মতামত

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্বের একজন অন্যতম কবি ও সাহিত্যিক

মৃত্যুঞ্জয় সরদার:আজ ২৫ শে বৈশাখ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদি ন।রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোট বেলার কথা লিখতে বসে , আমার ছোটবেলার দিনগুলো মনে পড়ে গেল।কথাগুলো না লিখলে হয়তো, লেখাটি মনোযোগ শক্তি হারিয়ে ফেলবো।ছোটবেলার স্মৃতি কথাগুলো লিখতে বাধ্য নয়, কিন্তু না লিখলে, এই লেখা টি কিছুটা অসম্পূর্ণ থেকে যেতে পারে। মাত্র বছর তিনেক বয়স আমার, কোনরকম কথা বলতে শিখেছি। আমার দিদির বয়স তখন ছয় বছর, দিদি হেদিয়ার অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয় ভর্তি হয়েছে।দিদির স্কুলে যাওয়া দেখে, তার পিছু পিছু আমি তার সঙ্গে স্কুলে যাওয়া শুরু করেছিলাম।মাস্টারমশাই বাধ্য হয়ে আমার বাড়িতে খবর পাঠিয়েছিল ,এত ছোট বাচ্চাকে কেন স্কুলে পাঠাচ্ছেন।মাস্টার মশাই আমাকে তাও স্কুলে যাওয়া আটকাতে পারিনি।বাধ্য হয়ে আমাকে স্কুলে ভর্তি নিয়েছিলেন স্কুলের হেডমাস্টার মহাশয়।কারণ কি জানতেন মাস্টারমশাই, আমার বাড়ির গুরুজনরা প্রভাবশালী ব্যক্তি ছিল এই এলাকার। সেই থেকে আমার স্কুলের যাত্রাপথ শুরু হল,আর সহজ পাঠ পড়ার সময়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্পর্কে আমি জানতে পারলাম। তবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে লিখলে তা শেষ হবেনা, তবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিনে রবি গুরুর কথা লিখতে বসে বহু পত্রপত্রিকার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে এই লেখাতে।খুব ছোটবেলা থেকেই শিক্ষাপর্ব শুরু হয়েছিল রবি ঠাকুরের। রবির মতো উজ্জ্বল যার মেধা তিনি কিন্তু পড়ালেখায় তেমন মনোযোগী ছিলেন না। তোমাদের কারও কারও যেমন পড়তে বসলেই ঘুম পায় এই মানুষটিরও তেমনি পড়তে বসলেই ঘুম পেত। তিনি এ বিষয়ে লিখেছেন, ‘মাস্টারমশায় মিটমিটে আলোয় পড়াতেন প্যারী সরকারের ফার্স্টবুক। প্রথমে উঠত হাই, তার পর আসত ঘুম, তার পর চলত চোখ-রগড়ানি’। সেই পড়ার আসরে তারই সহপাঠী সতীনেরও ঘুম পেতো। সে অবশ্য ভালো ছেলেটি হয়ে ঘুম তাড়ানোর জন্য চোখে নস্যি ঘষতো। আর রবীন্দ্রনাথ রাত নয়টা বাজতে না বাজতেই ঘুমের ঘোরে ঢুলু ঢুলু চোখে মায়ের কাছে যেতেন। বাহির বাড়িতে পড়তে বসেন তিনি। ভিতর বাড়িতে যাওযার সময় সরু পথে ছিলো ভূতের ভয়। এটা মনে করে তার পিঠ উঠতো শিউরে। সে সময় নাকি ভূত প্রেত ছিল গল্পে-গুজবে। এমন কী মানুষের মনের আনাচে-কানাচেও ছিল তাদের আনাগোনা। তবেই মায়ের কাছে গেলে সেই ঘুম কোথায় পালিয়ে যেত! নেশা ছিলো ভূতের গল্প শোনার। এজন্য ভূতের ভয় শিরদাঁড়ার উপর চাপিয়ে যখনই যেতেন বাড়ির ভিতরে, মায়ের ঘরে। সেখানে গিয়েও মায়ের সঙ্গে শুরু করতেন দস্যিপনা। মা বিরক্তি নিয়ে বলতেন, ‘জ্বালাতন করলে, যাও খুড়ি, ওদের গল্প শোনাও গে।’ এরপর বাইরের বারান্দায় ঘটির জলে পা ধুয়ে দিদিমাকে টেনে নিয়ে বিছানায় উঠতেন। সেখানে শুরু হতো দৈত্যপুরী থেকে রাজকন্যার ঘুম ভাঙিয়ে আনার পালা। রাজকন্যা যখন রাজপুত্রের ঘোড়ায় উঠে বসবে ঠিক তখনই ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে যেত ছোট্ট রবি। এসব যাই হোক না কেন ছোটবেলায় রবির স্বাস্থ্য ছিলো বেশ। তিনি পরিমাণে কম খেতেন। খাবার নিয়ে তোমাদের মতো এতো বাছ-বিচারও ছিলো না তার। তবুও তিনি কখনো কাহিল হননি। তার সমবয়সীরা যারা অনেক খেতো, তাদের চেয়ে রবির গায়ে জোর ছিলো ঢের বেশি। তিনি তার স্বাস্থ্য প্রসঙ্গে  লিখেছেন, ‘শরীর এত বিশ্রী রকমের ভালো ছিল যে, ইস্কুল পালাবার ঝোঁক যখন হয়রান করে দিত তখনও শরীরে কোনোরকম জুলুমের জোরেও ব্যামো ঘটাতে পারতুম না।’ এই বাক্য পড়ে হয়তো ভাবছো তাহলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো এমন একজন গুণীজনও স্কুল পালাতেন নাকি? হুম্ একদম ঠিক কথা। স্কুলে তার মন ছিলো না। আর যাতে স্কুল না যেতে হয়, সেজন্য মাঝেমাঝেই স্কুলের জুতো ভিজাতেন পানিতে আর ভিজা জুতা নিয়েই সারাদিন ঘুরতেন যাতে সর্দি লাগে রাতে। এছাড়া চুল জামা ভেজানোর জন্য কার্তিক মাসে খোলা ছাদে শুয়ে থেকেছেন কত, যাতে গলায় একটু খুসখুসানি কাশি হয়। আবার পেট-কামড়ানি বা বদহজমের জন্য তাগিদ অনুভব করলেও সেটা বুঝতেও পারে নি তার পেটে। এতে তিনি রণেভঙ্গ দেন নি। বরং কোনদিন ছুটির তাদাগা অনুভব করলেই মায়ের আঁচলের নিচে গিয়ে লুকাতেন। তার মাও ছিলেন পক্ষে। এখনকার মায়েদের মতো গোল করতেন না ছেলের সঙ্গে। বরং তিনি ছেলের হয়ে কাউকে ডেকে বলতেন, ‘আচ্ছা যা, মাস্টারকে জানিয়ে দে, আজ আর পড়াতে হবে না।’অন্যদিকে কৈশোরের রবীন্দ্রনাথ একা থাকতেই ভালোবাসতেন। এই একাকী সময়গুলো কাটতো তাদের বাড়ির চিলেকোঠায়। সবাই যখন নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত তখন তিনি চুপিচুপি ছাদে যেতেন। রবির ভাষ্য, ‘তখন ঐ ছাদে যাওয়া ছিল আমার সাত-সমুদ্দুর-পারে যাওয়ার আনন্দ। চিরদিনের নীচতলার বারান্দায় বসে বসে রেলিঙের ফাঁক দিয়ে দেখে এসেছি রাস্তার লোক-চলাচল; কিন্তু ঐ ছাদের উপর যাওয়া লোকবসতির পিল্পেগাড়ি পেরিয়ে যাওয়া। ওখানে গেলে কলকাতার মাথার উপর দিয়ে পা ফেলে ফেলে মন চলে যায় যেখানে আকাশের শেষ নীল মিশে গেছে পৃথিবীর শেষ সবুজে। নানা বাড়ির নানা গড়নের উঁচুনিচু ছাদ চোখে ঠেকে, মধ্যে মধ্যে দেখা যায় গাছের ঝাঁকড়া মাথা। আমি লুকিয়ে ছাদে উঠতুম প্রায়ই দুপুর বেলায়। বরাবর এই দুপুর বেলাটা নিয়েছে আমার মন ভুলিয়ে। ও যেন দিনের বেলাকার রাত্তির, বালক সন্ন্যাসীর বিবাগি হয়ে যাবার সময়। খড়খড়ির ভিতর দিয়ে হাত গলিয়ে ঘরের ছিট্কিনি দিতুম খুলে। দরজার ঠিক সামনেই ছিল একটা সোফা; সেইখানে অত্যন্ত একলা হয়ে বসতুম।’ এমনটা আমাদের অনেকের জীবনে ঘটে? কিন্তু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোটবেলা টা সবার জীবনে থেকে একটু আলাদা ,আর তাই ভগবান তাকে দিয়ে ছোট থেকেই শুরু করেছিলেন ভাবের বহিঃপ্রকাশ বা কবিতা মনের কথা তুলে ধরা । সেই থেকেই মাত্র আট বছর বয়স থেকেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কবিতা লেখা শুরু করেছিলেন ।।