সব শোনে মাস্টারমশাই” থেকে “ত্রান তহবিলে সাহায্য”
“
৮ ই এপ্রিলঃ বিগত সরকারের আমলে লাল চোখরাঙানি থেকে মুক্তির পরে রাজ্যজুড়ে প্রাথমিক শিক্ষকদের মধ্যে শাসক দলের সংগঠনে সদস্য পদ নিয়ে আনুগত্য প্রকাশের চেষ্টা করলেও,বিগত সরকারের আমলে বলিষ্ঠ এই সংগঠন প্রকৃত অর্থে দানা বাঁধেনি। একের পর এক নির্বাচনে সরকারি কর্মচারীদের ভোট শাসক দলের বিরুদ্ধে যায় এবং রামবাম জোটের নেতারা বিভিন্ন অরাজনৈতিক সংগঠনের নাম নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে ক্রমাগত প্রাথমিক শিক্ষক দের নিয়ে উস্কানিমূলক কর্মসূচি নেয়। এই অবস্থায় শিক্ষক সংগঠনের পুনরুজ্জীবিত করার দায়িত্ব মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর নির্দেশে শিক্ষা মন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জী তুলে দেন আসানসোলের জাতীয় স্তরের ক্রীড়াবিদ ও তৃনমুল ছাত্র পরিষদের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি অশোক রুদ্রের সাথে। এর আগে অশোক রুদ্র, নেতৃত্ব দিয়ে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে পিটিটিআই পরীক্ষার্থীদের সংঘবদ্ধ করে ২০০৬ সালে বামফ্রন্টের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে আন্দোলন কে কলকাতার রাজপথ থেকে দিল্লীর রাইসিনা হিলস পর্যন্ত পৌঁছে দাবী আদায় করেন। সারা রাজ্যে বাম বিরোধী রাজনীতি তে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয় অশোক রুদ্রের নাম। তৃনমুল ছাত্র পরিষদের দায়িত্ব সফল ভাবে সম্পন্ন করার পর, অভিষেক ব্যানার্জী যুব তৃনমুলের দায়িত্বভার নিয়ে রাজ্য সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেন অশোক রুদ্র কে। রাজ্যজুড়ে সাধারণ মানুষের সাথে দৈনন্দিন জীবনে প্রত্যেক দিন যাদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ সেই প্রাথমিক শিক্ষকদের শাসকদলের দায়িত্ব দেওয়া হয় অশোক রুদ্র কে। তৃনমুল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির দায়িত্বভার নিয়ে অশোক রুদ্রের নেতৃত্বে সংগঠনের রাজ্য নেতৃত্ব শিক্ষক দের জীবন জীবিকার সমস্যাগুলি তুলে ধরেন সরকারের কাছে, পে ব্যান্ডের পরিবর্তনের সাথে সাথে পে কমিশনের সুবিধা পায় রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষক শিক্ষিকারা, ব্যার্থ হয় রামবাম জোটের অরাজনৈতিক আন্দোলন। প্রাথমিক ক্রীড়াতে পঞ্চায়েত স্তর থেকে অনুদান দিয়ে চল্লিশ বছর ধরে চলে আসা শিক্ষক শিক্ষিকাদের সাহায্য নিয়ে বার্ষিক ক্রীড়া সম্পন্ন করার প্রথা বন্ধ হয়, মুখ্যমন্ত্রী ও শিক্ষা মন্ত্রী এরই সাথে ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নেন নিজের জেলায় শিক্ষক শিক্ষিকাদের বদলির। পেশাগত সমস্যার সমাধান হওয়ার সাথে সাথেই রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষক শিক্ষিকাদের মধ্যে তৃনমুল শিক্ষক সমিতি র প্রতি ভরসা ও মা মাটি মানুষের সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রতিষ্ঠা হতে শুরু করে ও অশোক রুদ্রের নেতৃত্বে বলিষ্ঠ শাখা সংগঠন হিসাবে তৃণমূল শিক্ষক সমিতি উঠে আসা।
