দূরদৃষ্টি

অনেকের কাছেই অজানা যে, মিশনের প্রতীক এঁকেছিলেন স্বামীজি স্বয়ং।

সৌপ্তিক বন্দ্যোপাধ্যায় : ১৮৯৭ সালের পয়লা মে। স্বামী বিবেকানন্দ বাগবাজারের শ্রী বলরাম বসুর বাড়িতে আনুষ্ঠানিকভাবে রামকৃষ্ণ মিশন তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। মিশনের যে ওই জলের মধ্যে ভেসে বেড়ানো রাজহংসের প্রতীক, তার একটি পৃথক অর্থ রয়েছে।
অনেকের কাছেই অজানা যে, মিশনের প্রতীক এঁকেছিলেন স্বামীজি স্বয়ং। কিন্তু ইচ্ছা হল প্রতীক গড়লাম। বিষয়টা এমন নয়। এর আলাদা অর্থ রয়েছে। উদীয়মান সূর্য জ্ঞানের প্রতীক,পদ্মফুল ভক্তির প্রতীক, ছবিটিকে ঘিরে থাকা সাপ যোগ ও কুন্ডলিনি শক্তি জাগরনের প্রতীক, ছবির তরঙ্গায়িত জল কর্মের প্রতীক, ছবির রাজহাঁস পরমাত্মার প্রতীক।মিশনের মূল উদ্দেশ্য ‘আত্মনো মোক্ষার্থম জগদ্ধিতায় চ’ অর্থাত্‍ মোক্ষলাভ ও জগতের কল্যাণের জন্য আত্মত্যাগ করা।
সারা বিশ্বে রামকৃষ্ণ মঠ ও  মিশনের শাখাকেন্দ্র ২১৪ টিরও বেশি। ভারতেই আছে ১৬৩টি শাখা , বাংলাদেশে ১৫টি, আমেরিকায় তে ১৪টি , এছাড়া রাশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, আর্জেন্টিনা, অষ্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া,  ব্রাজিল, কানাডা, ফিজি, ফ্রান্স, জার্মানি, আয়ারল্যান্ড জাপান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা প্রভৃতি বিভিন্ন দেশে রামকৃষ্ণ মিশনের শাখা প্রশাখা রয়েছে।
রামকৃষ্ণ মিশনের জন্ম হয়েছিল বাগবাজারের বলরাম বসুর বাড়িতেই। বাড়ির পরিচিতি ‘বলরাম-মন্দির’ নামে। সেদিন বাগবাজারে বলরাম বসুর বাড়িতে চলছিল সভা। সেখানে স্বামীজি বলেছিলেন, ‘নানা দেশ ঘুরে আমার ধারণা হয়েছে, সঙ্ঘ ব্যতীত কোন বড় কাজ হতে পারে না। আমরা যাঁর নামে সন্ন্যাসী হয়েছি, আপনারা যাঁকে জীবনের আদর্শ করে সংসারাশ্রমে কার্যক্ষেত্রে রয়েছেন। এই সঙ্ঘ তাঁরই নামে প্রতিষ্ঠিত হবে। আমরা প্রভুর দাস আপনারা এ কার্যে সহায় হোন।’
নাট্যাচার্য গিরিশচন্দ্র ঘোষ সহ সভায় উপস্থিত ব্যক্তিরা স্বামীজির প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছিলেন। কার্যপ্রণালী সভায় আলোচিত হয়। নাম রাখা হয় ‘রামকৃষ্ণ প্রচার’ বা ‘রামকৃষ্ণ মিশন’। উদ্দেশ্য, মানবকল্যাণে শ্রীরামকৃষ্ণদেব যে তত্ত্ব বাখ্যা করে গিয়েছেন তার প্রচার করা। পাশাপাশি মানুষের দৈহিক, মানসিক ও পারমার্থিক উন্নতির স্বার্থে সেই তত্ব কাজে লাগানো। সকল ধর্মমতের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা ও আস্থা রাখা এর অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য ছিল। সঙ্ঘের কাজ, শিক্ষাদান, শিল্প ও শ্রমোপজীবিকাকে উৎসাহপ্রদান এবং বেদান্ত ও অন্যান্য ধর্মভাব শ্রীরামকৃষ্ণের জীবনে যেরকম ব্যাখ্যাত হয়েছিল, তা জনসমাজে প্রবর্তন করা।
স্বামীজি স্বয়ং সাধারণ এই সঙ্ঘের সভাপতি হন। স্বামী ব্রহ্মানন্দজি কলকাতা কেন্দ্রের সভাপতি হন। সহকারী হন স্বামী যোগানন্দজি। প্রতি রবিবার বিকেল চারটেতে বলরামবাবুর বাড়িতে অধিবেশন বসত।এই বলরাম মন্দিরে থেকেছেন সারদা দেবী, স্বামীজি, স্বামী ব্রহ্মানন্দজি ,স্বামী অদ্ভুতানন্দজি। এই বাড়িতেই ঠাকুর রথযাত্রায় রথের দড়ি ধরেছিলেন।
তথ্যসূত্র: কলকাতা ২৪×৭

Related Articles

Back to top button