শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব শিকেয় উঠছে ত্রাণ শিবির, এমনি অভিযোগ করেছেন_ উওর কলকাতার বিজেপি সভাপতি কিশোর কর !
ঝুম্পা দেবনাথ,উওর ২৪ পরগনা: করোনার প্রভাবে রাজ্যবাসী আজ বিপর্যস্ত। জেলায় জেলায় অনাহার অরাজকতার চিত্র বৈদ্যুতিন সংবাদের মাধ্যমে সকলের কাছে বারবার পৌঁছে গেছে। ঠিক অনুরূপ ভাবেই উওর ২৪ পরগনার বিভিন্ন ওয়ার্ডেও এই চরিত্রের ব্যতিক্রম ঘটেনি। করোনার আতঙ্কের কালো ছায়া যখন মানুষের মনে গ্ৰাস করেছে, ঠিক সেই সময় পানিহাটির ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন তৃণমূলের পৌর প্রতিনিধি জয়ন্ত দাস তথা গোবিন্দদাসের বিশৃঙ্খলাময় কার্যকলাপের সাক্ষী হন পানিহাটিবাসী ।কাউন্সিলর জয়ন্ত দাস ও তাঁর অনুগামীরা গভীর রাতে মদ্যক অবস্থায় জয়ন্ত দাস সোদপুর ট্রাফিক মোড়ে পিয়ারলেস নগরে হামলা চালান,সেখানকার নিরাপত্তারক্ষী দেরকে মারধর করেন, চিৎকার- চেঁচামেচিতে আবাসনের লোকেরা বেরিয়ে পড়লে তাঁরা সেখান থেকে চলে যান,এরপর তাঁরা যান এঙ্গেলস কলোনিতে প্রোমোটার এবং বিল্ডার্সের ব্যবসায়ী সায়নী বিল্ডার্সের মালিক রঞ্জন পালের বাড়িতে হামলা চালান,তার গাড়ি ভাঙচুর করেন, বাড়ির মেইন দরজা ভেঙে দেন এবং তার ভাইয়ের স্ক্র্যাপের ব্যবসা তার ঘুন্টিঘর ভেঙে আগুন ধরিয়ে দেন বলে এমনই অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। তারপর ভোরবেলা খড়দা থানার পুলিশ তাঁকে গ্ৰেপ্তার করেন। তৃণমূলের প্রাক্তন কাউন্সিলর জয়ন্ত দাসের বিরুদ্ধে ১৮৮ নম্বর ধারা অনুযায়ী লকডাউন ভাঙ্গা অভিযোগ, ২৬৯ নম্বর ধারা অনুযায়ী ভাঙচুর করা, ৪৩৬ অগ্নিসংযোগ করা, ৪২৭ প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া, ৫১ ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যাক্ট এই সমস্ত ধারায় মামলা রুজু করা হয়।এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পানিহাটি কেন্দ্রের বিধায়ক নির্মল ঘোষ জানান, কয়েকজন দুষ্কৃতী গভীর রাতে জয়ন্ত দাসের নাম ধরা চেঁচামেচি করেন এবং দুই দলের মধ্যে হাতাহাতি হয়। তাঁর দাবি এই গোষ্ঠীকোন্দলের মূলে রয়েছে বিজেপি। অপরদিকে উওর কলকাতার বিজেপির সভাপতি কিশোর কর জানান, এই ঘটনাটি সম্পূর্ণ তৃণমূলের অন্তদ্বন্দের বহিঃপ্রকাশ। এই গোষ্টীকোন্দলে বিজেপিদের কোন ইন্ধন ছিল না। পানিহাটি অঞ্চলে যেমন গোষ্ঠীকোন্দলের ঘটনা দেখা যায়, তেমনি কামারহাটি অঞ্চলে ২৯ নম্বর ওয়ার্ডেও ত্রাণ বিলিকে কেন্দ্র করে এক বিশৃঙ্খলার চিত্র ধরা পড়ে। কামারহাটির ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের স্থানীয় ২১ বছর বয়সী সৌমেন দাস নামক এক যুবক নিজ ইচ্ছায় ত্রাণের আয়োজন করেছিলেন। কামারহাটির ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রূপালি সরকারের দাবি , কাউন্সিলর থাকতে ওই যুবক কেন ত্রাণের আয়োজন করেছেন?