দাতা শঙ্কর রাউতের উদ্যোগে স্বয়ং যমরাজ সচেতনতার পথে বরানগরের রাজপথে
ঝুম্পা দেবনাথ
বরানগর: রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বৈদ্যুতিন সংবাদ মাধ্যমে বার বার আবেদন করেছেন মানুষকে সচেতন হতে এবং মাস্ক ব্যবহার করতে ও প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না বেরোতে। কিন্তু কোনো কথায় কর্ণপাত না করেই প্রয়োজন ছাড়াই বাইরে বেরিয়ে পড়েছেন অনেকেই। ঠিক এই চিত্রের ব্যতিক্রম ঘটেনি বরানগর অঞ্চলেও । বরানগরবাসীরা সকাল হতেই বাজারের ব্যাগ হাতে নিয়ে বিভিন্ন অজুহাতে বেরিয়ে পড়ছেন এবং একই ব্যক্তিকে প্রত্যেকদিন দেখা যাচ্ছে বাজারের ব্যাগ হাতে নিয়ে মৃত্যু ভয়কে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে। প্রতি ক্ষেত্রেই দেখেছি তৃণমূল কংগ্রেসের যুবনেতা তথা বনহুগলীর যুবক সংঘের সম্পাদক শঙ্কর রাউত বরানগরবাসীর পাশে এসে দাঁড়ান এবং খবরের শিরোনামে উঠে আসেন। করোনা ভাইরাস থেকে বরানগরবাসীকে সচেতন করার ব্যাপারেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি বরানগরবাসীকে করোনা ভাইরাস থেকে সুরক্ষিত করার উদ্দেশ্যে এবং মানুষকে সচেতন করার আশায় বনহুগলীর যুবক সংঘের সম্পাদকের ডাকে সাড়া দিলেন স্বয়ং যমরাজ। স্বয়ং যমরাজ সাজে সজ্জিত হয়ে পেশাদার শিল্পী অঞ্চল জাগুয়ার (ভিন্টেজ কার) -এ চড়ে কখনো রাস্তায় পায়ে হেঁটে পরিক্রমা করেন। বরানগরবাসীকে মাস্ক না পড়া ও রাস্তায় বেরোনোর অপরাধে স্বয়ং যমরাজের প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়। কারোর আবার কপাল জোটে যমরাজের গদার গুঁতো। আবার যমরাজের বিনয়সূচক মনোভাবও ফুটে উঠেছে মাস্ক বিতরণের মাধ্যমে।শঙ্করবাবুর ভাবনায় যমরাজের আর্বিভাব সম্পর্কে আমরা জিজ্ঞাসা করলে, উনি আমাদেরকে জানান যে, শঙ্করবাবুর মূল মন্ত্রই হল মানুষের সেবা। তিনি অনেকদিন ধরেই লক্ষ্য করছেন যে বরানগরবাসী মৃত্যু ভয়কে উপেক্ষা করে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ছে। বরানগরবাসীর মনে সচেতনতা জাগাতেই এই যমরাজের ভাবনার আর্বিভাব। যমরাজ কোনো জীবিত মানুষকে স্পর্শ করেন না। কিন্তু করোনার কবলে মৃত্যু হলে যেতে হবে যমরাজের কাছে। এই বার্তাই শঙ্কর রাউত পৌঁছে দেবার চেষ্টা করেছেন বরানগরবাসীর কাছে। যমরাজের ভাবনার মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করেছেন তাই নয়, বরানগরবাসীর দুঃখ কষ্টেও ছুটে গেছেন শঙ্কর রাউত। বরানগরবাসীদের মধ্যে কেউ কেউ মোহনবাগানপ্রেমী আবার কেউ কেউ ইস্টবেঙ্গলপ্রেমী। তেমনি একজন ইস্টবেঙ্গলপ্রেমী যিনি বরানগরের লঞ্জেন্স দিদি নামে পরিচিত। যেহেতু লকডাউনের জন্য কোনো মানুষ বাইরে বের হচ্ছেন না, তাই বন্ধ হয়ে গেছে ইস্টবেঙ্গলপ্রেমী লঞ্জেন্স দিদির রোজগার এবং তিনি বহু সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। লঞ্জেন্স দিদির এই অসহায় অবস্থার কথা পৌঁছায় মোহনবাগানপ্রেমী সেই শঙ্কর রাউতের কানে। তিনি ফুটবল মাঠের ৯০ মিনিটের প্রতিযোগিতার কথাকে ভুলে গিয়ে ছুটে যান এবং বিভিন্ন প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি দিয়ে সাহায্য করেন সেই ইস্টবেঙ্গলপ্রেমী লঞ্জেন্স দিদিকে। শঙ্করবাবু ঈশ্বরের দূত হিসাবে যেভাবে লঞ্জেন্স দিদির পাশে এসে দাঁড়ালেন তাতে লঞ্জেন্স দিদি আনন্দিত হয়ে শঙ্করবাবুকে মোহনবাগান ভাই বলে সম্বোধন করেন। আমরা এক ইস্টবেঙ্গলপ্রেমী মানুষের সাথে কথা বলি। উনি জানান, শঙ্করবাবু যেভাবে মাঠের লড়াইকে ভুলে লঞ্জেন্স দিদির পাশে এসে দাঁড়ালেন এতেই বোঝা যায় যে মোহনবাগানপ্রেমী শঙ্করবাবুর মূলমন্ত্র মানুষের সেবা এবং তিনি দেখিয়ে দিলেন আগে মানুষ তারপর ক্লাব। আবার একজন মোহনবাগানপ্রেমী মানুষের সাথে কথা বলে জানতে পারি, উনি বলেন শঙ্করবাবু খুবই ভালো মানুষ। তাঁর এই কাজই এক মোহনবাগানীর পরিচয় দেয়।বনহুগলীর যুবক সংঘের সম্পাদক শঙ্কর রাউত বরানগরের দুঃস্থ, নিরন্ন মানুষদেরও পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। কোভিড-১৯ র অন্ধকার মেঘ থেকে মানুষকে বাঁচাতে লকডাউনের জেরে সকলেই গৃহবন্দি। এর ফলে কাজের অভাবে খাবার পাচ্ছেন না অনেকেই এই অবস্থার কথা চিন্তা করে শঙ্করবাবু আয়োজন করেছেন এক ত্রাণ শিবির। এই ত্রাণ শিবিরের খাদ্য তালিকায় রয়েছে চাল, ডাল, আলু, সয়াবিন ও বাচ্ছাদের জন্য দুধ ও বিস্কুট। বরানগরের নির্দিষ্ট ওয়ার্ডে নয়, সমগ্ৰ বরানগরের নিম্নবিত্ত বা মধ্যবিত্তের ভাগাভাগি অবস্থার প্রেক্ষিতে বিচার করে রাখা হয়নি এই ত্রাণ পরিষেবা। বরানগরের যেকোনো পরিবারের সদস্যরা যদি এই খাদ্য সামগ্রী সংগ্রহের প্রয়োজন মনে করেন তবে তাকে সোমবার থেকে বুধবারের মধ্যে কুপন সংগ্ৰহ করে, বৃহস্পতিবার খাদ্য সামগ্রী ক্লাব প্রাঙ্গন থেকে সংগ্রহ করতে হবে। আগামী জুন-জুলাই মাস পযর্ন্ত জারি থাকবে এই ব্যাবস্থা। প্রতি বৃহস্পতিবার ১০০১টি পরিবার করে প্রায় ৮০৫২ টি পরিবারে খাবার পৌঁছে দিয়েছেন সকলের প্রিয় শঙ্কর রাউত। উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দমদমের সাংসদ অধ্যাপক সৌগত রায়। তিনি শঙ্করবাবু ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, শঙ্কর রাউত বরানগরের এক বড়ো মাপের সংগঠক ও বড়ো কালীপুজোর আয়োজক। এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে বরানগরের প্রায় ৮০০০ টি পরিবারের কাছে অন্ন পৌঁছে দেবার ব্যাবস্থা সত্যিই প্রশংসনীয়।
শঙ্করবাবুর সাথে আমরা কথা বলে জানতে পারি উনি ক্লাবের পক্ষ থেকে মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে ১ লক্ষ ১ হাজার টাকা দান করেছেন এবং পরবর্তীকালে রক্তের অভাবে ভ্রাম্যমাণ রক্তদান শিবির আয়োজনের এক চিন্তাভাবনাও রেখেছেন। সারা বাংলার ভয়াবহ অবস্থায় যেভাবে অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছেন শঙ্করবাবু, তাতে একজন প্রকৃত সমাজসেবীর উদাহরণ হয়ে উঠেছেন বরানগরের তৃণমূল কংগ্রেসের যুবনেতা তথা বনহুগলীর যুবক সংঘের সম্পাদক শঙ্কর রাউত।—