বাবা অ্যাথলিট, মা ফিটনেস ট্রেনার; আইপিএলে ঝড় তুলেছেন গুজরাটের নয়া তারা
চেন্নাই: ক্যাচ নিতে গিয়ে কেন উইলিয়ামসন চোট পাওয়ায় ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার হিসেবে মাঠে নেমেছিলেন তিনি। তাতেই গুজরাট টাইটান্স (Gujrat Titans) পেয়ে গেল তাদের নতুন হিরোকে। ২১ বছরের বাঁ হাতি ব্যাটার সাই সুদর্শন (Sai Sudarshan) সুযোগের সদ্ব্যবহার করেন। এরপর দিল্লি ক্যাপিটালসের বিরুদ্ধে রান তাড়ার সময় গুজরাট পেয়ে গিয়েছে দলকে ভরসা দেওয়ার মতো এক তরুণ ব্যাটারকে। সেদিনের ম্যাচে আইপিএল কেরিয়ারের দ্বিতীয় অর্ধশতরান করেন সাই সুদর্শন। অ্যানরিখ নর্জের মতো পেসারের ১৪৮ কিমি গতির বল উইকেটকিপারের মাথায় উপর দিয়ে বাউন্ডার হাঁকিয়ে হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন। কমেন্ট্রি বক্সে এই তরুণ বাঁ হাতি ব্যাটারের প্রশংসা যেন থামছিলই না সুনীল গাভাসকরের গলায়। অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে তামিলনাড়ুর ক্রিকেটারের বিজয়ডঙ্কা বেজে গিয়েছিল (IPL 2023)। সুদর্শনের সাহসী ব্যাটিং দেখে তাঁর পরিচয় জানার জন্য হামলে পড়েছেন ক্রিকেট সমর্থকরা। পরিচয় খুঁজতে গিয়ে জানা গেল, ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন গুজরাট টাইটান্সের এই নয়া হিরো’র রক্তে রয়েছে খেলা। তাঁর উত্থানের পিছনে মা উষা ভরদ্বাজের অবদান সবচেয়ে বেশি। যিনি নিজে একজন প্রাক্তন ভলিবল প্লেয়ার এবং বর্তমানে ফিটনেস কোচ। ক্রিকেটার থেকে স্কোয়াশ খেলোয়াড়দের ফিটনেসের দায়িত্ব থাকে উষার কাঁধে।
সম্প্রতি ঘরোয়া সিজনে সাই সুদর্শনের পারফরম্যান্স ছিল অসামান্য। বিজয় হাজারে ট্রফিতে তিনটি শতরান এবং রঞ্জি ট্রফিতেও একটি সেঞ্চুরি করেন। আইপিএলের আগে তামিলনাড়ু প্রিমিয়র লিগের অকশনে সবচেয়ে দামি ক্রিকেটার ছিলেন সাই। ২১.৬ লাখ টাকায় তাঁকে দলে নেয় লাইকা কোবেই কিংস। গুজরাট টাইটান্সে যত টাকা আয় করছেন তার থেকে বেশি। গুজরাট তাঁকে কিনেছিল ২০ লাখ টাকায়। দিল্লি ক্যাপিটালসের বিরুদ্ধে সুদর্শন যখন নর্জের চ্যালেঞ্জের জবাব দিচ্ছেন তখন টিভি সেটের সাউন্ড বন্ধ করে চেন্নাইয়ের বাড়িতে পুজোয় বসে পড়েছিলেন মা উষা ভরদ্বাজ। একটা সময়ের রাজ্যস্তরের ভলিভল খেলোয়াড়ের কিছুটা আক্ষেপ রয়ে গিয়েছে। সুদর্শনের বাবা জাতীয় স্তরের অ্যাথলিট ছিলেন। ১৯৯৩ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত সাফ গেমসে অংশ নেন। খেলাধুলো রক্তে বইছে সাই সুদর্শনের। তা সত্ত্বেও উষা ভরদ্বাজ কখনও ছেলের খেলা দেখেন না। ছেলে ব্যাট হাতে নামলেই তিনি সোজা চলে যান পূজার জায়গায়। ম্যাচ শেষ হলে তবেই আসন ছাড়েন।
সরকারি হাসপাতালে ঘুষের কারবার? কাঠগড়ায় বারাসাত মেডিকেল কলেজের ওয়ার্ড মাস্টার
বর্তমানে স্ট্রেন্থ অ্যান্ড কন্ডিশনিং কোচ উষার উপর সুদর্শনের ফিটনেসের দায়িত্ব। গোলগাল ছেলেকে সব ফরম্যাটে খেলার উপযোগী করে তুলতে কসুর রাখেননি উষা। স্কোয়াশ কুইন দীপিকা পাল্লিকাল, জ্যোৎস্না চিনাপ্পা এবং অভিনব মুকুন্দ, এল বালাজি, ডি হেমলতার মতো ক্রিকেটাররা তাঁর তত্ত্বাবধানেই রয়েছেন। মাঝেমধ্যে ছেলেকে উৎসাহ দিতে বিরাট কোহলির ফিটনেস ভিডিয়ো দেখান।
মায়ের কাজ সম্পর্কে একটা সময় পর্যন্ত ধারণা ছিল না সাই সুদর্শনের। ট্রেনার হিসেবে কখনও মাকে দেখেনি। স্টেট ক্যাম্প এবং আইপিএলের ট্রায়ালে যাওয়ার পর মায়ের জনপ্রিয়তা বুঝতে পারে সাই সুদর্শন। ২০২০ সালে একটুর জন্য অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ স্কোয়াডে জায়গা হয়নি সুদর্শনের। ২০২১ সালে তামিলনাড়ুর হয়ে সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফিতে ডেবিউ হয় সাই সুদর্শনের। সেবছরের ৮ ডিসেম্বর তামিলনাড়ুর হয়ে লিস্ট এ কেরিয়ার শুরু হয় সুদর্শনের। উইলিয়ামসনের চোট তাঁর সামনে গুজরাটের একাদশের দরজা খুলে দিয়েছিল। সেই ম্যাচে ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার ২০২৩ আইপিএলে নিজের প্রভাব রেখে যেতে চান।