বিখ্যাত সিনেমা পরিচালক সত্যজিৎ রায়, রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যিক কর্মকান্ডে বিশেষভাবে প্রভাবিত হন ।“পথের পাঁচালী” সিনেমায় পরিচিত সেই ট্রেনের দৃশ্য, আসলে কবিগুরু রচিত “চোখের বালিতে” বর্ণিত একটা ঘটনার থেকে অনুপ্রাণিত ছিলো ।রবীন্দ্রনাথ একজন মহান সুরকারও ছিলেন।তিনি প্রায় দুই হাজারেরও বেশি গান নিজে রচনা করেছিলেন ।তিনি চিরাচরিত শিক্ষা ব্যবস্থাকে একদম তুচ্ছ মনে করতেন এবং সেই চিরাচরিত শিক্ষার অধীনে থেকে পড়তে ভালোবাসতেন না । ভারতীয় সাহিত্য ও কলায় বিপ্লবের উদ্দেশ্যে, বাংলায় নবজাগরণ আন্দোলন শুরু করেছিলেন ।তিনিতাঁর সাথে পৃথিবী বিখ্যাত জার্মান বৈজ্ঞানিক আলবার্ট আইনস্টাইনের গভীর সম্পর্ক ছিলো এবং দুজনেই সেইসময় নোবেল পুরস্কার জয়ের পর একে অপরের প্রশংসাও করেন ।ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী কলকাতার এক ধনাঢ্য সংস্কৃতিবান পিরালি ব্রাহ্মণ পরিবারে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম হয় ৭ই মে ১৮৬১ সালে, পশ্চিমবঙ্গের কোলকাতা শহরে অবস্থিত জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে ।তাঁর বাবার নাম ছিলো মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, যিনি কিনা ব্রাহ্মসমাজের একজন ধর্মগুরু ছিলেন এবং তাঁর মায়ের ছিলো নাম সারদাসুন্দরী দেবী ।রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মায়ের ১৪তম সন্তান ছিলেন । তাঁর সকল ভাই ও বোনদের নাম ছিলো যথাক্রমে- দ্বিজেন্দ্রনাথ, গণেন্দ্রনাথ, সত্যেন্দ্রনাথ, হেমেন্দ্রনাথ, বীরেন্দ্র, সৌদামিনি, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ, সুকুমারী, পুনেন্দ্র, শরৎকুমারী, বার্ণকুমারী, সোমেন্দ্র, বুধেন্দ্র ও গগেন্দ্রনাথ।সেই হিসেবে ১৫ জন ভাইবোনের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ ছিলেন কনিষ্ঠতম অগ্রজ। রবীন্দ্রনাথ সুস্থ-সবল ও দীর্ঘায়ু সম্পন্ন হলেও তাঁর অনেক ভাই-ই ছিলেন অসুস্থ, মস্তিস্ক বিকৃত ও স্বল্পায়ুর অধিকারী। দেশভ্রমণের নেশায় রবীন্দ্রনাথের পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর উত্তর ভারত, ইংল্যান্ডসহ বছরের অধিকাংশ সময় কলকাতার বাইরে কাটাতেন। এ কারণে তিনি
১.দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮১৭-১৯০৫)
২. রাজা রাম মোহন রায় (১৭৭২-১৮৩৩)
৩.সারদা দেবী (১৮২৪-৭৫)
জীবনের প্রথম দশটি বছর পিতার সাথে পরিচিত হবার সুযোগ পাননি। ধনাঢ্য পরিবারে জন্ম নিলেও পিতামাতার  ভালোবাসায় অতিবাহিত হয়নি তাঁর শৈশব। তাইতো ভৃত্যদের কড়া অনুশাসনে কাটাতে হয়েছিল ছেলেবেলা। রবীন্দ্রনাথসহ অন্য সব শিশু-বালকের দিন কাটত জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির বাইরে দোতলায় দক্ষিণ-পূর্ব কোণের ঘরটিতে।