দূরদৃষ্টি

কবি, গল্পকার, নাট্যকার ও পত্রিকা সম্পাদক এবাদুল হক চলে গেলেন আমাদের ছেড়ে

আব্দুল বারি

১৭ চলে গেলেন আমাদের ছেড়ে কবি, গল্পকার, নাট্যকার ও পত্রিকা সম্পাদক এবাদুল হক। তাঁর পিতা-মাতা জয়নাল আবেদীন ও হামিদা বেওয়া। পেশায় তিনি শিক্ষকতা করতেন। নিবাস ছিল কানাপুকুর, পোস্ট এবং থানা ছিল ভগবানগোলা জেলা মুর্শিদাবাদ।

লেখালেখি এবাদুল হক একইসঙ্গে কবি, গল্পকার ও নাট্যকার। কবিতা ও গল্পে সমান সিদ্ধহস্ত। প্রথম জীবনে প্রচুর নাটক লিখেছেন।

নিজের লেখা নাটকে অভিনয় করেছেন। তার লিখিত পূর্ণাঙ্গ ও একাঙ্ক নাটকের সংখ্যা প্রায় কুড়ি বাইশ এর উপর।তবে নাটক লেখা ছেড়ে কবিতা ও গল্প লেখায় বেশি মনোযোগ দেন। সমসাময়িক কালে তিনি উপন্যাসও লিখতে শুরু করেছিলেন।

তার প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ (এক)- কবিতা কাকলি। (নিজ অর্থ প্রকাশিত)। (দুই) সূর্যাস্তের আগে ও পরে (কবিতা পাক্ষিক থেকে প্রকাশিত)।
(তিন) নাগকেশরের ফুল (কবিতা পাক্ষিক থেকে প্রকাশিত)।
(চার) বাউল জল (নিজ অর্থ প্রকাশিত )। (পাঁচ) অগ্নিজল (কবিতা পাক্ষিক থেকে প্রকাশিত )। (ছয়) পলাতক ছায়া( মহাকাব্য প্রকাশনী বাংলাদেশ )। (সাত) এক গ্লাস জলের ছায়া (পালক পাবলিশার্স )। (আট) পেপারব্যাক নারী (সনেট প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত)

সম্পাদিত পত্রিকা ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে নবম শ্রেণীতে পাঠরত অবস্থায় তিনি সম্পাদনা করেন “প্রলয়” নামক পত্রিকা। ওই বয়সে শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা নিয়ে এসে তিনি এ পত্রিকায় ছাপেন। এক বছর পর পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে যায়। দ্বিতীয় পত্রিকা “রামধনু “এক বছর প্রকাশিত হয় ,তার পর বন্ধ হয়ে যায়। তৃতীয় পত্রিকা আবার এসেছি ফিরে ১৯৭৯ সাল থেকে এখনো প্রকাশিত হয়ে চলেছে। প্রায় ৪২ বছর ধরে তিনি পত্রিকা সম্পাদনা করছেন। নিজ অর্থে পত্রিকা সম্পাদনা করেন, কোন বিজ্ঞাপন থাকেনা এই পত্রিকাতে। শুধু লেখা প্রকাশিত নয় লেখক কপি নিজ অর্থ খরচে লেখককে পোস্ট বা বিভিন্ন উপায়ে পৌঁছে দেন। নিজের প্রচুর গল্প নাটক লেখা থাকলেও তিনি তা নিজ পত্রিকায় প্রকাশ করতে সঙ্কোচ বোধ করেন। নতুন লেখকদের জায়গা করে দেওয়াই তার মূল উদ্দেশ্য ছিলো।

১৯৯২ খ্রিস্টাব্দে তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তর পশ্চিমবঙ্গ সরকার সারা বাংলার যুব উৎসব প্রতিযোগিতায় রাজ্যে প্রথম পুরস্কার লাভ করে “আবার এসেছি ফিরে” সাহিত্য পত্রিকা। ২০১২ সালে পশ্চিমবঙ্গ বাংলা অ্যাকাডেমি থেকে এই “আবার এসেছি ফিরে” পত্রিকাটি শ্রেষ্ঠ লিটিল ম্যাগ পুরস্কার পায়। ২০২০ সালে মুর্শিদাবাদের রোদ রং পত্রিকা থেকে “আবার এসেছি ফিরে”কে শ্রেষ্ঠ লিটল ম্যাগ পুরস্কার দেয়।

কবি নিজেও নানা প্রতিষ্ঠান থেকে বহু পুরস্কারে ভূষিত।

২০১৯ থেকে “এবং পুনশ্চ “নামে আর একটি সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা করে আসছিলেন।

ব্যক্তিগত দুর্ঘটনা জনিত কারণে কিছু বছর যাবৎ তিনি অত্যন্ত অসুস্থ ছিলেন। কিন্তু তাঁর অদম্য মনোবলকে কোনোদিন তাঁর সাহিত্য সৃষ্টিকে প্রভাবিত করতে পারেনি। হঠাৎ করে কয়েক দিন আগে অসুস্থ হয়ে পড়েন। ১৬ মে পর্যন্ত তিনি বেশ ভালো ছিলেন। ১৭ মে ২০২১ সকালে তিনি হৃৎরোগ জনিত কারণে ইহজগৎ ছেড়ে চলে গেলেন। মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ৬২ বছর। পরিবার হারালো তাঁদের অভিভাবককে আমরা হারালাম একজন সাহিত্য নিবেদিত প্রাণকে। বিভিন্ন পত্রিকাতে তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়েছে। এবাদুল হক অসুস্থ হওয়ার সময়ে ফারুক আহমেদ সম্পাদক উদার আকাশ পত্রিকা সহ কয়েকজন সাহায্য নিয়ে এগিয়ে আসেন। এবাদুল হককে নিয়ে সম্পাদকীয় লিখেছেন উদার আকাশ পত্রিকাতে। তাঁকে সহায়তা করতে অনেকেই তখন এগিয়ে আসেন।

Related Articles

Back to top button