জেলা

ঘাড়ধাক্কা খেলেন  তৃণমূল নেতা

মালদা, 23 অক্টোবর : মানুষের মধ্যে যে ক্ষোভ জমেছে, তা আগেই বোঝা গিয়েছিল ৷ কিন্তু তার জন্য যে কার্যত ঘাড়ধাক্কা খেতে হবে, তা ঠাহর করতে পারেননি তৃণমূল নেতৃত্ব ৷ শনিবার এমনই ঘটল মালদায় ৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্তরবঙ্গ সফরের এক দিন আগে, সেখানে দুই তৃণমূল নেতাকে ঘাড়ধাক্কা দিয়ে গ্রাম থেকে বার করে দিলেন সাধারণ মানুষ ।
গ্রামবাসীদের এই ক্ষোভ যে অস্বাভাবিক নয়, তা মেনে নিয়েছেন আফসার ৷ তাঁর কথায়, ‘‘আমরা এলাকায় নেতৃত্ব দিই ৷ দলের হয়ে ভোট করাই ৷ ফিরহাদ হাকিমের সভায় লোক নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব ছিল ৷ সে কথা বলতে যেতেই আমাকে ছেঁকে ধরেন গ্রামবাসীরা ৷ সরকারি আবাস যোজনায় নাম আসেনি কেন, তা নিয়ে জবাব চাইতে থাকেন ৷ ধাক্কাধাক্কিও করেছেন ৷ খারাপ ভাষায় কথা বলেছেন আমার সঙ্গে ৷ কিন্তু আমরা কী করব ? দলীয় নেতৃত্বকে অনেক বার বলেছি যে, এলাকার 19টি সংসদীয় ক্ষেত্রে কেউ সরকারি আবাস যোজনায় ঘর পাননি ৷ আমাদের কাজ বলার ৷ কিন্তু কাজ কতদূর এগিয়েছে, তা নেতারাই বলতে পারবেন ৷’’একই সঙ্গে এলাকার সকলে যে বঞ্চিত নন, সে কথাও মেনে নিয়েছেন আফসার ৷ তিনি জানিয়েছেন, এলাকায় এমন কিছু মানুষ রয়েছেন, যাঁরা সব পান ৷ আবার এমন মানুষও রয়েছেন, মাসে এক বার রেশনের সামগ্রীটুকু পান যাঁরা ৷ রাজ্যে তৃণমূলের সরকার থাকা সত্ত্বেও বঞ্চনার এই অভিযোগ লজ্জাজনক বলেও মেনে নেন আফসার ৷
রবিবার মালদার হরিশচন্দ্রপুর 1 নম্বর ব্লকের গোলামোড় নবগ্রামে যাওয়ার কথা ছিল পরিবহণ মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের । সেখানে রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার একটি ডিপো উদ্বোধনের কথা ছিল তাঁর । হেলিপ্যাডে জল জমে থাকায় সেই সফর স্থগিত করতে হয়েছে মন্ত্রীকে । কিন্তু সকাল সকাল সেই খবর পৌঁছয়নি হরিশ্চন্দ্রপুরের দুই তৃণমূল নেতা আফসার আলি এবং আবদুল সাত্তারের কাছে ।তাই ফিরহাদের সভায় লোকজড়ো করার কাজে নেমেছিলেন আফসার এবং আবদুল । বাড়ি বাড়ি গিয়ে সেখানে গ্রামবাসীদের ফিরহাদের সভায় যাওয়ার অনুরোধ করেন তাঁরা । কিন্তু দুই নেতাকে দেখেই রে রে করে তেড়ে যান গ্রামের প্রায় 800 নিম্নবিত্ত মানুষ । অভিযোগ করেন, বছরের পর বছর হত্যে দিয়ে পড়ে থাকলেও, সরকারি আবাস যোজনার সুবিধা পাননি তাঁরা ।
স্থানীয়দের অভিযোগ ছিল, ঝড়-জলে আজও ত্রিপল খাটিয়েই জীবন কাটে তাঁদের । তাই মাথার উপর ছাদ তৈরি না হওয়া পর্যন্ত কোনও সভায় যাবেন না তাঁরা । তাঁদের শান্ত করতে চেষ্টায় যদিও ত্রুটি ছিল না আফসার এবং আবদুলের । কিন্তু তাতে হিতে বিপরীতই হয় । প্রথমে গ্রামবাসীদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন তাঁরা । তার পর শুরু হয় ধস্তাধস্তি । তাতে কার্যত ঘাড়ধাক্কা দিয়ে দুই নেতাকে গ্রামছাড়া করেন স্থানীয়রা ।নেতার সঙ্গে এমন আচরণ নিয়ে প্রশ্ন করলে গ্রামের বাসিন্দা নাসিরুদ্দিন শেখ বলেন,‘‘20 বছরেও মাথার উপর ছাদ পাইনি ৷ বার বার কাগজপত্র জমা দিয়েছি ৷ সরকারের লোকজন এসে ছবিও তুলে নিয়ে যাচ্ছে ৷ কিন্তু ঘর আর হচ্ছে না ৷ দুই নেতাকে তা বলতে ওঁরা বললেন, ফিরহাদ হাকিম এলে ওঁকে বলতে ৷ তাহলেই নাকি ঘর হয়ে যাবে আমাদের ৷ এ ভাবেই ভোটের সময় নেতারা আশ্বাস দেন যে, ভোট দিলেই ঘর হয়ে যাবে ৷ কিন্তু ঘর আর হয় না ৷ আজও গ্রামের অনেকে পলিথিন টাঙিয়ে রয়েছেন ৷ নেতারা নিজেদের প্রয়োজনে আসেন ৷ তাই আমরা ঠিক করেছি, ঘর না পেলে, কোনও নেতা-মন্ত্রীর সভায় আর যাব না৷’’সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন গ্রামের বাসিন্দা রুক্মিণী মুশহরও ৷ তাঁর বক্তব্য,‘‘বার বার আমাদের সভায় নিয়ে যেতে আসে এরা ৷ কিন্তু ঘর আর হয় না ৷ তাহলে সভায় কেন যাব ? কী ভয়াবহ বন্যা হয়েছিল গ্রামে ৷ কেউ ত্রিপল পর্যন্ত পায়নি ৷ সরকার শুধু নাম লিখছে আর চলে যাচ্ছে ৷ সরকারি সাহায্য বলতে মাসে এক বার চাল পাই ৷ ওই চাল দিয়েই বড়লোক করে দিয়েছে আমাদের ৷ কিছু নেই আমাদের ৷ সরকারি প্রকল্পের সাহায্যটুকুই তো চাই!’’

Related Articles

Back to top button