মহানুভবতার
নিউজ সারাদিনের দূরদৃষ্টি পাতাটি পাঠকের জন্য ,পাঠকের নিজস্ব মতামতের জন্য, দায়ী নয় নিউজ সারাদিনের সম্পাদকমণ্ডলীরা।
শুভাশিস ঘোষ ,কলকাতা
মহানুভবতার,মাফ করবেন বলতে বাধ্য হচ্ছি যে আক্ষরিক অর্থেই আমরা হলাম “চার অক্ষর”।অন্তত রাজনৈতিক নেতাদের চোখে তো বটেই এমনকি আপনার চোখেও।ঠিকই তো রেলের লাইনটা শোবার জায়গা? করোনা ভাইরাস মহামাড়ি এবং মারাত্মক বিপদজনক এটা জেনেও যারা ঘরে ফেরার এত তাড়া নিয়ে খালি পায়ে হেটে ঘরে ফেরার তাগিদ দেখিয়েছেন তাদের তো ওই চার অক্ষর বলাটাই ঠিক।ভাবুন তো একবার কি আহাম্মকের দল এরা যারা পায়ে হেঁটে কেউ চারশো কেউ আটশো কেউবা একহাজার দুহাজার কিলোমিটার পাড়ি দিচ্ছে।মহানুভবতার আপনি ঠিকই বলেছেন পরিযায়ী এই শ্রমিকগুলো কেন রেল লাইন ধরে হাঁটতে গেল।আর সেই কারণে তারা যখন ট্রেনে কাটা পড়েছে তখন তাদের নিয়ে এত হাহুতাশের কি আছে?আরে আমাদের দেশে রেল লাইনের ধারে বসবাস করে এমন লোকের সংখ্যা কত জানা আছে? সরকারি পরিসংখ্যান হল বছরে ৫০,০০০ মানুষ ট্রেনে কাটা পড়ে।যার জন্য রেলকে কোন ভাবেই দায়ি করা যায় না।কারণ রেলওয়ে সেফটি অ্যাক্টে পরিস্কার বলা আছে রেল লাইনে কোন মানুষের মৃত্যু হলে তার জন্য কোনভাবেই রেল কর্তৃপক্ষ দায়ি নয়।কিন্তু তা সত্বেও যে ভাবে প্রতিবছর মানুষের মৃত্যু হয় সেই চিন্তা করে সরকার বাহাদুরের রেলমন্ত্রী পিষুষ গোয়েল সাহেব বলেছিলেন রেলের তিন হাজার কিলোমিটার পথ পাঁচিল তুলে দেওয়া হবে যাতে মানুষ তো বটেই কোন পশুও রেল লাইনের উপরে অযাচিত ভাবে প্রবেশ করতে নাপারে।এর জন্য প্রায় ২৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দও করা হয়েছিল।কিন্তু দুঃখের বিষয় সেই বাউন্ডারি দেয়ার কাজ আজও সম্পুর্ণ হয়নি।মহানুভবতার আপনি বলছেন,রেল লাইনের উপর শোয়া তো দুর হাঁটাটাও অপরাধ কিন্তু এটা ভুলে যাচ্ছেন কেন আমাদের দেশের ২শতাংশের বেশি মানুষ এখনো আশ্রয়হীন যাদের একমাত্র স্হান হল কোনো রেল লাইনের ধার বা ব্রিজ কিংবা স্টেশনে।মাননীয় মহানুভবতার আপনি নিশ্চয় জানেন আমাদের দেশের সংবিধানের আর্টিকেল ১৪ থেকে ১৯ প্রায় সব ধারাতেই বলা হয়েছে অন্ন,বস্ত্র বাসস্হানের মৌলিক অধিকারের কথা।যেটা স্বাধীনতার এতগুলো বছরের পরেও দেশের আম পাবলিকের জন্য নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।মহাশয়,আপনি কি জানেন, রেল লাইনের পরিযায়ী শ্রমিকরা নিতান্ত বাধ্য হয়েই সেদিন রেলের লাইন ধরে চলতে বাধ্য হয়েছিল।