চোপড়ার থেকে মগরাহাট বিদ্বেষের বিষ এখন বাতাসে, সম্প্রীতি ক্রমেই সোনার পাথড় বাটি হয়ে উঠছে।
রাজনীতিকদের কাছে মানবিকতার কোন জায়গা নেই।যে কারণে একজন রাজনীতিক অবলিলায় হিংসায় মদত দিতে পারেন।বলতে পারেন পৃথিবীতে হিংসা ছাড়া কখনো কোনো সমস্যার সমাধান হয় না। কিংবা নির্দ্ধিধায় বলতে পারেন “আমরা ক্ষমতায় এলে বদলের সাথে বদলাও নেব”।সরাসরি এমন হিংসায় মদত যোগানো কথা এখন প্রায়শই শোনা যায় রাজ্যের বর্তমান প্রধান বিরোধী দল বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের মুখে।যিনি তার এই ধরণের কথাবার্তায় এতটুকু লজ্জাবোধ করেন না উল্টে গর্ব করে বলেন যে আমি জিততে এসেছি তাই জেতার জন্য যা যা করার দরকার বলার দরকার তাই করব। ফলে খুব স্বাভাবিকভাবেই এরাজ্যে এখন অতি উচ্চ এক বান্ধ্যাত্বক রাজনীতির চল দেখা যাচ্ছে যারই সুত্র ধরে কখনো থানা জ্বালিয়ে দেবার হুমকি শুনতে পাই তো কখনো নির্বাচনে জেতার পর পুলিশকে দিয়ে পা চাপানোর সংকল্পের কথাও শোনা যায়।যাকেই আরো কয়েক ধাপ এগিয়ে রাখলেন সম্প্রতি বিজেপির রাহুল সিনহা।মনে হয় না এরকম ধারাবাহিক কুরুচিকর এবং হিংসা বর্বরতার কথা আগে কখনো শুনেছি। অতীতে বাম জামানায়। সিপিএমের দু একজন নেতা মন্ত্রীদের মুখে খারাপ ইঙ্গিত পুর্ণ কথা শুনলেও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু কিংবা মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মুখে বিরোধী নেতানেত্রীদের সম্পর্কে এমন নিম্ন মানের ভাষা ব্যবহার শোনা যায়নি।বলা যায় শিক্ষা চেতনায় এক উন্নত মানসিকতাই তাঁদের বক্তব্যে ফুটে উঠতো। কিন্তু সেসব দিন এখন অস্তমিত। যেখানে লড়াইয়ের ময়দানে এখন এক ইতর কালচার জায়গা করে নিয়েছে বলা যায়।যার নেপথ্যে রয়েছে উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংস্কৃতি। জাতিতে জাতিতে বিদ্বেষ, দাঙ্গা, অসহিষ্ণুতা,এসবই আগামী দিন বাংলা তথা বাঙালীর ভবিতব্য বলা যায়।যারই এক নির্মমতা দেখা গেল উত্তর দিনাজপুরের চোপড়ার ঘটনায়।নিছক প্রেমের সম্পর্ক ঘিরে ভয়ঙ্কর এক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধানোর গভীর যড়যন্ত্রের ছবি দেখা গেল।যা আগামী দিনে এইরাজ্যের আরো বহু জায়গায় সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি চোপড়ার ঘটনায় পুলিশি তদন্তে যেটুকু উঠে এসেছে তাতে দেখা গেছে বছর ষোল সাতেরো একটি মাধ্যমিক উত্তীর্ণ মেয়ের সাথে একটি মুসলিম সম্প্রদায়ের ছেলের সাথে ভালবাসার সম্পর্ক তৈরি হয়।যারই বাস্তব পরিণতি যেহেতু মেয়েটির পরিবার গোঁড়া হিন্দু তাই সেই সম্পর্ক মেয়েটির পরিবার মেনে নেবে না সেটা বুঝেই তারা দুজনে আত্মহত্যা করে। কিন্তু বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব পুরো বিষয়টি নিয়ে হিন্দুত্বের তাস খেলতে চেয়ে বিষয়টিকে ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগে ব্যাপকভাবে বিক্ষোভ দেখায়, শুধু তাই নয় প্রায় খান দশেক সরকারি বেসরকারি বাস যানবাহন পুড়িয়ে দেয়।