রবীন্দ্রনাথের ভাইবোনেরা তাঁকে আদর করে রবি বলে ডাকতেন। উজ্জ্বল বর্ণের শিশুদের সবাই একটু বেশিই পছন্দ করে। এটা মানুষের স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য। রবীন্দ্রনাথ তাঁর অন্যান্য সহোদরদের তুলনায় অতটা উজ্জ্বল চেহারার অধিকারী ছিলেন না। তাঁর বড় দিদি সৌদামিনী দেবী তাঁকে উদ্দেশ্য করে প্রায়ই বলতেন, আমার রবি শ্যাম বর্ণের হতে পারে, কিন্তু জ্ঞান-গরিমার উজ্জ্বলতায় সে অন্য সবাইকে ছাড়িয়ে যাবে। তবে ১৮৭৫ সালে যখন রবীন্দ্রনাথের মাত্র চোদ্দ বছর বয়স, তখন তাঁর মায়ের অবশেষে মৃত্যু ঘটে ।স্ত্রীয়ের মৃত্যুর পর দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরও বেশি জোড়াসাঁকোর বাড়িতে থাকতেন না।দেশভ্রমণের নেশায়, বছরের অধিকাংশ সময়ই কলকাতার বাইরে তিনি অতিবাহিত করতেন ।এরফলেই ছোট্ট রবীন্দ্রনাথের শৈশব জীবন, ভৃত্যদের অনুশাসনে কেটেছিলো ।বিভিন্ন স্কুলে কিছুদিনের জন্য পড়াশোনা করেন । যেই স্কুলগুলোর নাম ছিলো যথাক্রমে- ওরিয়েন্টাল সেমিনারি, নর্ম্যাল স্কুল, বেঙ্গল অ্যাকাডেমি এবং সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজিয়েট ।কিন্তু এতগুলো নামী স্কুলে পড়ার পরেও, তিনি কোনো স্কুলে বেশিদিন টিকতে পারেননি ।এর পিছনে অবশ্য প্রধান কারণ ছিলো তাঁর স্কুল শিক্ষার প্রতি অনীহা । জানা যায়, স্কুলের চার দেওয়ালের বদ্ধ পরিবেশে ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ানোর এই রীতি তাঁকে মোটেই পড়াশোনা শেখার প্রতি আকৃষ্ট করতো না ।এইজন্যই পরে, বাড়ির খোলা পরিবেশে পড়ানোর জন্য গৃহশিক্ষক রেখে তাঁর শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছিলো ।তাঁর এই অদ্ভুত আচরণের উদ্ভব হয়, তাঁর প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা থেকেই।শোনা যায়, ছেলেবেলায় জোড়াসাঁকোর বাড়িতে অথবা বোলপুর ও পানিহাটির বাগানবাড়িতেও প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে ঘুরে বেড়াতে তিনি বেশি স্বচ্ছন্দবোধ করতেন । ১৮৭৮ সালে ব্যারিস্টারি পড়ার উদ্দেশ্যে ইংল্যান্ডে যান রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর । সেখানে ব্রাইটনের একটি পাবলিক স্কুলেও ভর্তি হন তিনি ।তারপর ১৮৭৯ সালে ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনে আইন নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন কিন্তু সাহিত্যচর্চার প্রতি আকর্ষণের কারণে তিনি সেই পড়াশোনা আর শেষ করতে পারেননি ।ইংল্যান্ড থেকে দেশে ফিরে আশার পর, অবশেষে ১৮৮৩ সালে ৯ই ডিসেম্বর তারিখে রবীন্দ্রনাথের বিয়ে হয় বেণীমাধব রায়চৌধুরী নামে ঠাকুরবাড়ির এক অধস্তন কর্মচারীর কন্যা ভবতারিণীর সঙ্গে । বিয়ের সময় ভবতারিণীর পুণরায় নামকরণ করা হয় এবং তাঁর নাম পাল্টে রাখা হয় মৃণালিনী দেবী ।মানুষ জীবনে ভাগ্যের কি পরিহাস শেষ জীবন পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্ত্রী বিয়োগ িহন।মৃণালিনী দেবী ও রবীন্দ্রনাথের মোট পাঁচ সন্তান হয় ।তাঁদের নাম যথাক্রমে ছিলো- মাধুরীলতা (১৮৮৬–১৯১৮), রথীন্দ্রনাথ (১৮৮৮–১৯৬১),  রেণুকা (১৮৯১–১৯০৩),  মীরা (১৮৯৪–১৯৬৯) এবং শমীন্দ্রনাথ (১৮৯৬–১৯০৭) ।|রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনে সুখ দুঃখের পাশাপাশি বিদেশ ভবন হয়েছিল।জীবনাবস্থায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মোট ১২বার বিদেশ ভ্রমণ করেন । তিনি মোট পাঁচটি মহাদেশের ত্রিশটিরও বেশি দেশ ভ্রমণ করেন ১৮৭৮ থেকে ১৯৩২ সালের মধ্যে ।১৯২০ থেকে ১৯২১ সাল নাগাদ আবার ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরে যান তিনি । ১৯২৪ সালে রবীন্দ্রনাথ যান চীন সফরে, তারপর সেখান থেকে জাপানে গিয়ে সেখানে জাতীয়তাবাদ বিরোধী বক্তৃতা দেন ।|অন্যদিকে সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, রবীন্দ্রনাথ সহ তাঁর চার সঙ্গীকে নিয়ে  দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া সফরে গেছিলেন ১৯২৭ সালে ।তারপর তিনি একে একে ভ্রমণ করেন সুইজারল্যান্ড,  সোভিয়েত রাশিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জার্মানি, ইরাক ও পারস্য প্রভৃতি দেশে ।১৯৩৪ সালে শ্রীলঙ্কা যাত্রাই ছিলো কবিগুরুর শেষে বিদেশ যাত্রা ।বিদেশ ভ্রমণের আগেই ভারতবর্ষের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম প্রচার হয়েছে সাহিত্যিক ও কবি হিসাবে।রবীন্দ্রনাথ আজ সারাবিশ্বের চর্চার বিষয়ে, রবীন্দ্রনাথ কে বাদ দিয়ে বাংলা সাহিত্য কথা ভাবতে পারবে না বিশ্বজুড়ে মানুষ। বাঙালিরা ও খ্যাতি পেয়েছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সাহিত্য জগতের বড় এক উদাহরণ। ছোটবেলা থেকে অর্থের অভাব ছিল না, কিন্তু নানা সুখ দুঃখের মধ্যে তার জীবনে বড় হতে হয়েছিল। তাই ঈশ্বর তাকে শ্রেষ্ঠ কবি উপাধি দিয়ে গেছিলেন।ভারতী পত্রিকায় ১৮৭৭ সালে, মাত্র ১৬ বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথ কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ রচনা প্রকাশ করেন ।সেগুলো ছিলো ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী, মেঘনাদবধ কাব্যের সমালোচনা আর ভিখারিণী ও করুণা নামে দুটো সুন্দর ছোটগল্প | এগুলোর মধ্যে ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী সবচেয়ে জনপ্রিয়তা পায় ।অন্যদিকে ১৮৭৮ সালে প্রকাশিত হয় রবীন্দ্রনাথের প্রথম কাব্যগ্রন্থ “কবিকাহিনী” । এছাড়াও পরে তিনি রচনা করেছিলেন “সন্ধ্যাসংগীত” নামক আরেকটি কাব্যগ্রন্থ । “নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ” নামে লেখা তাঁর সেই বিখ্যাত কবিতা এই কাব্যগ্রন্থেরই অন্তর্গত ছিলো ।এরপর একে একে “সন্ধ্যাসংগীত” কাব্যগ্রন্থ রচনার পর তিনি  প্রভাতসংগীত,  মানসী (১৮৯০),  সোনার তরী (১৮৯৪),  চিত্রা (১৮৯৬), চৈতালি (১৮৯৬), কল্পনা (১৯০০) ও ক্ষণিকা (১৯০০), নৈবেদ্য (১৯০১),  খেয়া (১৯০৬), গীতাঞ্জলী (১৯১০), গীতিমাল্য (১৯১৪) ও গীতালি (১৯১৪), বলাকা (১৯১৬), শ্যামলী (১৯৩৬) প্রভৃতি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করেন ।