মতামত

শহিদের রক্ত ব্যর্থ হতে দেননি, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মৃত্যুঞ্জয় সরদার:বাংলার রাজনীতিতে নারী জাতির উত্থান হবে, স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি, বাংলার বিশিষ্ট রাজনীতিবিদরা।দিন আনা দিন খাওয়া ঘরের মেয়ে, মাথা গোঁজার ঠাঁই ছিল না। কলকাতার বুকে সে বাংলা রাজনীতিতে শ্রেষ্ঠ জায়গা অর্জন করবে এটা কেউ মেনে নিতে পারেনি , বামফ্রন্টের নেতৃত্বরা।এই কথাগুলি লিখতে বসে, আমার জীবনের স্মরণীয় হয়ে যাচ্ছে পিছনের দেখা কিছু কথা।এসব কথাগুলো লেখার ইচ্ছা না থাকলেও লিখতে বাধ্য হচ্ছি।আমার সাংবাদিকতা জীবনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিরোধী দল নেত্রী হিসেবে খুব কাছে থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছিলাম। হয়তো এই সুযোগটি আমার জীবনে হয়ে উঠত না, যদি না আমি সাংবাদিক জগতের বিতর্ক তৈরি না করতাম।২০০৭ সাল থেকে লেখালেখি আমি শুরু করেছিলাম বামফ্রন্ট বিরোধী, বিভিন্ন পত্র-পত্রিকাতে। তার পরিণাম আমার জীবনে নেমে এসেছিল অতি ভয়ঙ্কর, খুনের হাত থেকে রেহাই পাওয়া।সেই সময়ে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ছদ্মনামে লিখতাম তারপরেও অত্যাচার-অবিচার এবং ঘরছাড়া ও আমাকে করে দিয়েছিল।আমার পরিবারের সমস্ত সম্পদ লুট হয়ে যাওয়ার পরে ,আদিবাসী সংবাদ নাম একটি পত্রিকাতেও সে খবর প্রকাশ পায় হত্যার চক্রান্ত তরুণ সাংবাদিক ।এরপর থেকে মহাশ্বেতা দেবীর ঘরে থাকার সুযোগ আমার হয়ে গেছিল। নন্দীগ্রাম আন্দোলনের প্রাকমুহুর্তে মহাশ্বেতা দেবীর ঘরে হাজির হয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।সেই দিনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে খুব কাছে থেকে দেখার সুযোগ, তার সাথে কথা বলার সুযোগ টি আমার হয়েছিল।মহেশ্বেতা দেবী নিজে মুখে আমার লেখালেখির কথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কে শুনিয়েছিলেন আমার সামনে রেখেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাকে বলেছিল একদিন ভাই সুদিন আসবে আমরা সবাই ভালো থাকবো। সত্যি সত্যি সুদিন এসেছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কথা দিয়েছিল। কিন্তু আমার জীবনে আর কোনদিন সুদিন এখনো এলো না।আজও আমার ওপরে অত্যাচার অবিচার অমানবিকতায় অব্যাহত। যাক এসব কথা আজ লেখার বিষয়বস্তুর নয়, বাংলার ভবিষ্যৎ, বাংলার গর্ব ,নারী জাতির গর্ব, সেই নিয়ে আজ আমার কলমে তুলে ধরছি।যে বাংলার রাজনীতিবিদরা অকথ্য অত্যাচার, অবিচার ,অমানবিকতা চালিয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপরে। আজ তিনি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী,বাংলার গর্ব ,বাংলার নারী জাতির গর্ব ,ভারতবর্ষের গর্ব তিনি।তিনি হচ্ছেন একমাত্র গরীব দরদী মুখ্যমন্ত্রী। তবে তার জীবনে দু এক কথা না বলে গেলে হয়তো এই লেখাটি অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯৫৫ সালের ৫ জানুয়ারি কলকাতার হাজরা অঞ্চলে এক দরিদ্র নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা প্রমীলেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী, মা গায়ত্রী দেবী ছিলেন গৃহবধূ। কলকাতার শ্রীশিক্ষায়তন কলেজ থেকে বি.এড. ডিগ্রি সম্পূর্ণ করার পর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এ. ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে কলকাতার যোগেশচন্দ্র চৌধুরী কলেজ অফ ল থেকে এলএল.