এই নিয়ে বচসা বাঁধলে সৌমেন দাস নামক ওই তরুণকে কাউন্সিলর রূপালি সরকার ও তাঁর সহকারীরা মারধর করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সৌমেন দাসকে গুরুতর অবস্থায় আরজি কর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাছাড়াও সৌমেন দাসের মা অনিতা দাসের দাবি, সৌমেন নিজ ইচ্ছায় ত্রাণ বিলি করছে দেখে কাউন্সিলর রূপালি সরকার রেগে যান এবং এই মহিলা কাউন্সিল ও তাঁর অনুগামীরা ইট, রড সহযোগে মারধর করেন এবং এই কাউন্সিলর সৌমেনের চুলের মুঠি ধরে মারধর করেন এবং সৌমেন দাসের বাড়ি ভাঙচুর চলান ওই মহিলা কাউন্সিলরের অনুগামীরা। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে কাউন্সিলর রূপালি সরকার জানিয়েছেন, তিনি মারধরের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। ত্রাণ বিলি নিয়ে এই ঘটনা তিনি খতিয়ে দেখবেন। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেন উওর কলকাতার বিজেপি সভাপতি কিশোর কর। তাঁর দাবি, তৃণমূলের মূল লক্ষ্যই হল প্রচার। মানুষের জীবনকে এই দল কখনোই প্রাধান্য দেন না। তিনি অবিলম্বে কামারহাটির মহিলা কাউন্সিলর তথা রূপালি সরকারের গ্ৰেপ্তারের দাবি করেছেন।আবার উওর ২৪ পরগনার বরানগরের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে ত্রাণ শিবিরকে কেন্দ্র করে প্রচারের মাধ্যমে এক বিশৃঙ্খলার চিত্র ফুটে উঠেছে। বরানগর ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের
পৌরপিতা অমর পাল লকডাউনের পর থেকেই নানা রকম খাদ্যদ্রব্যাদি বিলি করেছেন। ২৭ এপ্রিল তিনি সরকারি নিয়ম মেনে সুষ্ঠুভাবে এক ত্রাণ পরিষেবার আয়োজন করেছিলেন। কিন্তু গত রবিবার চিত্রটি সম্পূর্ণ বদলে যায়। বরানগর অভিষেক অনুষ্ঠান গৃহের সন্নিকটে রান্না করা খাদ্যদ্রব্য তথা সুস্বাদু বিরিয়ানির ব্যাবস্থা করেছিলেন। সামাজিক দূরত্ব বা সরকারি কোনরকম নিয়মনিধির তোয়াক্কা না করেই চলে এই ত্রাণ পরিষেবা। রাস্তায় বিপুল মানুষের জমায়েত হওয়ায় ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে বিশৃঙ্খলা শুরু হয়। বরানগর থানার পুলিশ এসে অবস্থা নিয়ন্ত্রণে আনেন। পৌরপিতা অমর পালের দাবি, তিনি লকডাউনের পর থেকেই মানুষের কাছে খাদ্যাব্যবস্থা করেছেন। যেহেতু রেসতোরা বা হোটেল বন্ধ থাকায়,তাঁর ওয়ার্ডের মানুষেরা
খাবার পাচ্ছেন না। তাই তাঁর ওয়ার্ডের মানুষদের মুখের স্বাদ ফেরাতেই এই রান্না করা খাদ্যাদ্রব্যাদির আয়োজন করেছেন। পৌরপিতা অমর পালের দাবি, মানুষের প্রতি তাঁর এই সেবা দেখে বিজেপি ঈর্ষানিত হয়েই পুলিশকে খবর দিয়েছে। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিজেপি নেতা কিশোর কর জানিয়েছেন, শাসকগোষ্ঠী সঠিকমতো সাধারণ মানুষকে রেশন না দিয়ে সেই চাল, ডাল বা রান্না করা খাদ্যদ্রব্যাদি মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়ে নিজেদের প্রচারের চেষ্টা করছেন। সামাজিক দূরত্ব না মেনে ত্রাণের আয়োজনই বুঝিযে দেয় অমর পাল নিজের প্রচারকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন, এমনি দাবি বিজেপি নেতা কিশোর করের।
বিজেপি নেতা কিশোর কর আরও জানান, রাজ্যসরকার করোনা থেকে মানুষকে সুরক্ষিত করতে পারছে না বলেই বিজেপির উপর দোষ দিয়ে সঠিক তথ্য চাপা দেওয়ার চেষ্ঠা করছেন। বিরোধীদের একাংশের দাবি, শাসকগোষ্ঠীই যদি এই দুর্দিনে মানুষের কথা চিন্তা না করে নিজেদের প্রচারে লিপ্ত হন, তাহলে মানুষের কথা ভাববেন কারা? এমনই নানা প্রশ্নে মুখর হয়েছে বিরোধী মহল।—