|তবে সর্বাপেক্ষা সুপরিচিত গ্রন্থ হল গীতাঞ্জলী (Song Offerings), যেটার জন্য তিনি সারা বিশ্বে বিশাল জনপ্রিয়তা পান | আর এই কাব্যগ্রন্থের জন্যই তিনি ১৯১৩ সালে নোবেল পুরস্কারও অর্জন করেছিলেন ।তিনি ছিলেন এমন একজন প্রতিভাবান সাহিত্যিক যাঁর হাতেই বাংলা প্রবন্ধ, রচনা, কবিতা, ছোটগল্পের বিপুল প্রসার ঘটে । তাঁর এইসব সাহিত্যকর্মের মাধ্যমে তৎকালীন সমাজ, রাষ্ট্রনীতি, ধর্ম, সাহিত্যতত্ত্ব, ইতিহাস, ভাষাতত্ত্ব, ছন্দ, সংগীত ইত্যাদি নানা বিষয় সম্পর্কে স্পষ্টভাবে ধারণা পাওয়া যায় ।|তিনি কিন্তু শুধু কবিতা, গান, নাটক, ছোটগল্প কিংবা উপন্যাস লেখার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলেন না । বিভিন্ন জীবনীমূলক ও ভ্রমণ কাহিণী লেখাতেও তিনি ছিলেন সমানভাবে পটু । তাঁর বিখ্যাত কিছু আত্মকথামূলক গ্রন্থ হলো – জীবনস্মৃতি (১৯১২), ছেলেবেলা (১৯৪০) ও আত্মপরিচয় (১৯৪৩)|
মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর অনেক বছর আগে বোলপুরের শান্তিনিকেতনে, এক বিশাল জমি কেনেন ।সেখানে তিনি ১৮৮৮ সালে একটা আশ্রম ও ১৮৯১ সালে একটা ব্রহ্মমন্দির প্রতিষ্ঠা করেন |বাবার সেই কেনা জমিতে রবীন্দ্রনাথ একটা শিক্ষাকেন্দ্র তৈরী করতে চেয়েছিলেন । তাই প্রথমে তিনি সেখানে প্রতিষ্ঠা করেন “পাঠ্য ভবন” নামে একটা স্কুল, যেটা বাকি সব স্কুলের থেকে বেশ আলাদা ছিলো । কারণ সেই স্কুল ছিলো সম্পূর্ণ খোলা আকাশের নীচে একটা গাছের তলায় ।|সমাজের পিছিয়ে পরা মানুষদের শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে তিনি আবার ১৯২৪ সালে আরেকটি শিক্ষাকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠা করেন যেটা ছিলো “শিক্ষা সত্র” ।তিনি এই প্রতিষ্ঠান মাত্র ৭ জন শিক্ষার্থীকে নিয়ে শুরু করেছিলেন ১৯১৩ সালে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর তিনি সেই স্কুলকে আরো বিস্তৃত করার উদ্দেশ্যে সেটাকে একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করেন ।যেটার পরবর্তীকালে নাম রাখেন তিনি “বিশ্বভারতী” যা ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় ।তবে
জীবনের শেষ কিছু বছর কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ধারাবাহিক ভাবে শারীরিক অসুস্থতার শিকার হন | রোগ যেন তাঁকে কিছুতেই ছাড়তেই চাইছিলো না | দুবার তো তিনি এমন অসুস্থ হন, যারজন্য তাঁকে বহুদিন বিছানায় শয্যাশায়ী অবস্থায় পরে থাকতে হয় |জানা যায় ১৯৩৭ সালে কবি একবার অচৈতন্য হয়ে গিয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থার শিকার হন | যদিও তিনি সেইসময় সেবার মাধ্যমে সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন ঠিকই কিন্তু ১৯৪০ সালে আবার গুরুতর অসুস্থ হওয়ার পর তিনি আর সেরে উঠতে পারেননি |
অবশেষে দীর্ঘ রোগভোগের পর ১৯৪১ সালের ৭ই আগস্ট তারিখে, জোড়াসাঁকোর বাসভবনেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি | মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স হয়েছিলো প্রায় ৮০ বছর |

Related Articles

Back to top button