দূরদৃষ্টি

পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রীর কাছে।

নিউজ সারাদিনে দূরদৃষ্টি পাতাটা পাঠকের কলম এর জন্য, পাঠকের নিজস্ব মতামতের জন্য দায়ী নয় নিউজ সারাদিন কর্তৃপক্ষ।

To
The Hon’ble chief minister, Mamata Banerjee,
“NABANNA”
(14th Floor),325,Sarat Chatterjee Road
Shibpur,Haorah
711102
বিষয়ঃ-বিনা অপরাধে কালীনগর ফেরিঘাটে কর্তব্যরত সিভিক ভলান্টিয়ার্স ও ন্যাজাট থানার ডিউটিরত বড়বাবু(O/C),মেজোবাবু এবং অন্যান্য পুলিশ দ্বারা আমার গলার শ্রীকৃষ্ণ নামের মালা ছিঁড়ে দিয়ে পায়ে মাড়িয়ে,আদিবাসী বুনো-জংলী বলে কটূক্তি করে দৈহিক-মানসিকভাবে চরম নিগৃহীত করে,ছয়জন আসামীর সাথে লক আপে দীর্ঘ ৮/১০ঘন্টা ধরে অভুক্ত অবস্থায় আটকে রাখার বিরুদ্ধে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন।….
মাননীয়া মহাশয়া,
আমি শ্রী ভোলানাথ সরদার,(নর্থ মণিপুর স্টেট প্ল্যান এফ. পি.স্কুলের সহশিক্ষক),পিং-শ্রী সত্যবান সরদার। গ্রাম+পোঃ-আতাপুর,থানা-সন্দেশখালী,মহকুমা-বসিরহাট, জেলা-উত্তর ২৪পরগনা।
আমি একজন আদিবাসী “ভূমিজ” সম্রদায়ভুক্ত মানুষ।পেশা-শিক্ষকতা(পাইমারী স্কুল)।বয়স-34বছর।
গত ৭ই মে ২০২০বৃহস্পতিবার লকডাউনের নিয়ম মেনেই মুখে মাস্ক পরে ন্যাজাট ইউনাইটেড ব্যাঙ্কে আমার বিশেষ প্রয়োজনে এবং ATM-এ টাকা তুলতে, সাইকেলে চড়ে সকাল ১০টা দিকে কালীনগর ফেরিঘাটে পৌঁছাই। নৌকায় উঠতে গেলে কর্তব্যরত একজন সিভিক ভলান্টিয়ার আমার পথ আগলে ধমক দিয়ে বলে,”ওপারে যাওয়া যাবেনা।” কিন্তু অবাক হয়ে দেখি কয়েকজন যাত্রী ন্যাজাট পারে যাবার জন্য নৌকায় বসে আছে। আমি বললাম, “আমাকে ব্যাঙ্কের কাজে এবং ATM-এ টাকা তুলতে ন্যাজাটে যেতেই হবে। তাছাড়া অন্যরা যেতে পারলে আমি কেন পারবনা?”তখন ঐ সিভিক কাঁচা খিস্তি করে বলে, “সে কৈফিয়ত তোকে দিতে হবে!” আমি নৌকায় উঠতে গেলে আচমকা সে আমার জামার কলার চেপে সজোরে গালে চড় মারে। এরপর আরও দুজন সিভিক এসে ওরা তিনজনই আমাকে এলোপাতাড়ি চড়-থাপ্পড় মারতে থাকে। আমি প্রতিবাদ করতে গেলে তারা সকলের সামনে টেনে-হিঁচড়ে আমাকে নৌকায় তোলে এবং ঘাড় ধরেই হিড়হিড় করে টানতে টানতে ন্যাজাট থানায় নিয়ে আসে।ডিউটিরত অফিসার(সম্ভবত মেজো বাবু)-এর নিকট আনা হয়।আমি কিছু বলতে চাইলে ওই অফিসার আমাকে ধমক দিয়ে থামিয়ে দেন। তিনি জানতে চান, আমি কেন লম্বা লম্বা চুল রেখেছি,গলায় কিসের মালা, কেন পরেছি।আমি উত্তরে বলি,”আমি শ্রীকৃষ্ণের নামে তুলসির মালা পরেছি এবং ধর্মীয় কারণেই লম্বা চুল রেখেছি।” এবার উনি আমার পরিচয় জানতে চান এবং আমি একজন আদিবাসী পরিচয় জেনেই ওই অফিসার চোখ রাঙিয়ে বিদ্রূপ করে বলেন, “আদিবাসী বুনোর বাচ্চা আবার কৃষ্ণ ভক্ত!”আমি তাঁর কথার তীব্র প্রতিবাদ জানাতেই তিনি চেয়ার ছেড়ে এসে আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে চড়-থাপ্পড় মারতে থাকেন।