বি. ডিগ্রি অর্জন করেন। রাজনীতিতে প্রবেশ ছাত্রাবস্থাতেই। শিক্ষাজীবন সমাপ্ত করার পর সংসার চালনার জন্য কিছুকাল একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতাও করেছিলেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিবাহ করেননি। তবে ছোট থেকে তার স্বপ্ন ছিল মানুষের জন্য কিছু করা ,আর সেই লক্ষ্যেই তার পথ চলা । তাই তিনি বেছে নিয়েছিলেন রাজনৈতিক জীবন।মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের  নেতৃত্বে আট-নয়ের দশক উত্তাল করে একের পর এক আন্দোলন হয়েছে। মানুষের দাবি নিয়ে বারবার আঘাত হানা হয়েছে। তদানীন্তন বামফ্রন্ট সারকারের অপশাসনের মুলে। সেদিন অবিভক্ত কংগ্রেসের যুবনেত্রী হিসাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উপলব্ধি করেছিলেন, ভোটের বাক্সে মানুষের গনতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগের মৌলিক মর্যাদাটুকুও দিতে চায়ে না কমিউনিস্ট  পার্টি মার্কসবাদীর শাসকরা। তাই ১৯৯৩ সালে ২১ জুলাই সচিত্র পরিচয়পত্রের দাবিতে ঐতিহাসিক মহাকরণ অভিযানের ডাক দিয়েছিলেন তিনি। সেদিন কাকদ্বিপ থেকে কোচবিহার উদ্বেল করে হাজার হাজার ছাত্র-যুব, জনতার মিছিল আছড়ে পড়েছিল কলকাতার রাজপথে। সেদিনের আন্দোলন বামফ্রন্ট সরকারের ভিত কতটা নাড়িয়ে দিতে পেরেছিল তা জানা নেই, কিন্তু অধিকারের দাবিতে জাতীয়তাবাদী যুবকদের মিছিল নিঃসন্দেহেই বুক কাঁপিয়ে দিইয়েছিল মহাকরণের তৎকালীন শাকদের। সে কারণেই বিনা প্ররচনায়ে পুলিশের গুলিতে কলকাতার রাজপথে ১৩জন সহযোগীকে হারাতে হয়েছিল।শহিদের রক্ত ব্যর্থ হয়েনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেদিনের আন্দোলনে স্বীকৃতি পেয়েছে মানুষের সচিত্র পরিচয়পত্রের দাবি। সারা জীবনের জন্য একুশে জুলাই সংগ্রামী মানুষের কাছে লড়াইয়ের প্রতীক হয়ে গিয়েছে। আর সেই লক্ষ্যেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার মানুষকে একত্রিত করার জন্য মার্কসবাদী কমিউনিস্ট পার্টির অত্যাচারের বিরুদ্ধে ১৯৯৪ সালে ১২ জানুয়ারি, স্বামী বিবেকানন্দর জন্মদিনে কংগ্রেসের পতাকা কাঁধে নিয়ে শুরু করেছিলেন জনসংযোগ জাত্রা। অবিভক্ত মেদিনীপুর থেকে সেই যাত্রা সারা বাংলার যজুবসমাজকে উত্তাল করে তলে। টানা সাতমাস রাস্তায়ে রাস্তায়ে ঘুরে ১৮৭টি বিধানসভা অতিক্রম করেছিলেন। বাংলার মানুষকে সঙঘবদ্ধ করে নিরবচনে অংশ নেয়ার প্রেরণা জুগিয়েছিলেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সংগঠনের দায়িত্বে থাকার সুবাদে সারা রাজ্য ঘুরে উপলদ্ধি করেছিলেন বিভিন্ন লকআপে ১৭৮জন বন্দিকে পিটিয়ে হত্যা করেছে ক্ষমতাসীন বামফ্রন্ট সারকারের পুলিশ। সেই ১৭৮টি পরিবারকে চাকরি ও আর্থিক সাহায্যের দাবিতে কলকাতার রাজপথে ১৯৯৫ সালে ৬ অক্টোবর ধরনা অভিযান করেছিলেন। ২৩ দিনের মাথায়ে মমতার সেই আন্দোলন বাংলা ছেড়ে দিল্লি মসনদে আছড়ে পরেছিল।তদানীন্তন দিল্লি কংরেসের সহায়তায় বাংলার চালু হয়েছিল রাজ্য মানবাধিকার কমিশন। তাই আজও বাংলার মানুষ প্রশাসনের কাছে বিচার না পেলে ছুটে যায়ে মানবাধিকার কমিশনের কাছে।
এহেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের  বহু আন্দলনের মধ্য দিয়ে মানুষ সঙঘগবদ্ধ হলেও কোনও এক অজানা কারণে নির্বাচনে ইতিবাচক প্রতিফলন ঘটেনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই সন্ধিক্ষ্ণণে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, `বাংলার মাটিতে মার্কসবাদী কমিউনিস্ট পার্টির বিরুদ্ধে লড়াই করতে গেলে কংরগ্রেসর পতাকা হাতে করে করা যাবে না। সেই কারণেই
