মতামত

শুনসান রাস্তায় শুধু শশ্মানে র নিস্তব্ধতা,বিরাজ করছে এক অজানা ভয়।


শুভাশিস ঘোষ—বুধবারের বিকাল, সাধারণ দিনে এই সময় আর জি কর হাসপাতালের সামনে পা ফেলার জায়গা থাকে না। বিশেষ করে এমার্জেন্সি বিভাগ ও ওয়ার্ডের ভিজিটরদের থিক থিকে মানুষের ভীরে সর্বত্র কোলাহল বিরাজ করে।অথচ আজ এই সময় সেখানে নেই কোন প্রাণের স্পন্দন।এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কিছু পেসেন্ট পার্টির আর ইতস্তত স্বাস্থ্য কর্মীদের ঘোরাফেরা।দেখে মনে হবে যেন অনির্দিষ্টকালের জন্য কার্ফু চলছে । যেখানে প্রতি বন্ধে যেমন রাস্তার ধারে কিংবা ফুটপাতে চায়ের দোকানে আড্ডা দেখা যায় এক্ষেত্রে সেটাও একদম হাতে গোনা।এক কথায় শুনসান রাস্তায় কিছু বাইক আর চার চাকার লাইট ভেইকেলস।যার বেশিটাই এসেন্সিয়াল সার্ভিস এর স্টীকার সাঁটা। ওষুধের দোকানে দাঁড়িয়ে ছিলাম ওষুধ কিনবো বলে । পাশ থেকে এক ভদ্রলোক একদম ঘারের উপর মুখ এনে জিজ্ঞেস করলো “আমাকে একটা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দেবেন?” সোস্যাল ডিসটেন্সিং যে আজও অধরা সেটা এখানে দাঁড়িয়েই বুঝতে পারলাম।বিকাল ৫ টায় যে আর জি কর হাসপাতালের ফেয়ার প্রাইস শোপে এই সময় পা ফেলার জায়গা থাকে না এখন সেখানে মাছি উড়ছে।তা সত্বেও মানুষের এত হুড়োহুড়ি কেন? বিরক্তি মাখা মুখে প্রশ্ন করতেই ভদ্রলোক লাফিয়ে পড়ার মত করে দু পা পিছিয়ে একগাল হেসে বললেন,”স্যরি দাদা,স্যরি”।বাঙালির মুখে অত্যন্ত সহজলভ্য এই শব্দটি কীভাবে প্রতি দিন বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহার হচ্ছে সেটা নিয়ে যে কেউ রিসার্চ করতে পারেন। ওষুধ নিয়ে দোকান থেকে বেরিয়ে দেখলাম ডাব্লিউ বি এস টির তিন চারটা বাস হাসপাতাল স্বাস্থ্য কর্মীদেরকে নিয়ে তাদের গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে আছে। দ্বিতীয় অর্থাৎ নাইট সিফট চালু হবে। যেখানে সরকারি স্বাস্থ্য কর্মীদের পরিবহনের এই সুবিধাটি রাজ্য সরকার ঠিকমতো করতে না পারলে পরিস্থিতি আরও কতটা জটিল হতো তা সহজেই অনুমেয়। বিকেলের এই সময় কোলকাতার এই শুনসান পথঘাটের ছবি খানিকটা যেন আমাদের আধুনিক সভ্যতার কঙ্কালসার চেহারাকেই তুলে ধরেছে। কোথায় যেন একটা অদৃশ্য ভয়ের পরিবেশ আজ গোটা শহরে বিরাজমান।ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছে আজ আমাদের আধুনিক প্রযুক্তির সব অহংকার কে। বরং বলা যায় পথঘাটের আজ এই ছবি বলে দিচ্ছে কোথাও যেন মৃত্যু ভয়ে তটস্থ আমরা।কারা যেন বলতো ভারত আজ পৃথিবীর বুকে সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্র আধুনিক সমরাস্ত্রে? আমাদের বিজ্ঞানীরা চন্দ্রে যান পাঠায়।আমরা নাকি ভুমি থেকে ভুমি এমন মিশাইল আবিস্কার করেছি যে ক্ষেপণাস্ত্রের আওতায় চীনের বেজিং শহর পড়ে যায়। কয়েক ঘন্টায় চীনের রাজধানীকে ধ্বংস করে দিতে পারি আমরা। এতদিন রাফেল হেলিকপ্টার কেনা নিয়ে অনেক তর্ক বিতর্ক দেখেছি। দুর্নীতির গন্ধ পেয়েছি, আবার সেটাকেই খারিজ করে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ও দেখেছি।বলতে দ্বিধা নেই আজকের পরিস্থিতিতে এইসব বিষয়ে এতদিন আমাদের ছটফটানিটা যে মুর্খতার শামিল ছিল তা বলাই বাহুল্য। এব্যাপারে নামী অভিনেতা নানা পাটেকারের একটা ডায়লগ আজ অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক মনে হবে,”এক মোচ্ছার আদমী কো হিজরা বানা দিয়া”।বলতে গেলে চীন আজ এমনটাই করে দিয়েছে।গোটা বিশ্বকে ঘরবন্দী করতে যে অদৃশ্য মারণাস্ত্রের প্রয়োগ ঘটিয়েছে তা কে রোখার যে কোনো বিকল্প উপায় বিশ্বের হাতে নেই তা বলাই বাহুল্য। এমনকি সুপার পাওয়ার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও আজ দিশে হারা। এপর্যন্ত দেড় লাখ মানুষ সে দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে প্রায় পনেরো হাজার মানুষের সেদেশে মৃত্যু হয়েছে।যাই অঙ্কটা গোটা বিশ্বের বুকে প্রায় এক লাখ ছুঁই ছুঁই।আর এই সময় আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল ট্রাম্পের মেজাজটা হঠাৎ বিগরে গেছে বলা যায়, করোনা ভাইরাসের প্রতিষেধক হিসেবে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন না পেয়ে ভারতকে প্রয়োজনে সবখ শেখানোর হুমকিও দিয়েছেন।মনে হচ্ছে এই বিপর্যয় সহজে মেটার নয় কারণ করোনার প্রতিষেধক বার করতে এখনো বহু সময় লাগবে।এমনটাই বিশেষজ্ঞরা বলছেন।যার ব্যাপ্তি ইতিমধ্যেই আমাদের দেশের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে যে এক বিরাট ক্ষতিসাধন করবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।বলাই যায় লক ডাউনের এই অভিশাপ যদি আরও দিন পনেরো চলে তাহলে দেশের এক বিরাট সংখ্যক মানুষ অভুক্ত অবস্থায় মৃত্যু বরন করবে।যাকে রোখার বিকল্প ভারতের বর্তমান মেদহীন কেন্দ্রীয় সরকারের আছে বলে মনে হয়না।

Related Articles

Back to top button