যদিও এই ঘটনায় প্রশাসনিক তৎপড়তার দরুণ পুরো বিষয়টি এখন পুলিশের নিয়ন্ত্রণে। যেখানে উভয় পক্ষের ছেলে ও মেয়ের মর্মান্তিক এই মৃত্যুতে মানুষ শুধু ব্যাতিত তাই নয় তারা যে একটা নোংরা রাজনীতির শিকার হয়েছেন সেটাও তারা এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। মাঝখান থেকে অভিযুক্ত মুসলিম সম্প্রদায়ের ছেলের মৃত্যু ঘিরে উঠেছে প্রশ্ন, যেখানে তাকে খুন করা হয়েছে এমনই অভিযোগ তুলেছেন তার বাড়ির লোক।ফলে মৃত মেয়েটির বাবা দাদা ও পরিবারের আরো কয়েকজন এখন পুলিশের হাতে বন্দী। যাদের বিরুদ্ধে খুন ও যড়যন্ত্রের অজামিনযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের হয়েছে। সুতরাং একটা জিনিষ পরিষ্কার তাহল ভুক্তভোগীরা যখন এই মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় জেরবার তখন তাদেরকে সামনে রেখে এক চরম ধূর্ততার সঙ্গে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করে গেল বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব। যদিও এরকম ঘটনার আরো ঘটার পূর্বাভাস ইতিমধ্যেই আমাদের কাছে এসেছে যা নিয়ে পুলিশ প্রশাসন এখনই সজাগ না হলে পরিস্থিতি এমন ভাবেই যে কোন দিন বিগরোতে পারে। সম্প্রতি এরকমই একটি ঘটনা ঘটার ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার মগরাহাট থানার অন্তর্গত হরিশংকর পুর গ্রামের এক তৃণমুল কর্মী।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যুবকের বক্তব্য তাদের গ্রামের একটি হিন্দু সম্প্রদায়ের মেয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে একটি মুসলিম যুবকের।যারই সম্পর্কের জেরে ছেলেটির সাথে মেয়েটি পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে।পরে যদিও মেয়ের বাড়ি তাদের সম্পর্কে শিলমোহর দিলেও এখন বাধ সাধছে স্হানীয় কিছু হিন্দুত্ববাদী মানুষ। যাদের পিছনে খুব স্বাভাবিকভাবেই ওসকানি দিচ্ছে স্হানীয় বিজেপি নেতৃত্ব।দাবি তাদের একটাই তাহল হিন্দু পাড়ায় ঢুকে মুসলিম জামাই নিয়ে আদিখ্যেতা চলবে না।যা নিয়ে সুচিন্তিত কিছু উদার মনস্ক মানুষের বক্তব্য, আমাদের বাড়িতে যে কোন প্রয়োজনে যখন মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের অবাধ আনাগোনা হয় তখন এর বিরোধিতা কেউ করেনা তাহলে এখন কেন একটি সম্পর্ক ঘিরে এমন উগ্রবাদী মনোভাব!যার পিছনে সাম্প্রদায়িক শক্তির প্রচ্ছন্ন মদতটাই আসল কারণ। তাদের মতে এনিয়ে বিষয়টিকে এখনও সিরিয়াস না নিলে আগামী দিনে ভুগতে হবে প্রশাসনকেই। যেখানে শাসক তৃণমুলের বিরুদ্ধে ক্রমেই সাধারণ মানুষের ক্ষোভ বিজেপির জমি শক্ত করার সুবিধা করে দিচ্ছে।ওই তৃণমুল কর্মীর কথায়,দল এখানে ধান্ধাবাজদের মাধ্যমে সংগঠন চালায়। যাদের বিরুদ্ধে বে আইনি প্রমোটিং থেকে আম্ফানের টাকা লুট সবেতেই নাম জরিয়ে আছে। ভাল মানুষদের যে একটা সর্বজন স্বীকৃত ইমেজ থাকে সেটা একদমই নেই।ফলে বিতশ্রদ্ধ মানুষ এই নীতিহীনদের শাস্তি দিতেই এখন পদ্ম প্রেমে গা ভাসিয়ে দিয়েছে।আর যারই পথ ধরে বাংলায় আগামী দিনে আরো বহু চোপড়া আমরা দেখতে পাব।যার মুল উদ্দেশ্য হল গরীব খেটে খাওয়া মানুষের মধ্যে জাত ধর্মের নামে বিদ্বেষের বিষ ঢেলে সমস্ত সামাজিক সুসম্পর্ক ভেঙে চুরমার করে এক কঙ্কালসার বাংলা উপস্হাপন করা।যার মেওয়া ফলে পুষ্ট হবে অবাঙালি ইউপি বিহারীদের একাংশ।