নিমতা থানার কৃতিত্বে বন্ধ হল উওর দমদম পুরসভার নিমতা অন্তর্ভুক্ত শ্রীকৃষ্ণ পল্লী অঞ্চলে রমরমিয়ে চলা অবৈধ জলের ব্যাবসা
ঝুম্পা দেবনাথ,উওর দমদম:- জলের অপর নাম জীবন। জলদান হল এককথায় জীবনদান। কিন্তু সেই জলদানই যদি হয় অবৈধ বা হয় যদি অপরিশুদ্ধ, তাহলে তা মানুষের পক্ষে কখনোই শ্রেয় নয়। এমনিতর অবৈধ ভাবনা নিয়ে এই জলসংকট কালে অনেক ব্যাবসায়ী অবৈধভাবে জলের ব্যাবসা চালাছেন শহরতলির বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে। এর ফলে ক্ষতিগ্ৰস্ত হচ্ছে মানুষের স্বাস্থ্য এবং কমছে ভূগর্ভস্থ জলস্তর। উওর দমদম পৌরসভার নিমতা থানার অন্তর্গত ১২ নম্বর ওয়ার্ডের ২ নম্বর শ্রীকৃষ্ণ পল্লীর বাসিন্দা স্বপন পাল হলেন তেমনই একজন অবৈধ জলের ব্যাবসায়ী। দুরন্ত খবরের প্রতিনিধিরা এই খবর পেয়ে পৌঁছে যান উওর দমদমের নিমতা অঞ্চলের সেই ১২ নম্বর ওয়ার্ডের ২ নম্বর শ্রীকৃষ্ণ পল্লীতে এবং স্থানীয় মানুষের সাথে কথা বলে উঠে আসে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য দুরন্ত খবরের লেন্সে। স্থানীয় মানুষেরা জানান, এই অঞ্চলে এরকম বহু অবৈধ জলের ব্যাবসা ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে। কিন্তু পুরসভা এই ব্যাপারে চোখে ঠুলি এঁটেছেন।এই ১২ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর সৌমেন দত্ত এরকম অবৈধ জলের ব্যাবসার কথা জেনেও কেমন যেন উদাসীন মনোভাব প্রশন করছেন, এমনটাই অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। আবার কোন কোন স্থানীয় বাসিন্দা অভিযোগ জানাছেন যে, এই প্রাক্তন কাউন্সিলর সৌমেন দত্ত-ই এই অবৈধ জলের কারবারিদের কোনরকম অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে প্রশয় দিচ্ছেন, ফলত অঞ্চলে এক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। এমনি অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা প্রাক্তন কাউন্সিলর সৌমেন দত্তের সাথে কথা বলি, উনি এই ব্যাপারে উদাসীন ভাব নিয়ে জানান, তিনি এই ব্যাপারে কিছুই জানেন না এবং দায় সারা মনোভাব নিয়ে বলেন, যা জানে পৌরসভা।অবৈধ জলের ব্যাবসায়ী নিমতাবাসী স্বপন পাল জানান, এরকম অনেক অবৈধ জলের ব্যাবসা চলছে এই উওর দমদমের বিস্তীর্ন অঞ্চল জুড়ে। পুরসভা থেকে বন্ধ করার নোটিশ পেলে তিনি এই জলের ব্যাবসা বন্ধ করে দেবেন বলেই জানান।দুরন্ত খবরের দপ্তর থেকে নিমতা থানার নবনিযুক্ত অভিযোগ শাখার পুলিশ আধিকারিক শুভেন্দু ঘোষের সাথে যোগাযোগ করা হয়। তিনি এই দুরন্ত খবরের প্রতিনিধিদের দেওয়া তথ্যকে ভিত্তি করে তিনি তার পুলিশ আধিকারিকদের স্বপন পালের বাড়িতে পাঠান এবং এই অবৈধ ব্যাবসায়ী স্বপন পালকে লাইসেন্স দেখাতে বলেন। স্বপন পাল লাইসেন্স দেখাতে না পারার জন্য নিমতা থানা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয় এই অবৈধ জল ব্যাবসা।