এখন প্রদীপ মোমবাতি হ্যারিকেন ইত্যাদি যোগারে মেতে আছেন।যা অবশ্যই আপনাকে খানিকটা স্বস্তি দেবে।প্রিয় প্রধাণমন্ত্রীজী আপনি একজন এমন একটি দেশের প্রশাসনিক প্রধান যার পায়ের নীচে থাকে আসমুদ্র হিমাচল।সোয়াশো কোটি মানুষের আপনি অন্নদাতা এবং অভয়দাতা।করোনা থেকে কাশ্মীর, পাকিস্তান থেকে এদেশের এক কোটি গৃহহীনদের বাসস্হান সবটাই নির্ভর করে আপনার সুচিন্তিত প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের উপর।তাই এই দেশের একজন সর্বময় কর্তা হিসাবে আপনার প্রতিটি পদক্ষেপ যে অত্যন্ত নিগুঢ়,এক সৃজনশীল ভাবনার ফসল হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।যাকেই প্রতি মুহূর্তে দেশবাসী বিনা বাক্যব্যয়ে আদেশ হিসাবে পালন করে থাকে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি, এবারের মোমবাতি হ্যারিকেন জ্বালিয়ে দেশবাসীর করোনা বিরোধী লড়াইতে অংশ নেওয়ার চ্যালেঞ্জ টা কোথাও জেনো বড্ড বেশি হাস্যস্বপদে পরিণত হয়ে গেলো। ধরা পড়ে গেছে আপনার চালাকি।মাফ করবেন স্যার,একজন সাধারণ দেশবাসী হয়ে এটা ছোটমুখে বড় কথার মত শোনালেও আমি নাচার এক কলমচারী।বলতে দ্বিধা নেই বিশ্বজুরে করোনা ভাইরাসের কোপে গোটা পৃথিবীর মানুষ যখন দিশাহারা, মানুষের মৃত্যু মিছিলে পৃথিবীর আকাশ বাতাসে আজ শুধু স্বজন হারানো মানুষদের ক্রন্দন রোল যখন এই চরম সময় দেশবাসী আপনার দিকে তাকিয়ে আছে এই সমুহ বিপদ থেকে উদ্ধার পাওয়ার আশায়,তখন আপনি নিজের একান্ত অনুগত দেশবাসীর সঙ্গে মশকরা করছেন।তাদের অসহায়তা নিয়ে তামাশা করছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জী, আপনি এর আগে করোনা প্রতিরোধে নিয়োজিত দেশের হাজার হাজার ডাক্তার নার্স আম্বুলেন্সকর্মী সংবাদ মাধ্যমের কর্মী সবাইকে সাহস ও শ্রদ্ধা জানাতে ঘন্টা ও থালি এবং হাততালি বাজানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন।সেদিন মানুষের মনে সামান্য তম কোন প্রশ্ন ছিল না।সবাই ভেবেছিল এটা জাতির একাত্মবোধের এক চরম অগ্নি পরীক্ষা যা পালন করাটাই আমাদের একমাত্র দায়িত্ব ও কর্তব্য। মানুষের অফুরাণ সমর্থন সেদিন আপনি কুড়িয়ে নিয়েছিলেন।যা কি না কোথাও কোথাও উৎসবের মেজাজে ছিল। সমস্ত যুক্তিতর্কের উর্দ্ধে উঠে মানুষের মৃত্যু ভয় খানিকটা আপনার জনপ্রিয়তার পারদকে আরো উর্দ্ধমুখী করে দিলো।এই দুর্দশার সময় যখন গোটা দেশ এক চরম সংকটে তখন সেই দেশবাসীকে অনির্দিষ্টকালের দিশাহীন লক ডাউনে ডুবিয়ে দিয়ে আবারো নিজের জনপ্রিয়তার পারদ মাপতে চেয়েছেন।বলতে দ্বিধা নেই পরিকল্পনা হীন এক রাজনৈতিক নেতৃত্ব গোটা দেশের পক্ষে কতটা অমঙ্গল ডেকে আনতে পারে তার এক বলিষ্ঠ উদাহরণ ইতালি, জার্মানি, আমেরিকার মত উন্নততম দেশ। যাদের করোনা ভাইরাস সম্পর্কে”হু”ডিসেম্বর মাস থেকেই বারবার সচেতন করা সত্ত্বেও তারা সেটা গুরুত্ব দেয়নি।যার কারণে আজ তাদের মারাত্মক মুল্য চোকাতে হচ্ছে।সেই সময় আপনার নজরেও তখন করোনা ভাইরাস ছিল না। বরং একজন বিজেপির নেতা হিসাবে আপনার কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল এন আর সি,সিএএ,এনপিআর।গোটা ফেব্রুয়ারি কাটিয়ে দিলেন ডোনাল ট্রাম্পের ভারত সফর আর দিল্লীর বুকে মুসলিম নিধন নিয়ে। যখন করোনা ভাইরাসের কোপে অলরেডি বিশ্বজুড়ে মহামারির আকার নিতে চলেছে বলে “হু”বারবার সতর্ক করে চলেছে। আপনি তখন একবারের জন্যেও এই মহামারির ভয়াবহতা সম্পর্কে একটি শব্দও দেশবাসীর জন্য ব্যায় করলেন না।