রাজ্যজুড়ে এই সময় করোনা মহামারী র প্রকোপ দেখা যায়, স্কুল কলেজ বন্ধ হয়ে যায়। ভারতের সাথে পশ্চিমবঙ্গ ও লকডাউন পিরিয়ডে চলে আসে। সরকারের তরফে প্রচার শুরু হয় সোস্যাল ডিসট্যান্টসিং এর, অশোক রুদ্রের নেতৃত্বে প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠন মানুষকে করোনা ভাইরাসের আতঙ্ক মোকাবিলায় সচেতন করতে “সব শোনে মাস্টারমশাই ও জনস্বার্থে মাস্টারমশাই ” কর্মসূচি নেয়। সারা রাজ্যে প্রায় একহাজার দল, ছয় আটজন শিক্ষক শিক্ষিকাদের নিয়ে প্রতিটি দল তৈরী করে ছড়িয়ে পড়ে। নদীয়াতে আনুষ্ঠানিক সূচনা হলেও আসানসোলের কোলিহারি থেকে জঙ্গলমহলের লোধা শবর অধূষ্যিত বুড়ীশোল আবার ডুয়ার্স ও পাহাড়ের চা বাগান থেকে সুন্দরবন, কখনোও কলকাতার বস্তি এলাকা থেকে দূর্গাপুরের কুষ্ঠ কলোনি ছড়িয়ে পড়ে মাস্টারমশাই ও দিদিমনিরা। তৃনমুল কংগ্রেসের একমাত্র শাখা সংগঠন হিসাবে করোনা পিরিয়ডে ও মানুষের পাশে থাকে তৃনমুল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি।
এরই মাঝে লকডাউনের একুশ দিন সাধারন মানুষের বেঁচে থাকা দুর্বিষহ করে তোলে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী এমারজেন্সি ত্রাণ তহবিলে সাহায্য চেয়ে আবেদন করেন, আবেদন জানান শিক্ষা মন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জী৷ সংগঠনের সভাপতি হিসাবে অশোক রুদ্র ফেসবুক লাইভ করে অনুরোধ জানান রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষক শিক্ষিকাদের মুখ্যমন্ত্রীর এমারজেন্সি ত্রাণ তহবিলে সাহায্য করার। এই বিপদের দিনে মুখ্যমন্ত্রীর এমারজেন্সি তহবিলে সস্ত্রীক সাহায্য করে শিক্ষক শিক্ষিকাদের অনুপ্রানিত করতে শুরু করেন, রাজ্য নেতৃত্ব একই পথে এগিয়ে আসে। জেলার সাথে চক্র নেতৃত্বের যোগাযোগ তৈরী হয়, নিবিড় ভাবে তৈরী শৃঙ্খলিত সংগঠনের সদস্যরা এগিয়ে আসে, লকডাউনের মাঝেও অধিকাংশ শিক্ষক শিক্ষিকাদের বেতন গ্রামীণ ব্যাংকগুলোতে হলেও প্রায় দু কোটিরও বেশী টাকা জমা পড়ে মুখ্যমন্ত্রীর এমারজেন্সি ত্রাণ তহবিলে, সাহায্য করেন প্রায় কুড়ি হাজারের মতো শিক্ষক শিক্ষিকা। হুগলির শিক্ষিকা যমুনা বন্দ্যোপাধ্যায় এক লক্ষ টাকা সাহায্য করেন, মালদার শিক্ষক বুলবুল খান ও জঙ্গলমহলের শিক্ষিকা একমাসের বেতন দান করেন। পূর্ব বর্ধমানের কালনা মহকুমার পূর্বস্থলীর অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক চন্ডী চরন লাহা ৫০০০০ ও বিজয় ভূষন আচার্য ১৫০০০ টাকা দান করেন। পশ্চিমবঙ্গ তৃনমুল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির রাজ্য সভাপতি অশোক রুদ্র বলেন যদিও মোট সদস্যের তুলনায় এগিয়ে আসা সদস্যদের সংখ্যা উৎসাহব্যঞ্জক নয়, তবুও প্রাথমিক শিক্ষক শিক্ষিকারা করোনা পিরিয়ডে তাদের কাজের জন্য সম্মানের জায়গা মানুষের মাঝে ফিরে পাবেন এবং তিনি কৃতজ্ঞতা জানান সমস্ত অংশগ্রহণ কারী শিক্ষক শিক্ষিকাদের, সংগঠনের রাজ্য নেতৃত্ব, জেলা নেতৃত্ব ও চক্র নেতৃত্ব কে।