করোনা ভাইরাস ও রবীন্দ্রনাথ
বাসুদেব মাঝি
দূরদৃষ্টি পেজটা পাঠকদের জন্য ,পাঠকদের নিজস্ব মতামতের জন্য দায়ী নয়, নিউজ সারাদিনে কর্তৃপক্ষ ।
সত্যিই আমার-আপনার, সবার ‘চোখের বালি’ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই ভাইরাস। সব জায়গায় আজ ‘ছুটি’, একে একে সব যেন ‘তাসের দেশ’ এর মতো ভেঙে পড়ছে। এক অদ্ভুত ‘সভ্যতার সংকট’ তৈরী হয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিলো ‘খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন’ দিয়ে। একদিন বিদেশ থেকে ‘সোনার তরী’ বেয়ে এলেন রাজপুত্র। আর সেই ‘বাল্মীকি প্রতিভা’-র হাত ধরেই এদেশে হলো মারণ ভাইরাসের প্রথম আগমন। যাকে বলে ‘গোড়ায় গলদ’। তারপর থেকে কর্তৃপক্ষ যতই আমাদের ‘তোতা-কাহিনী’ শুনিয়ে যাক, আমরা জানি সহজে ‘মুক্তির উপায়’ নেই।
‘কাবুলিওয়ালা’ থেকে ‘পোস্টমাস্টার’, সবাই এখন লকডাউনে বন্দী। ‘সদর ও অন্দর’ করা চলবে না। বাইরে থেকে ভাইরাস নিয়ে ঘরে ঢুকলেই ‘নষ্টনীড়’। তা সত্ত্বেও কেউ ‘বীরপুরুষ’ সেজে বাইরে আড্ডা মারতে গেলে তার ‘শেষের কবিতা’ লিখে দিচ্ছে পুলিশ। তাই ঘরে বসে ‘স্ত্রীর পত্র’ পড়েই সময় কাটাতে হচ্ছে। সেই ‘চণ্ডালিকা’-র দুটি ‘রক্তকরবী’ চোখের ‘দৃষ্টি’-র সামনে ঘর মোছা ও বাসন মাজাতেই জীবন ‘উৎসর্গ’ করতে হচ্ছে পুরুষজাতিকে। ‘সহে না যাতনা-‘।
আর যাদের ঘরে বসেও ওয়ার্ক ফ্রম হোম করতে হচ্ছে, তাদের তো প্রায় ‘সম্পত্তি-সমর্পণ’ কেস। শুধু প্রতি ‘রবিবার’ শপিং এর ঝামেলা নেই বলে ট্যাঁকের ‘কড়ি ও কোমল’ কিছুটা সুরক্ষিত থাকছে। তার বদলে সকাল-সন্ধ্যে অবশ্য ‘গিন্নী’-র লেখা ‘গীতাঞ্জলি’ শুনতেই হচ্ছে।
তবু আমরা যারা সামাজিক ‘ব্যবধান’ বজায় রেখে সবকিছুর সঙ্গে ‘যোগাযোগ’ বন্ধ করে আছি, কাজ বলতে রোজ ‘জীবিত ও মৃত’-র সংখ্যা দেখছি, আমরা কিছুটা হয়তো ভালো আছি। কিন্তু ‘সমাজ’ এর যারা ‘প্রান্তিক’ মানুষ, তাদের তো রোজ ‘ঘরে-বাইরে’ করতে হচ্ছে। তাদের আজ সত্যিই ‘নৌকাডুবি’ অবস্থা। রোজ শুনি কত মানুষ ‘রোগশয্যা’-য় শুয়ে জীবনের ‘সমাপ্তি’ ঘোষণার অপেক্ষায় আছে মাত্র।
সারা পৃথিবীর তাবড়-তাবড় ‘ল্যাবরেটরি’ চেষ্টা করছে ওষুধ বার করতে। মোবাইলে ‘আরোগ্য’-সেতু অ্যাপ ডাউনলোড করেছি আমরা। ‘বড়ো আশা করে’ বসে আছি যে এই ‘আপদ’ যেমন ‘অতিথি’-র মতো একদিন এসেছিলো, তেমনই দ্রুত বিদায় নেবে। কিন্তু সেই আশা ‘দুরাশা’ মাত্র।
একবার ভেবে দেখুন তো, এটাই কি ‘প্রকৃতির প্রতিশোধ’ নয় ? পৃথিবী আজ ‘ক্ষুধিত পাষাণ’। উন্নতির নামে যেভাবে ‘আমরা সবাই রাজা’ ধরে নিয়ে রোজ প্রকৃতি ধ্বংস করেছি, এই বিপর্যয় কি তারই ‘শাস্তি’ নয় ? এ তো আমাদেরই ‘কর্মফল’। আমাদেরই ‘দেনাপাওনা’। একটা ‘শোধ-বোধ’, একটা ‘প্রায়শ্চিত্ত’ হয়তো দরকার ছিলো। ‘ঋণশোধ’ তো করতেই হতো। সবই আসলে ‘মায়ার খেলা’।
আনন্দের কথা, মানুষের আজ ‘দর্পহরণ’ হয়েছে। পরিবেশ এখন অনেক বেশি নির্মল। ‘মেঘ ও রৌদ্র’ আবার খেলা করছে। ‘শেষরক্ষা’ নিশ্চয়ই হবে। এই ‘অচলায়তন’ থেকে ‘নিষ্কৃতি” ঘটবেই। জীবন আবার ‘মুক্তধারা’-য় বইবে। আসবে সেই মুহূর্ত, সেই পরিবেশ, ‘চিত্ত যেথা ভয়শূন্য’ হবে। আর ‘চিরকুমার সভা‘র সদস্যরা আবার একদিন ‘শুভদৃষ্টি’ বিনিময় করবে ‘প্রতিবেশিনী’-র সাথে। ‘সানাই’ বাজবে, হবে ‘মাল্যদান’।
‘পুনশ্চ’: ২৫শে বৈশাখের প্রাক্কালে, কবিগুরুর ‘জন্মদিনে’, তাঁরই ‘কথা ও কাহিনী’ দিয়ে গাঁথলাম এই মাল্যখানি। ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন সকলে ??