গনহত্যার একশো বছর,সেকাল একাল।
শুভাশিস ঘোষ–১৩ এপ্রিল ১৯১৯ এই দিনটি ছিল ভারতবর্ষের ইতিহাসে স্বাধীনতা আন্দোলনের এক রক্তস্নাত দিন।এই দিনেই পাঞ্জাবের জালিওয়ালানা বাগে ইংরাজ শাসকরা নিরস্ত স্বাধীনতা আন্দোলনের সৈনিক ভারতীয়দের নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যা করে।এই নৃশংস বর্বর গণহত্যার ঘটনা আজও গোটা পৃথিবীর ইতিহাসে এক বিরলতম কলঙ্কিত দিন হিসাবে চিহ্নিত।যদিও পৃথিবীর ইতিহাসে গণহত্যার ঘটনা এটাই একমাত্র নয়। যেখানে আমাদের দেশের সাত আটশো বছরের ইতিহাস ঘাটলে বারবার রক্ত ক্ষয়ী লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস যেমন পাওয়া যায় তেমনিভাবে সেই বহু গণহত্যার ঘটনাও লিপিবদ্ধ আছে।ধরে নিতে পারি সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে একশ্রেণীর ক্ষমতা লোভী মানুষের দ্বারা খুন গণহত্যার শিকার আম জনতা বারবার হয়েছে।যার দরুণ প্রাণ গেছে গরীব মানুষের।১২১৯ সালে চেঙ্গীস খাঁ র ভারত আক্রমনের মধ্য দিয়ে গণহত্যার যে বর্বরতার শুরু হয় ইতিহাসের পাতায় আজও তাকে মধ্যযুগীয় বর্বতা বলেই আমরা জানি।যারই উত্তর পর্বে এই দেশ বারবার বহিঃ দেশীয় রাজা মহারাজ এমনকি দস্যু লুটেরাদের দ্বারা আক্রান্ত অত্যাচারিত ক্ষতবিক্ষত হয়েছে।প্রায় আটশো বছরের ইতিহাস দেখলে এই দেশে এমন কোনো রাজা মহারাজের দেখা মিলবে না যাদের কারোর গায়ে গণহত্যার তকমা নেই। যেখানে ইংরাজ শাসনের অবসান ঘটিয়ে দেশে স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা হলেও গণহত্যার পরম্পরা একইভাবে আজও বজায় আছে যা মাঝে মধ্যেই রাজশক্তির কঙ্কালসার চেহারাকেই তুলে ধরে।বলতে দ্বিধা নেই ভারতীয় রাজনীতিতে এখন গণহত্যার রূপ বদলালেও তার বর্বরতা একই রকমের রয়েছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক দ্বন্ধে অথবা সম্প্রদায় গত সংঘর্ষের ফলে আজও যেভাবে মানুষ হত্যার মিছিল চলে তা কখনো কখনো আমাদের বিবেকের কাছে বড়সর প্রশ্ন তুলে দেয়।মনে হয় আমরা কি সত্যি সেই মধ্যযুগীয় শাসন ব্যবস্থাকে ভুলতে পেরেছি। যেখানে ১৯১৯ এর ১৩ এপ্রিল যদি কলঙ্কিত গণহত্যার দিন হয় তাহলে কেন একইভাবে আগামী ৩০ এপ্রিল আরো একটি গণহত্যার দিন জাতীর লজ্জা হিসাবে ইতিহাসের পাতায় জায়গা পাবে না? ১৯৮২ সালের ৩০ এপ্রিল এই রাজ্যের এক জনবহুল স্হানে প্রকাশ্য দিবালোকে সংঘটিত এক গণহত্যার শিকার হয়েছিলেন আঠারো জন সন্ন্যাসী। আটত্রিশ বছর আগের সেই নৃশংস বর্বর গণহত্যার আজও কোনো বিচার হয়নি। বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কেঁদেছে। একজনও প্রকৃত অপরাধী শাস্তি পায়নি যা আমাদের কাছে এক চরম লজ্জা ও হতাশার বিষয়।