রাজ্য

‘ক্লাস করান না, কিন্তু বেতন নেন’, কাঠগড়ায় তৃণমূল শিক্ষক সেলের নেতা, হুলস্থূল স্কুল

ডোমজুড়: ডোমজুড়ের (Domjur) বনিবড়া কনভার্টেড জুনিয়র বেসিক স্কুলের সামনে বিক্ষোভ (Protest in School) অভিভাবকদের। এই স্কুলেরই শিক্ষক ধ্রুবজ্যোতি সেন। কিন্তু তাঁকে নাকি নিয়মিত ক্লাস নিতে দেখাই যায় না, অভিযোগ পড়ুয়াদের অভিভাবকদের। কোনও কোনও অভিভাবক বলছেন, এই বছরে নাকি ওই শিক্ষককে স্কুলে মাত্র দুই দিন দেখা গিয়েছে। তাও ক্লাস নিতে নয়, অফিশিয়াল কাজকর্ম করতেই নাকি এসেছিলেন ওই শিক্ষক। নিয়মিত ক্লাস না করানোর প্রতিবাদে এদিন ওই শিক্ষককে দীর্ঘক্ষণ স্কুলে আটকে রাখলেন অভিভাবকরা। শেষে পরিস্থিতি সামাল দিতে ডোমজুড় থানার পুলিশ গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। যদিও অভিভাবকদের এই অভিযোগের বিষয়ে ওই শিক্ষকের সংবাদমাধ্যমের সামনে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। কিন্তু ধ্রুবজ্যোতি সেন নামে ওই শিক্ষক যে নিয়মিত স্কুলে আসেন না, সেই কথা একপ্রকার মেনে নিয়েছেন স্কুলের টিচার-ইন-চার্জ অমর চট্টোপাধ্যায়ও।

আর এখানেই স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে,ওই শিক্ষক ক্লাস নিচ্ছেন না, অথচ সময় মতো বেতন তুলে যাচ্ছেন কীভাবে? মাথায় কারও হাত না থাকলে কি এমন সম্ভব? প্রশ্ন তুলছেন বিক্ষোভরত অভিভাবকরা। একই প্রশ্ন স্কুলের টিচার-ইন-চার্জের গলাতেও। আর এখানেই প্রশ্ন উঠছে, কে এই ধ্রুবজ্যোতি সেন? কোনও রাজনৈতিক শিবিরের সঙ্গে কি ঘনিষ্ঠতা রয়েছে তাঁর? জানা যাচ্ছে, ধ্রুবজ্যোতি সেন তৃণমূলের শিক্ষক সেলের একজন সক্রিয় কর্মী। এছাড়া তৃণমূলের নমঃশূদ্র সেলের জেলা সভাপতি হিসেবেও রয়েছেন তিনি। তাহলে কি রাজনৈতিক সেই প্রভাব-বলেই নিয়মিত ক্লাস না নিয়েও ছাড় পেয়ে যাচ্ছেন তিনি?

ইউনিস আলি মোল্লা নামে স্থানীয় এক বাসিন্দার সন্তান পড়ে এই স্কুলে। দীর্ঘদিন পরে ধ্রুবজ্যোতিবাবুকে স্কুলে আসতে দেখে তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভে সামিল হয়েছেন ইউনিসও। ওই অভিভাবক বলছেন, ধ্রুববাবু স্কুলের নিয়মিত আসেন না। ছোট ছোট পড়ুয়াদের ক্লাস নেন না। ফলে পড়ুয়াদের অসুবিধা হচ্ছে। এ নিয়ে তাঁরা প্রধান শিক্ষককে জানালেও কোন কাজ হয়নি বলে দাবি। এদিকে বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হয়েছিল স্কুলের টিচার-ইন-চার্জ অমর চট্টোপাধ্য়ায়ের সঙ্গেও। তাঁর কথাবার্তাতেই স্পষ্ট, ওই শিক্ষকের ভূমিকা নিয়ে বেশ অসন্তুষ্ট তিনি। কার্যত অভিভাবকদের অভিযোগকেই মান্যতা দিয়ে তিনি স্বীকার করে নিলেন, ধ্রুবজ্যোতিবাবুকে নিয়মিত স্কুলে দেখা যায় না। তাঁর সটান প্রশ্ন, মাথায় কারও হাত না থাকলে কি এমন সম্ভব?

এই সমস্যার বিষয়ে জেলার ডিআই-কেও জানিয়েছেন তিনি। একাধিকবার জেলাস্তরের অফিসারদের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। স্কুলের হাজিরা খাতাও দেখানো হয়েছে সেখানে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কাজের কাজ কিছুই হয়নি বলে দাবি টিচার-ইন-চার্জের। উল্টে সেই অফিসারই বদলি হয়ে গিয়েছেন বলে দাবি তাঁর। ডিআই-এর কাছে কী কী বিষয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন, সেই বিষয়টি অবশ্য সংবাদমাধ্যমের সামনে বলতে চাইলেন না তিনি। তবে ডিআই অফিস থেকে যদি তাঁকে আবারও ডেকে পাঠানো হয়, তাহলে তিনি আবারও সেখানে গিয়ে যা জানানোর, তা জানাবেন বলেই দাবি করলেন।

এদিকে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কাউন্সিলের চেয়ারম্যান কৃষ্ণ ঘোষের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হলে, তিনি জানিয়েছেন এ ব্যাপারে তাঁর কাছে কেউ লিখিত অভিযোগ করেননি। তিনি এ ব্যাপারে এসআই-এর কাছে রিপোর্ট তলব করবেন। এর পাশাপাশি কেউ অভিযোগ করলে তিনি ব্যবস্থা নেবেন বলেও আশ্বাস দেন। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি শাসক দলের নেতা হলেও যে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনও অসুবিধা হবে না, সেই নিয়েও আশ্বস্ত করেন তিনি।

Related Articles

Back to top button