নিমতা থানার অভিযোগ শাখার পুলিশ আধিকারিক শুভেন্দু ঘোষের এই অভিনব প্রচেষ্টার অনেকেই ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। নিমতা নিবাসী বরুন দে জানান, অনেকদিন ধরেই চলছিল এই অবৈধ জল ব্যাবসা, তাতে পুরসভা কোনরকম ভাবেই কর্ণপাত করতে চাননি। এরফলে নিমতাবাসী প্রশাসনের উপর থেকে সম্পূর্ণ আস্থা হারিয়ে ফেলেছিলেন বলেই জানান।কিন্তু এই নবাগত অভিযোগ শাখার পুলিশ আধিকারিক শুভেন্দু ঘোষ এক অভিনব প্রয়াসের মাধ্যমে অবৈধ জল ব্যাবসা বন্ধ করে যে নজির গড়লেন,তাতে নিমতার মানুষেরা প্রশাসনের উপর সেই আস্থা ফিরে পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।অভিযোগ শাখার পুলিশ আধিকারিক শুভেন্দু ঘোষ জানান, মানুষের জন্য তিনি সর্বদাই কাজ করে যাবেন। কোন ব্যাক্তি যদি কোনরকম অসুবিধার মধ্যে পড়েন তাহলে নিমতা থানায় থাকা এক অভিযোগ বক্সের যে ব্যাবস্থা করা হয়েছে , সেই বক্সে তিনি এসে অভিযোগ জমা দিতে পারেন এবং সেই অভিযোগের ভিত্তিতে নিমতা পুলিশ অবশ্যই পদক্ষেপ নেবেন।
বিধায়ক তথা বামফ্রন্ট নেতা তন্ময় ভট্টাচার্য অভিযোগ শাখার পুলিশ আধিকারিক শুভেন্দু ঘোষকে এই অবৈধ জল ব্যাবসা বন্ধ করার জন্য সাধুবাদ জানিয়েছেন। তিনি আরও জানান, নিমতা অঞ্চলে এরকম অনেক অবৈধ-দুর্ণীতিজনক কাজ চলছে। আশা রাখছেন নবাগত অভিযোগ শাখার পুলিশ আধিকারিক শুভেন্দু ঘোষ সেই দিকেও দৃষ্টি রাখবেন এবং অবৈধ কাজ বন্ধ করবেন।পুরসভার চেয়ারম্যান সুবোধ চক্রবর্তী জানান, স্বপন পালের লাইসেন্সটি অন্য ব্যক্তির নামে। রিনিউ করতে পাঠানো হয়েছে লাইসেন্সটি। লাইসেন্স রিনিউ হয়ে এলে একদিন পৌরসভায় স্বপন পালকে ডাকা হবে।আবার প্রাক্তন ভাইস চেয়ারম্যান তথা প্রশাসক মন্ডলীর অন্যতম প্রশাসক লোপামুদ্রা দত্ত চৌধুরী জানান, অবৈধ জল ব্যাবসা বন্ধ হয়েছে এটা ভালো খবর। কিন্তু পুরসভা এই ব্যাপারে কি পদক্ষেপ নেবেন, তিনি সেই ব্যাপারে কিছুই জানেন না।
এই ঘটনা পরিপ্রেক্ষিতে উওরকলকাতা ও শহরতলির বিজেপি সভাপতি কিশোর কর জানান, পুরসভা থেকে আগত জলের মান খুবই খারাপ। তাই অনেকেই জলে কিনে খাবার দিকে ঝুঁকছেন। তিনি আরও জানান, প্রশাসক মন্ডলীদের বা প্রাক্তন পুরপিতা ও পুরমাতাদের ছত্রছায়াতেই বেড়ে উঠছে এই সমস্ত অবৈধ জল ব্যাবসা, তা না হলে দীর্ঘদিন ধরে এই ব্যাবসা অবৈধভাবে চলতে পারে না। তিনি আরও দাবি তুলেছেন, কেন এতদিন ধরে চলছিল এই অবৈধ জল ব্যাবসা? কেন ব্যাবস্থা নেননি পুরসভা?পৌরসভার প্রশাসক মন্ডলীরা বা প্রাক্তন পুরমাতা ও পুরপিতারা বিরোধী মহলের এই সমস্ত প্রশ্নে মুখে কুলুপ এঁটেছেন। কবে বন্ধ হবে অবৈধ জল ব্যাবসা?তাহলে কি পুরসভা থেকে আগত জলের মান সত্যিই খারাপ হচ্ছে? বিরোধীদেন এই সমস্ত প্রশ্নে প্রশাসকমন্ডলী আরেক অন্যতম প্রশাসক রাজর্ষি বোস জানান, তিনি এই অঞ্চলের জলের যোগান ব্যাপারটা দেখলেও তিনি এই সমস্ত প্রশ্নের কোন উওর দিতে রাজি নন।
তাহলে কি সত্যিই কোন অদৃশ্য লেনদেনকে হাতিয়ার করে পৌরসভার প্রাক্তন পুরমাতা ও পুরপিতারা বা প্রশাসক মন্ডলীদের ছত্রছায়ায় বেড়ে উঠছে এই সমস্ত অবৈধ জল ব্যাবসা? মানুষের স্বাস্থ্যের কথা ভাববেন তাহলে কারা? এমনি নানা প্রশ্ন তুলছেন ক্ষিপ্ত স্থানীয় বাসিন্দারা।—