কারণ মানুষগুলোর পক্ষে এটা ছাড়া অন্য কোন পথ ছিল না।লক ডাউন ঘোষনার দেড়মাস অতিবাহিত হওয়ার পরেও সরকার যখন তাদের জন্য ঘরে ফেরার কোন উদ্যোগ নেয়নি তখন বাধ্য হয়ে তারা পায়ে হেঁটেই পাড়ি দিয়েছিল।কারন তাদের থাকার জায়গায় বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে, জলের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে, এমনকি বাড়িওয়ালার চোখ রাঙানিও সহ্য করতে করতে তারা নাচার হয়ে এই পথ বেচে নিয়েছে।যেখানে রাস্তায় নামলে জুটছিল পুলিশে মার আর ঘরে থাকলে বাড়িওয়ালার অত্যাচার নির্যাতন।আপনি বলুন একটা পশুকেও কি এরকম অত্যাচার করলে সে এভাবে কোথাও থাকতে পারবে?যেখানে মানুষ নামক এই তিন অক্ষরগুলোকে সরকার যদি একটু মর্যাদা দিয়ে ঘরে ফেরার সুযোগ করে দিত তাহলে এতগুলো মানুষের লাশ কি আমাদের গুনতে হতো?সত্যি বড় আশ্চর্য লাগছে মহানুভবতার আপনাদের বিচার দেখে।বুঝতেই পারছি করোনা ভাইরাস আজ আমাদের এক নির্মম সত্যের সামনে খাঁড়া করে দিয়েছে আর সেটা হল মানুষ নয় আইনটাই বড়বেশি বিচার্য বিষয়।যেখানে সব যুক্তি তর্ককে হারিয়ে দেয় আপনার ওই আইনী দস্তাভেজ।খুব ভাল,খারিজ হয়েছে পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য ন্যায় বিচারের আবেদন।যেটা একটা অন্ধ ধৃতরাষ্ট্র দেশের শাসকবর্গকে আরও বেশি করে অমানবিক হওয়ার ছাড়পত্র দিয়ে দিল।যা পরক্ষে দেশের দীন দরিদ্র মানুষের বেঁচে থাকার অধিকারের কফিনে পেরেক পোঁতার সামিল।কিন্তু একটা কথা ভুলে যাবেন না স্যার,ইতিহাস কোনদিন কখনো কাউকে ক্ষমা করেনি আজও করবে না।কারন যে মানুষগুলো আজ শুধু রাষ্ট্রের চরম উদাসীনতা আর হটকারি সিদ্ধান্তের দরুণ অকালে ঝড়ে পড়লো তাদের ব্যাথার কথা এই সমাজ মনে রাখবে।যেটাকে দেশের গরীব হত্যার এক মারাত্মক রাষ্ট্রীয় যড়যন্ত্র বলেই আমরা আম পাবলিক মনে করি।যে চক্রান্তের সামিল আজ আপনি আপনার ওই বিচার ব্যবস্হা।যেখানে মানুষের জন্য আইন না আইনের জন্য মানুষ এর জবাব একদিন দেশের এই গরীবগুর্ব মানুষেরা চাইবেই।মনে রাখবেন কবি সুকান্তের সেই কবিতার লাইন”আদিম হিংস্র মানবতার আমি যদি কেউ হই,স্বজন হারানো শশ্মানে তোদের চিতা আমি তুলবই”।তাই বলছিলাম করোনার ভাইরাস আজ দেখিয়ে দিয়েছে এই সমাজে আদপে আমরা আপনাদের নজরে শুধুই একটা “চার অক্ষর”এর সংখ্যামাত্র।যার শেষটা দেখার জন্য আমাদের আরো অপেক্ষা করতেই হবে।