জানা-অজানা

অধ্যাপক বিষ্ণুকান্ত শাস্ত্রীজীর ৯৬ তম জন্মজয়ন্তী-র শ্রদ্ধাঞ্জলি ।..

 

 

শ্যামল বণিক

শাস্ত্রীজি ১৯২৯ সালের ২ রা মে কলকাতায় জন্ম গ্রহন করেন। পিতা পন্ডিত গাঙ্গেয় নরোত্তম শাস্ত্রী, মাতা রূপেশ্বরী দেবী। আদি নিবাস কাশ্মীর।

শিক্ষা শুরু সারস্বত বিদ্যালয়ে। পেসিডেন্সি কলেজ থেকে BA পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ন হন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে LLB পাশ করেন এবং ১৯৫২ সালে MA পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে প্রথম স্থান অধিকার করেন। পরবর্তী সময়ে বেণারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় এবং কানপুরের সাহুজী মহারাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে ডি.লিট সন্মানে ভুষিত হন।

১৯৪৪ সালে RSS এর সাথে যুক্ত হন। শাস্ত্রীজী সংঘ শিক্ষায় (OTC) শিক্ষিত। প্রথম বর্ষের OTC তে যাওয়ার বিষয়ে শাস্ত্রীজীর পিতা আপত্তি করেন, কারন ওনাদের পরিবার ছিল গোড়া কাশ্মীরী হিন্দু। ক্যাম্পে পংঙি ভোজনে ছোয়া-ছানি হবে এটা কিছুতেই মানতে পারছিলেন না, সুতরাং সংঘ শিবিরে যোগদান অসম্ভব। তখন সংঘের অধিকারী শাস্ত্রীজীর পিতার সাথে দেখা করেন সম্মতি আদায়ের জন্য, শেষে রফা হয় শিবিরে যোগ দিতে পারবে, যদি বাড়ীর খাবার খাওয়ার অনুমতি পায়। একমাত্র ব্যাতিক্রমী ঘটনা, সংঘের অধিকারী শাস্ত্রীজীর পিতার প্রস্তাব মেনে নেওয়ায় শাস্ত্রীজীর পক্ষে সংঘ শিক্ষা সম্ভব হয়েছে এবং সমাজ একজন প্রকৃত সেবককে পেয়েছেন।

১৯৫৩ সালে ইন্দিরা দেবীর সাথে বিবাহ বন্ধনে অবদ্ধ হন, ১৯৮৮ সালে স্ত্রী বিয়োগ হয়। একমাত্র কণ্যা শ্রীমতী ভারতী শর্মা।
১৯৫৩ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে হিন্দি বিভাগে শিক্ষকতা শুরু করেন। ১৯৯৪ সালের ২রা মে হিন্দি বিভাগীয় প্রধান হিসাবে অবসর গ্রহন করেন। শাস্ত্রীজী অনেক পুস্তক রচনা করেছেন, ওনার লেখা পুস্তক শুধুমাত্র ভারতেই নয়, সারা বিশ্বে সমাদৃত হয়েছে।
শাস্ত্রীজীর রাজনৈতিক হাতেখড়ি, কলকাতা মহানগরের ABVP সভাপতি হিসাবে। তারপর অখিল ভারতীয় জনসংঘের কাজে জরিয়ে পড়েন।

১৯৭৭ সালে কলকাতার জোরাসাঁকো বিধানসভা কেন্দ্র থেকে জনতা পার্টির প্রতীকে বিধায়ক নির্বাচিত হন, ১৯৮২ পয্যন্ত বিধায়ক ছিলেন।
১৯৮০ সালে জনতা পার্টির বিভাজন এবং বিজেপি প্রতিষ্ঠিত হয়। শাস্ত্রীজী প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসাবে বিজেপিতে যোগদান করেন। শাস্ত্রীজী প্রথমবার ১৯৮২ থেকে ১৯৮৬ পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিজেপির সভাপতি ছিলেন, দ্বিতীয় বার ১৯৯৬ থেকে ১৯৯৮ সভাপতির দ্বায়িত্ব সামলেছেন। ১৯৮৮ সাল থেকে ১৯৯২ সর্ব ভারতীয় সহঃ সভাপতি ছিলেন। ১৯৯২ সালে উত্তর প্রদেশ থেকে রাজ্য সভার সদস্য নির্বাচিত হন, মেয়াদ শেষ হয় ১৯৯৭ সালে। রাজনৈতিক নেতা হিসাবে সকলের নিকট ছিলেন জনপ্রিয়। প্রত্যেকের সাথে ছিল মধুর সম্পর্ক্ষ।

১৯৯৯ সালে ২রা ডিসেম্বর হিমাচল প্রদেশের রাজ্যপাল এর দ্বায়িত্বভার গ্রহন করেন। ২০০০ সালের ২৩ শে নভেম্বর পয্যন্ত রাজ্যপাল ছিলেন।
২৪শে নভেম্বর ২০০০ সালে উত্তর প্রদেশের রাজ্যপাল হিসাবে শপথ গ্রহন করেন। ২০০৪ সালের ২রা জুলাই পয্যন্ত শাস্ত্রীজী রাজ্যপাল ছিলেন। রাজ্যপাল হিসাবে শাস্ত্রীজী খুবই জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন ।
২০০৫ সালের ১৭এপ্রিল পাটনায় শ্রীমদ্ ভগবত গীতা প্রবচনে অংশ নেওয়ার জন্য দানাপুর এক্সপ্রেসে রওনা হয়েছিলেন। ১৭ই এপ্রিল ট্রেনেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।

শাস্ত্রীজীর কর্মজীবন থেকে আনেক কিছু শেখার আছে, আমি ব্যাক্তিগত ভাবে ওনার স্নেহ পেয়েছি, মৃত্যুর দীর্ঘ ১৯ বছর বাদেও আমার স্মৃতিতে বিষ্ণুজী জাগ্রত। জয়তু বিষ্ণুজী।

Related Articles

Back to top button