আত্মাশুদ্ধি

‘আমারও সায় ছিল’, পাশে দাঁড়ালো কিশোরী ধর্ষণে অভিযুক্ত প্রেমিকের

নিজস্ব সংবাদদাতা: “যৌনতায় আমারও সায় ছিল।” তাকেই ধর্ষণের গুরুতর অভিযোগের মুখে দাঁড়িয়েছিল তার প্রেমিক। সব বাধা সরিয়ে আদালতে প্রেমিকের পাশেই দৃঢ়ভাবে দাঁড়ালো কিশোরী মেয়েটি। আর এই বয়ানের জেরেই নাবালিকাকে ধর্ষণ এবং তার গর্ভাবস্থা ঘটানোর অভিযোগে তার প্রেমিকের বিরুদ্ধে নথিভুক্ত হওয়া এফআইআর বাতিল করল রাজস্থান হাইকোর্ট। আদালত সাফ জানিয়েছে, ওই নাবালিকা এবং অভিযুক্ত ব্যক্তির মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল এবং তাদের মধ্যে যে শারীরিক সম্পর্ক ঘটেছিল, তাতে মেয়েটির সম্মতি ছিল।

বিচারপতি দীনেশ মেহতার এক বিচারকের বেঞ্চ বলেছে, “দুই ব্যক্তির অপরিণত আচরণ এবং অনিয়ন্ত্রিত আবেগের কারণে এই ভুল সংঘটিত হয়েছে। এদের মধ্যে একজন এখনও অপ্রাপ্তবয়স্ক। তবে দুজনেই অপরিণতের মতো আচরণ করেছে। দৃশ্যতই ক্ষণিকের আবেগে চালিত হয়েছে তারা। সামাজিক, নৈতিক এবং আইনি সীমা অতিক্রম করে লালসার শিকার হয়েছে। অন্য ক্ষেত্রে একে অপরাধ বলে গণ্য করা হত। কিন্তু, মেয়েটি তার অবস্থানে স্থির যে, সে শারীরিক সম্পর্কের জন্য সম্মত হয়েছিল এবং দুইজনের বাবা-মাই তাদের ক্ষমা করেছেন। বিয়ের বয়সে পৌঁছে গেলে তারা বিয়ে করতে চায়। অবশ্য বিচার যদি চলতে থাকে, তাহলে আবেদনকারী নিশ্চিতভাবেই দোষী সাব্যস্ত হবে, কারণ মেয়েটি নাবালিকা।”

জানা গিয়েছে, বাড়িতে পেটে ব্যথার কথা জানিয়েছিল মেয়েটি। এরপর, তার বাবা-মা তাকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন। চিকিত্সকরা পরীক্ষা করে দেখেছিলেন সে গর্ভবতী। এরপরই তার প্রেমিকের বিরুদ্ধে একটি এফআইআর নথিভুক্ত করা হয়েছিল। যোধপুর পুলিশ ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৬ ধারায় ধর্ষণ এবং পকসো আইনের প্রাসঙ্গিক ধারায় মেয়েটির বয়ান নথিভুক্ত করে একটি মামলা দায়ের করেছিল।

পরে ওই নাবালিকা এক পুত্র সন্তানের জন্ম দেয়। এরপরই তার প্রেমিক তাঁর বিরুদ্ধে হওয়া এফআইআর বাতিল করার জন্য উচ্চ আদালতে আবেদন করেছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন, নাবালিকার বাবা-মা এবং মেয়েটির সঙ্গে সে একটি বোঝাপড়া করেছে। তার বাবা-মা মেয়েটি প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর সঙ্গে মেয়েটির বিয়ে দিতে সম্মত হয়েছেন। কাজেই বিচার চালিয়ে যাওয়া কোনও ন্যায্য উদ্দেশ্য পূরণ করবে না।

আদালত, আবেদনকারী ও মেয়েটির বাবা-মায়েদের জবানবন্দিও নথিভুক্ত করেছে। মেয়েটির বাবা-মা আদালতে জানান, সমাজের চাপ এবং কলঙ্কের কারণে তাঁরা তাঁদের নাতিকে নিজের কাছে রাখতে পারছেন না। শুধুমাত্র, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে এফআইআরটি থাকার কারণে, দুই মাস বয়সী ছেলেটিকে একটি নার্সারিতে থাকতে হচ্ছে। বিচারপতি মেহতা জানান, দোষী সাব্যস্ত হলে ওই ব্যক্তির ১০ বছরের কারাবাস হবে। সেটা ওই মেয়েটির এবং তার সদ্য জন্মানো ছেলের পক্ষে আরও যন্ত্রণার হবে। এই যুক্তিতেই আবেদনকারীর বিরুদ্ধে এফআইআর বাতিল করার নির্দেশ দেন তিনি।

Related Articles

Back to top button