১৯৯৭ সালের ডিসেম্বরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেস থেকে বহিষ্কৃত হন সেই বছরেই কংগ্রেস ছেড়ে আসা আরও কিছু নেতা-কর্মীকে নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের পত্তন করেন মমতা৷ নির্বাচন কমিশনের কাছে দলের নাম নথিভুক্ত হয়ে গিয়েছিল আগেই৷ মমতা নিজেই দলের প্রতীক এঁকেছিলেন৷ কংগ্রেসের তেরঙা পতাকার মাঝে জোড়া ঘাসফুল৷ নিজের বিচার-বুদ্ধির বুঝতে পেরেছিলেন,অসংখ্য আন্দোলনের সৈনিক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সময়ের সাথে সিপিএম এর বর্বরতার বিরুদ্ধে আন্দোলনকে আরও কঠোর ও ঘনীভূত করতে দরকার একটি আলাদা মঞ্চ। কংগ্রেস প্রতিটি পদে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছিল। তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৯৮ সালের ১লা জানুয়ারি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই ভাবনার সূত্র ধরেই।এইদিন সবকিছু রূপ দিয়েছিলেন তিনি, বাংলার নতুন রাজনৈতিক দলনেত্রী হিসাবে। সেই কারণেই তৃণমূল কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার দিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলটির লোগোটিকে স্কেচ করেছিলেন। যা “তৃণমূল” (গাছের উপর দুটি ফুল) বুঝায়।তিনি ভেবেছিলেন নির্বাচন কমিশন যদি লোগো অনুমোদন করে। তবে সে দুটি লক্ষ্য অর্জন করবে।একটি তার দলের প্রবর্তন এবং দুটি একই সাথে দলের দর্শনীয় এবং লোকদের লোগোর পিছনে তার গভীর চিন্তা-ভাবনা বোঝানো, যা বার্তা ছিল ধর্মনিরপেক্ষতার কথা। “এক বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু মুসলমান , একজন তার নয়নমণি অন্যটি তার প্রাণ।” (গাছের উপর দুটি মুকুল, হিন্দু ও মুসলমান। যদি সে গুলির একটি চোখ হয় তবে অন্যটি জীবন হয়)।নির্বাচন কমিশন লোগোটি অনুমোদন করেছে তবে একটি কঠোরতা জারি করেছিল,যাতে বলা হয়েছে যে দ্বাদশ লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস ৬ শতাংশ ভোট পেতে ব্যর্থ হয়, তবে প্রতীক বাতিল হয়ে যাবে। তৃণমূল কংগ্রেস ভালোভাবে কাটাও শতাংশ বেরিয়েছিল এবং দলের জন্ম হয়েছিল।সময়টা ছিল একাদশ ও দ্বাদশ লোকসভার সন্ধিক্ষণ। একজন সুদক্ষ ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন রাজনীতিক হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুঝতে পেরেছিলেন, এটাই হচ্ছে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের সুযোগ্য সময়। এতেই বোঝা যাবে ভোটারদের মনের কথা। যারা এতদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাজ গুনমুগ্ধ হয়ে দেখে চলেছিল।  বাংলায় নিঃশব্দ আন্দোলন চলছে, জনগণ নতুন করে ইতিহাস লিখতে চলেছে, শুরু হতে চলেছে এক নতুন যুগ। কোন ভাবে আন্দোলনে নিরস হয়নি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।শত অত্যাচার, অনাচার, অবিচার, জোর করে কৃষকদের কাজ দিয়ে জমি কেড়ে নেয়ার বিরুদ্ধে আন্দোলনে তিনি সামিল হয়েছিলেন।২০০৬ সালের নভেম্বর মাসে সিঙ্গুরে টাটার ন্যানো প্রকল্পের বিরুদ্ধে একটি জনসভায় যোগ দিতে যাওয়ার পথে তাঁকে জোর করে বাধা দেওয়া হয়। মমতা পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় উপস্থিত হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। বিধানসভাতেই সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে তিনি ১২ ঘণ্টা বাংলা বনধও ঘোষণা করেন।তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়করা বিধানসভায় ভাঙচুর চালান,পথ অবরোধ করেন এবং অনেক জায়গায় যানবাহনে অগ্নিসংযোগও করা হয়। এরপর ২০০৬ সালের ১৪ ডিসেম্বর একটি বড়োসড়ো ধর্মঘট পালিত হয়েছিল।তবেই ২০০৬
