দূরদৃষ্টি

আজ পহেলা মে, আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস

আজ পহেলা মে, আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস

আজ পহেলা মে, আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার ও দাবি আদায়ের দিন।ঊনবিংশ শতাব্দীতে দৈনিক কাজের সময়কে বেঁধে আট ঘণ্টা করার বড় লড়াই থেকে আসে দিনটার অনুপ্রেরণা। সে দাবি আজও প্রাসঙ্গিক। বিশেষ করে আমাদের ভারতবর্ষে যখন করোনা ভাইরাস লকডাউনের মধ্যে সরকার দৈনিক কাজের সময়কে আবার বাড়িয়ে ১২ ঘণ্টা করার তোড়জোড় করছে। আট ঘণ্টা কাজের সাথেই যুক্ত নিয়মিত কাজ ও সবেতন ছুটির প্রশ্ন। অথচ আমাদের দেশে কোটি কোটি শ্রমজীবি মানুষ আজও শ্রমিক হিসেবেই স্বীকৃত নন।মে দিবস শ্রমিকদের শ্রমের মর্যাদা ও কর্মস্থলে নিরাপত্তার কথা বলে।

প্রতিদিন নর্দমা পরিষ্কার করতে গিয়ে মারা পড়ছেন যে সাফাই কর্মী তাঁর আজও সম্মান ও নিরাপত্তা কোনোটাই নেই! শ্রমশক্তির একটা বড় অংশ প্রতিদিন কর্মক্ষেত্রে যৌন হেনস্থা ও জাতপাতের নিপীড়ন সহ বিবিধ হয়রানি ও লাঞ্ছনার শিকার হয়েই চলেছেন। মে দিবস তাই আমাদের কাজের স্বীকৃতি, নিরাপদ কর্মস্থল, কাজের গণতান্ত্রিক ও মর্যাদাপূর্ণ পরিবেশের দাবিতে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার শপথের দিন।এ বছরের মে দিবস নিশ্চিতভাবেই সেইসব অত্যাবশ্যকীয় ক্ষেত্রের কর্মচারিদের কথা বলছে যাঁদের এই মহামারীজনিত করোনাভাইরাস এর দ্বিতীয় ঢেউ ভারতবর্ষে কোটি কোটি মানুষের আতঙ্ক হয়ে কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যু প্রতিনিয়ত সর্বহারা, তার উপরে লকডাউনের মধ্যেও ফুরসত নেই। বরং বলা ভাল যে এই সংকটের জন্যই তাঁদের কাজের বিরতি নেই। ডাক্তার, নার্স, প্যারামেডিক্যাল কর্মী, জনস্বাস্থ্য কর্মী, সাফাই কর্মী, পরিবহণ শ্রমিক, পুরুষ ও মহিলা পুলিশকর্মী- এঁদের সকলের জন্য এই সময়টা মাত্রাতিরিক্ত কাজের চাপ ও ঝুঁকি নিয়ে হাজির হয়েছে।

প্রায়শই তাঁদেরকে ন্যূনতম সুরক্ষার সরঞ্জাম ছাড়াই এই সংক্রমণ বিপদের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। যদি এখনও তাঁদের কাজের প্রাথমিক সমস্যাগুলোর দিকে নজর দিয়ে সেগুলোর সমাধান না করা হয় তাহলে কেবল তালি বাজালে তাঁদের কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে দেওয়াই হবে।তবে বহু মানুষ হাসপাতালের বেড পাচ্ছেন না অক্সিজেন পাচ্ছেন না। তাই আমাদের আবেদন যে সমস্ত জায়গায় অক্সিজেন উৎপন্ন হয়, সেখানকার শ্রমিকরা টানা তিন শিফট কাজ করে অক্সিজেন উৎপন্ন করুন করোনা রোগীদের জন্য। সেটাই হবে সবচেয়ে বড় শ্রমিক দিবস উদযাপন।”