আমি বলি, “স্যার, আমাকে এভাবে মারবেন না। আমি একজন নার্ভ রোগের পেসেন্ট।” তখন ওই অফিসার বলেন,”লক আপে রুলের বাড়ি খেলে তোর নার্ভ রোগ সেরে যাবে!” ঠিক এই সময় একজন অফিসার ভিতর থেকে বেরিয়ে আসেন।জানতে পারি উনি এ থানার O/C. তাঁকে বলি, “স্যার, আমি একজন শিক্ষক….আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই “বালের শিক্ষক” বলেই O/C সাহেব আমার চুলের মুঠি ধরে চড়-থাপ্পড়-লাথি মারতে থাকেন।এরপর মাননীয় থানার বড়বাবু,মেজোবাবু ও আরও কয়েকজন পুলিশ আমাকে মাটিতে ফেলে,মা-মাসি তুলে ব্যবহার ও শ্রবণ অযোগ্য ভাষায় খিস্তি করতে করতে বেধড়ক মারধর করেন। তারপর টেনে-হিঁচড়ে লাথি মারতে মারতে থানার লক আপে ঢুকিয়ে দেন এবং বড়বাবু পরিচয় দেওয়া ভদ্রলোক হুমকি দিয়ে বলেন,”খানকির ছেলে, রাতেই তোকে চালান দিয়ে দেব!” আমার কোনো কথাই শোনা হ’লনা! চরম বিধ্বস্ত আমি দেখলাম, লক আপে ছয় জন আসামী আগে থেকেই বন্দী আছে। তাদের মাঝখানে আমি চরম অসম্মানিত বোধ করতে থাকি। ইতিমধ্যে জোর করে দুটো কাগজে আমাকে সই করতে বাধ্য করা হয়।… আমার খুব তেষ্টা পায়।করুণভাবে আবেদন করে বলি, “স্যার,আমাকে একটু জল দিন!” মেজো বাবু ধমক দিয়ে বলেন,”খানকির ছেলে মুতে খা!” প্রকৃতির ডাকে আমি বাথরুমে যাই। দেখি, টয়লেট নোংরায় ভর্তি। দুর্গন্ধ!পর্যাপ্ত জলও নেই।…
ফিরে আসি। এরমধ্যে বড়বাবু ও মেজোবাবু সম্ভবত দুপুরের খাবার খেতে এবং বিশ্রাম নিতে বেরিয়ে গেলেন।এদিকে ক্ষিদে-পিপাসায় এবং পুলিশী শারীরিক-মানসিক অত্যাচারে মনে হ’ল এবার আমার জীবন বেরিয়ে যাবে! বিনা অপরাধে আমাকে ৮/১০ঘন্টা লক আপে আটকে রাখা হ’ল।সন্ধ্যা ৬/৭টা দিকে ওই অফিসাররা আবার থানায় ফিরে এলেন। আমি এবার ধৈর্য হারিয়ে উত্তেজিত হয়ে বলতে থাকি,”আমি আপনাদের বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ জানাব!কী ভেবেছেন আপনারা!”…ওরা আবার আমাকে নানা রকম খিস্তি মেরে গালাগালি করতে থাকে।…অবশেষে রাত ৯টার পর আমাকে লক আপ থেকে বার করে মেজোবাবু বলে,”ভাগ শালা ডাকাত সরদার!”…..সুতরাং মহাশয়া,আমার গলার ধর্মীয় প্রতীক তুলসির মালা ছেঁড়ারআদিবাসী জাতি তুলে গালাগালি দেওয়ার* শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার করার এবং বিনা অপরাধে থানার লক আপে আটকে রাখার জন্য ওই দোষী সিভিক ভলান্টিয়ার্স এবং পুলিশ অফিসাররা যাতে অবিলম্বে আইনানুগ কঠোর শাস্তি পায় তার ব্যবস্থা নিতে আবেদন জানাই।
ইতি-
বিনীত-
ভোলানাথ সরদার।
তারিখ–12.05.2020
ফরোয়ার্ড কপি টুঃ-১়)মাননীয়ডি.এম.(উত্তর ২৪পরগনা)
২)মাননীয়এস.পি.(উত্তর ২৪পরগনা)
৩)মাননীয়এস.ডি.পি.ও.(বসিরহাট)
৪)মাননীয় সি.আই.(হানাবাদ)
৫)মাননীয় পার্থ চট্টোপাধ্যায়, স্কুল শিক্ষামন্ত্রী(পশ্চিমবঙ্গ সরকার)
৬)মাননীয় সভাপতি-এ.পি.ডি.আর.(পঃবঃ)
৭)মাননীয় মৃত্যুঞ্জয় মল্লিক (সর্বভারতীয় এস.সি/এস.টি/অ.বি.সি.সংগঠনের সভাপতি)
৮)মাননীয় সুবল চন্দ্র সরদার(সভাপতি-সংগ্রামী আদিবাসী মঞ্চ,বারাসাত)….

Related Articles

Back to top button