ডিসেম্বরে ধর্মতলায় ২৬ দিনের অনশন৷ তার পর ২০০৮ -র অগস্টে সিঙ্গুরে টানা ১৬ দিনের ধর্না৷ সিঙ্গুরের জমি আন্দোলনে দু-দফায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই ৪১ দিনের নাছোড় মনোভাবই বদলে দিয়েছিল এ রাজ্যে জমি আন্দোলনের চিত্র৷ এবং এই দু’টি ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন তত্কালীন রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গান্ধী৷ ২০০৬ -এর বিধানসভা ভোটে বিপুল ভাবে জিতে ক্ষমতাসীন হন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য৷ যে দিন ভোটের ফলাফল বেরোয় , সে দিনই আলিমুদ্দিনে সাংবাদিক সম্মেলনে জানানো হয় , টাটারা এ রাজ্যে গাড়ি কারখানা গড়তে আগ্রহী৷ কিন্ত্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম থেকেই সিঙ্গুরের বহুফসলি জমি নেওয়ার বিরোধী ছিলেন৷ অধিগ্রহণ হয়ে যাওয়ার পর তাঁর দাবি ছিল , ৪০০ একর জমি ফিরিয়ে দিতেই হবে অনিচ্ছুকদের৷ তবে তিনি এখানে থেমে যাননি,
নন্দীগ্রামে একটি কেমিক্যাল হাব স্থাপন করতে চাইলে তমলুকের সাংসদ লক্ষ্মণ শেঠের নেতৃত্বাধীন হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদ এই অঞ্চলে জমি অধিগ্রহণের নোটিশ জারি করেন। তৃণমূল কংগ্রেস এর বিরোধিতা করে। মুখ্যমন্ত্রী নোটিশটি বাতিল ঘোষণা করেন। ২০০৭ সালের ১৪ মার্চ কৃষকদের ছয়মাসব্যাপী অবরোধ তুলতে পুলিশ তাদের উপর গুলিচালনা করলে চোদ্দো জনের মৃত্যু ঘটে। তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের বিরুদ্ধে স্থানীয় কৃষকদের আন্দোলনের নেতৃত্ব দান করে। এরপর রাজনৈতিক সংঘর্ষে বহু মানুষ বাস্তুচ্যুত হন।  নন্দীগ্রাম গণহত্যার প্রতিবাদে কলকাতার বুদ্ধিজীবীদের একটি বৃহৎ অংশ বামফ্রন্ট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামেন। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ ও তদনীন্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শিবরাজ পাতিলকে লেখা চিঠিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিপিআই(এম)-এর বিরুদ্ধে নন্দীগ্রামে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস সৃষ্টির অভিযোগ আনেন। আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার নন্দীগ্রামের কেমিক্যাল হাব প্রকল্পটি স্থগিত করতে বাধ্য হন। কিন্তু কৃষক আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে মমতা প্রভূত জনপ্রিয়তা অর্জনে সক্ষম হন। উর্বর কৃষিজমিতে শিল্পের বিরোধিতা ও পরিবেশ রক্ষার যে বার্তা নন্দীগ্রামের আন্দোলন প্রদান করে তা ছড়িয়ে পড়ে সমগ্র দেশে। এতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক জীবনের ভাগ্যর সূচনার পথ তৈরি হয়ে গেল।২০০৯ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দ্বিতীয়বার রেলমন্ত্রী হন। এই বছরের রেল বাজেটে তিনি রেল মন্ত্রকের বিভিন্ন নতুন উদ্যোগের কথা ঘোষণা করেন। দেশের ৫০টি স্টেশনকে তিনি আন্তর্জাতিক সুযোগসুবিধা সম্পন্ন বিশ্বমানের স্টেশনে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নেন। পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ মডেলে এই উন্নয়নের কাজ করার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়। এছাড়াও ৩৭৫টি স্টেশনকে তিনি আদর্শ স্টেশন ঘোষণা করেন। গুরুত্বপূর্ণ যাত্রীদের ব্যবহারের জন্য বাজার, ফুড স্টল ও রেস্তোরাঁ, বইয়ের স্টল, পিসিও/এসটিডি/আইএসডি/ফ্যাক্স বুথ, ওষুধের দোকান ও স্টেশনারি দোকান, স্বল্পব্যয়ের হোটেল এবং ভূগর্ভস্থ পার্কিং ব্যবস্থা সহ মাল্টি-ফাংশনাল