কারণটা অবশ্যই আপনি চেয়েছিলেন মারাত্মক এই ভাইরাসে মানুষ মরুখ। আপনি জানেন যেকোন রোগ ভোগের সবচেয়ে বেশি শিকার হন দেশের গরীব মানুষ।যাদের জন্য একমাত্র ভরসা হল সরকারী হাসপাতাল। যেখানের ট্রীটমেনট পাওয়াটা খানিকটা লটারির টিকিট জেতার মতো। প্রিয় প্রধাণমন্ত্রীজী, আপনি বলুন যে সময় একশো কোটি টাকা ব্যয়ে ট্রাম্পের ভারত সফর নিয়ে ব্যস্ত থাকলেন সেই সময় যদি করোনাকে আটকাতে তৎপর হতেন তাহলে কি আমাদের এই এতগুলোও দিন লক ডাউনের শিকার হয়ে ঘরে বসে থাকতে হতো?যেটা আমাদের মত দুর্ভাগা দেশের কাছে এক সীমাহীন ক্ষতি বলা চলে।যদি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশ মেনে আরো আগেই সমস্ত আন্তর্জাতিক উড়ান বন্ধ করে দেওয়া হত,যদি দেশের বিভিন্ন প্রান্তের একেকটা সময় ধরে লক ডাউন করা যেত(চীনের উহানে যেমন হয়েছে),যদি এই আকস্মীক লক ডাউনে যাওয়ার আগে পরিযায়ী কোটি কোটি শ্রমিকদের কথা ভেবে তাদের আরো আগে নিজ নিজ রাজ্যে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হত,তাহলেতো এত মানুষের ঘরে ফেরার এই আর্তনাদ শুনতে হতো না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি মোমবাতি হ্যারিকেন জ্বালিয়ে দেশবাসীর প্রতি কি আহ্বান জানাতে চাইছেন,”আসুন দেশটাকে আমরা ভোগের বাঁশি” বানাই? আপনি দেশের প্রধানমন্ত্রী, আপনি বলুন এই লক ডাউনের ফলে কর্মহীন মানুষের দিন কিভাবে চলবে? আপনি পরিসংখ্যান দিয়ে বলুন কোথায় কত অভুক্ত মানুষের অন্নের সংস্থান করেছেন। আপনি করোনা ভাইরাসের কারণে প্রধানমন্ত্রী কল্যাণ যোজনায় এক লাখ সত্তর হাজার কোটির প্যাকেজ দিয়েছেন। কিন্তু তার সুবিদা এখনো পর্যন্ত কত মানুষ পেয়েছেন তার হিসাবটা বলুন।যে একশো দিনের কাজে আগামী ছয়মাস মানুষকে ১৮২ টাকা মজুরির জায়গায় ২০২ টাকা করছেন সেই একশো দিনের কাজ এখন কিভাবে সম্ভব হবে সেটা বলেননি। যেখানে মানুষ লক ডাউনের কারণে বাইরেই বেরোতে পারছেন না সেখানে একশো দিনের কাজে একসাথে তিরিশ পঞ্চাশজন কোথায় কাজ করবেন?তাহলে এই খাতে টাকাটা কিভাবে গরীব মানুষের হাতে যাবে?এরকম আরো অনেক প্রশ্নের উত্তর আজ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।যার কোনটির উত্তর সম্ভবত আপনার কাছেও নেই।তাই টিভিতে রেডিও তে আপনি দেশের সরল সাদা সিধে মানুষদের মাতিয়ে রাখতে চাইছেন একটার পর একটা বাহানা দিয়ে।করোনা ভাইরাস আতঙ্কে আতঙ্কিত দেশের মানুষ তাই মৃত্যুমুখে দাঁড়িয়ে আপনার এই অর্বাচীন স্বাপ্নিক পদক্ষেপকে বিনা প্রশ্নে স্বাগত জানিয়ে চলেছে।যার মধ্যে কোন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা না থাকা সত্ত্বেও দেশের মানুষ আপনার ডাককে জোহুজুরের মত পালন করছে।যেটাই এক সীমাহীন অপরাধ।যা এই মুহুর্তে আপনি করে চলেছেন।মনে রাখবেন, আপনি দেশের প্রধানমন্ত্রী আপনার থেকে জাতি সেই শিক্ষা নেবে যা আগামী সহস্রাধিক বছর তাকে সমৃদ্ধ করে তুলবে।তাই এহেন দেশবাসীর দুর্দিনে একজন রাষ্ট্রনেতা হয়ে একম তঞ্চকতা বন্ধ করুণ।দয়া করে আমার কোন শব্দে আপনার প্রতি অবমাননা হয়েছে মনে করলে নিজগুনে ক্ষমা করবেন।একজন আদর্শ নাগরিক হিসাবেএ প্রশ্ন গুলো মনে এলো তাই তুলে ধরলাম।
আপনার একান্ত অনুগত–