সিপিএম দলের জন্মলগ্ন থেকে দলের শ্রমিক সংগঠন ১ মে, মে দিবস পালন করে আসছে।

এই দিন রাজ্যের কলকারখানায় শ্রমিকরা দিনটি উদাপন করেন। বিভিন্ন জায়গায় রক্তদান শিবির, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হতো।কিন্তু এই বছর করোনা সংক্রমণের এতো তীব্রতা দেখে সিপিএম দলের পক্ষে মে দিবসের দিনটিকে করোনা সংক্রমণের বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি দিবস হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। এমন কী ২ মে, ভোট গণনার দিনও তারা রাজনৈতিক কাজের চাইতে করোনা সচেতনতা বৃদ্ধির জন্যই কাজ করবেন বলে সিপিএম সূত্রে জানা গেছে।ন্য রাজ্যের মতোই এরাজ্যেও কোভিড সংক্রমণ ক্রমেই মাত্রা ছাড়াচ্ছে। বুধবারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনার মারণ থাবায় আক্রান্ত হয়েছে ১৭ হাজার ২০৭ জন। যা অতীতের সমস্ত রেকর্ডকে ভেঙে দিয়েছে। এখনও পর্যন্ত রাজ্যে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ লক্ষ ৯৩ হাজার ৫৫২ জন।সবথেকে বেশি চিন্তা বাড়াচ্ছে কলকাতা। কলকাতার পরেই রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা।

অন্যদিকে রয়েছে কোটি কোটি অসহায় মানুষ, যাদের দুটো পয়সার জন্য মালিকের কাছে কাজ ভিক্ষে করা ছাড়া উপায় নেই৷ তারাই শ্রম দিয়ে সমস্ত সম্পদ সৃষ্টি করে৷ অথচ সারাজীবন একটু রুটির জন্য তাদের হা–পিত্যেশ করতে হয়৷ হাড়ভাঙা খাটুনির পর গ্রামের প্রান্তে অথবা শহরের বস্তিতে দুর্বিষহ জীবনযাপন করতে হয় তাদের৷কিন্তু এখন সেই নিপীড়িত মানুষেরা ধনকুবের শোষকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে৷ সারা দুনিয়ার শ্রমজীবী মানুষ শ্রমকে মজুরি–দাসত্ব থেকে মুক্ত করার লড়াইয়ে সামিল হয়েছে৷ তারা লড়ছে অভাব, দারিদ্রের বিরুদ্ধে৷ তারা এমন একটা সমাজব্যবস্থার জন্য লড়ছে যেখানে শ্রমের দ্বারা সৃষ্ট সম্পদ মুষ্টিমেয় ধনকুবেরের পরিবর্তে শ্রমিকদের স্বার্থে ব্যবহৃত হবে৷ কল–কারখানা, যন্ত্রপাতি, জমি, ধনসম্পদকে তারা সাধারণের সম্পত্তিতে পরিণত করতে চাইছে৷ তারা চাইছে ধনী–দরিদ্রের বৈষম্য দূর হোক, শ্রমের ফসল শ্রমজীবীরাই পাক৷ তারা চাইছে মানুষের মননশক্তির সমস্ত অগ্রগতি, সমস্ত সাফল্যকে কাজে লাগিয়ে গোটা সভ্যতা আরও উন্নত হোক, একজনও যেন অবদমিত না থাকে৷ শেষ করার আগে ভারতীয় সংবিধানের সংশোধন জনক আম্বেদকরের একটা বিখ্যাত কথা স্মরণ করা যেতে পারে – জাতব্যবস্থা শ্রমের বিভাজন নয়, শ্রমিকের বিভাজন।

মে দিবস হল সেই বিভক্ত শ্রমিকের ঐক্যের দিন। বিশ্বব্যাপী শ্রমজীবী ও শোষিত মানুষের ঐক্য। জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার ধারাবাহিক ধ্বংসসাধন ও মহামারী মোকাবিলায় বেশিরভাগ দেশের সরকারেরই অপদার্থতা আর নিষ্ঠুর উদাসীনতার  ফলে সারা বিশ্বে শ্রমজীবী মানুষকেই কোভিড-১৯ মহামারীর সবথেকে বেশি ধকল সইতে হচ্ছে। অথচ সরকারগুলো এখনও নিজেদের সব দায়িত্ব এড়িয়ে শ্রমিকদেরকেই দোষারোপ ও বিভাজন করতে ব্যস্ত! এই বিভাজনের ছককে রুখে দেওয়াটা আজ ভীষণ জরুরি। আজ যখন বিশ্ব পুঁজিবাদ আর মানুষের বেঁচে থাকার মধ্যে সংঘাত সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে তখন অন্যরকম বিশ্ব গড়ে তোলাটা আমাদের কাছে আশু তাগিদ। আজ সত্যিই ডাক পড়েছে গোটা পৃথিবীকে জয় করার, নতুন বিশ্ব গড়ে তোলার। জোট বাঁধো তেরি হও। এ লড়াই সবার লড়াই। এ লড়াই জিততে হবে।

Related Articles

Back to top button