কমপ্লেক্স স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই কমপ্লেক্সগুলিও পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপে গঠিত হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে। রেলের গ্রুপ ডি কর্মচারীদের কন্যাসন্তানদের আত্মস্বনির্ভরতা বৃদ্ধি করতে তাদের উচ্চশিক্ষায় স্কলারশিপ দেওয়ারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলের জমিতে সাতটি নার্সিং কলেজ প্রতিষ্ঠারও প্রস্তাব দেন। এছাড়া যুব এক্সপ্রেস ও দুরন্ত এক্সপ্রেস নামে দুই প্রকার নতুন ট্রেনও চালু করেন তিনি। দুরন্ত বর্তমানে ভারতের দ্রুততম রেল পরিষেবা। অন্যদিকে মহিলা নিত্যযাত্রীদের সুবিধার্থে ২০০৯ সালের ১৯ জুলাই মমতা হাওড়া-ব্যান্ডেল শাখায় একটি লেডিজ স্পেশাল ট্রেন চালু করেন। পরে শিয়ালদহ-কল্যাণী, পানভেল-মুম্বই সিএসটি ইত্যাদি সারা দেশের একাধিক শাখায় মহিলা স্পেশাল ট্রেন চালু হয়। ১৮ সেপ্টেম্বর শিয়ালদহ ও নতুন দিল্লির মধ্যে প্রথম দুরন্ত এক্সপ্রেস চালু হয়।২১ সেপ্টেম্বর চেন্নাই ও নতুন দিল্লির মধ্যে দ্বিতীয় দুরন্ত এক্সপ্রেসটি চালু হয়। মমতা সন্ত্রাসবিধ্বস্ত কাশ্মীরেও রেলপথের প্রসারে মনোযোগী হন। অক্টোবর মাসে অনন্তনাগ-কাদিগন্দ রেলওয়ে চালু হয়। ২০১০ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি মমতা নতুন উনিশটি রেল পরিষেবা চালু করেন।তবে
বর্তমানে তিনি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্বরাষ্ট্র, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা, ভূমি ও ভূমিসংস্কার, তথ্য ও সংস্কৃতি, পর্বতাঞ্চল বিষয়ক, কৃষি, বিদ্যুৎ, কর্মী ও প্রশাসনিক সংস্কার, সংখ্যালঘু কল্যাণ ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগেরও ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী। তিনি পশ্চিমবঙ্গের প্রথম মহিলা মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একজন বাগ্মী রাজনীতিবিদ। তিনি তাঁর অনুগামীদের কাছে “দিদি” নামে পরিচিত। ২০১১ সালে তাঁর নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেস পশ্চিমবঙ্গের ৩৪ বছরের বামফ্রন্ট সরকারকে পরাজিত করতে সক্ষম হয়েছিল। এই সরকার বিশ্বে সবচেয়ে বেশি সময় গণতান্ত্রিক উপায়ে রাজত্বকারী কমিউনিস্ট সরকার ছিল। ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেটে তিনি দুই বার রেল, এক বার কয়লা মন্ত্রকের এবং এক বার মানবসম্পদ উন্নয়ন, যুব, ক্রীড়া, নারী ও শিশুকল্যাণ বিভাগের রাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলেছেন। তিনি পশ্চিমবঙ্গে কৃষকদের জমি বলপূর্বক অধিগ্রহণ করে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের বিরোধিতা করে আন্দোলন করেছিলেন। ২০১৬ সালে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস এককভাবে ২১১টি আসনে জয়লাভ করে (মোট ২৯৪টি আসনের মধ্যে) সরকার গঠন করে। তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।তার লেখা প্রায় ১০০টি ট বই প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্নভাবে।বইয়ের সাথে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই কালি-কলমের সম্পর্ক শুরু হয়েছিল ১৯৯৫ সাল থেকে। পঁচিশ বছর ধরে তাঁর এই বই লেখার প্রতি অনুরাগ অটুট রয়েছে। আমার ভাল লেগেছিল মমতার বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ‘উপলব্ধি’ বইটি । যে বইটির মধ্যে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের নিজের দেখা জীবনের কথা তুলে ধরা হয়েছে।

Related Articles

Back to top button