করোনা কেন আশীর্বাদ হতে পারে!
শুভাশিস ঘোষ–কথায় আছে”ওস্তাদের মার শেষ রাতে হয়”। এতদিন আমরা জানতাম মানুষ আমৃত্যু শ্রেষ্ঠ জীব।যার ক্ষমতা প্রশ্নাতীতভাবে প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ব ব্রম্ভ্রান্ডে।আমরা অনেকদিন আগেই মহাকাশ জয় করেছি।উড়িয়ে দিয়েছি একের পর এক নিশান।আমাদের মহাকাশযান গুলি কিভাবে চাঁদে কিংবা মঙ্গল গ্রহে হামাগুরি দেয় তারও অনেক ছবি টিভির পর্দায় বারবার ফুটে উঠেছে।যা দেখিয়ে আমরা পরিস্কার বোঝাতে চেয়েছি যে মানুষ পারে না এমন কোনো কাজ নেই।শুধু মরা মানুষকে জাগিয়ে তোলার মন্ত্রটাই এতদিন নাকি আমাদের হস্তগত ছিল না।কিন্তু না।বর্তমানে করোনা ভাইরাস আমাদের সেই দাবির থোঁতা মুখকে ভোঁতা করে দিয়েছে।কমবেশি ২২৩ টি দেশের প্রায় সাতশো কোটি মানুষকে এখন ঘরবন্দি করে দিয়েছে।শুধু তাই নয় এই ভাইরাসের মৃত্যুর হাতছানি থেকে রক্ষা পেতে এখন আমরা বাধ্য হচ্ছি সামাজিক দুরুত্ব তৈরি করতে।যদিও একাকিত্ব ও স্বার্থপরতা আজকের এই সমাজ ব্যবস্হায় প্রায় সব ঘরেই । সামাজিক দুরুত্ব তৈরির মুল্যবোধটা আমরা অনেক দিন আগে থেকেই রপ্ত করতে শুরু করেছিলাম।এমন তো অনেক ঘটনাই অতীতে আমাদের জানা আছে যেখানে মা কে বৃদ্ধাবাসে ফেলে রেখে ছেলে বৌ নিয়ে বিদেশে সেটেল্ট হয়েছেন।আবার এমনো শূনেছি ছেলে তার মাকে সাথে করে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বাড়ি টাকাকড়ি সব লিখিয়ে নিয়ে তা বেঁচে দিয়ে মাকে এয়ারপোর্টের চত্বরে একা ফেলে রেখে আমেরিকার উড়ান ধরে পীঠটান দিয়েছে।মা তার ছেলের উপর ভরসা করে সব লিখে দিয়ে সম্পুর্ণ নিঃস্ব হয়ে পথের ভিখারীতে পরিণত হয়েছেন।যার রোজনামচা নিয়েই এখন বাঁচা মরা।সুতরাং করোনার সোস্যাল ডিস্টেন্সিং পদ্ধতিটা সামাজিক দুরুত্ব তৈরির উপর একটা সিলমহর লেপে দেওয়ার মত ঘটনা ছাড়া আর কিছূই নয়। যেখানে আমাদের সবাইকেই যে আগামী দিনে ঘরের মধ্যেই আরো ঘর বানাতে হবে না তার নিশ্চয়তা এই মুহুর্তে আর কেউ দেবে না।তবুও বলবো করোনা কিন্তু এই মহুর্তে আমাদের কাছে অনেকটাই আশীর্বাদের।কেন বলবো না? কখনো কেউ ভেবেছেন দেরাদুনের রাস্তায় হরিণ ঘুরে বেড়াবে।কিংবা গঙ্গায় আবার ডলফিনদের দেখা পাওয়া যাবে। কেন বলছি ?এই ভাইরাস যতই মানুষ হত্যা করুক আদপে এটা কিন্তু পৃথিবীকে পরিশুদ্ধই করছে।বলা হচ্ছে পৃথিবীর বুকে জনসংখ্যার চাপ ক্রমেই বাড়ছে।দেখা যাচ্ছে আন্তর্জাতিক জতিসংঘের পরিসংখ্যান যাতে গণচীনের জনসংখ্যা এখন ১,৪৩,৩৭,৬৮৬,যেখানে দ্বিতীয় ভারতের হল ১,৩৬,৬৪,১৭,৭৫৪।যেখানে ইউরোপিয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলির মোট জনসংখ্যা হল ৫১,২৪,৯৭ ও আমেরিকার ৩১ কোটি নব্বই লক্ষ৬৪ হাজারের মতো। এক্ষেত্রে রাশিয়া হল বিশ্বের সর্ববৃহৎ দেশ যার মোট আয়তন ১৭,০৯৮,২৪২ কি,মি যা পৃথিবীর ১১% জায়গা দখল করে আছে।দ্বিতীয় বৃহত্তর রাষ্ট্র কানাডা।এর মোট আয়তন ৯,৯৮৪,৬৭০ বর্গ কিলোমিটার যা পৃথিবীর আয়তনের ৬.৭%।তৃতীয় যুক্তরাষ্ট্র।তারপর চীন।সেই দিক দিয়ে ভারত হল সপ্তম আয়তনযুক্ত দেশ যার মোট দৈর্ঘ্য ৩,২৮৭,২৬৩ বর্গকিলোমিটার।যা পৃথিবীর ২%।সুতরাং বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম কানাডার জনসংখ্যা ২০১৮র আদমশুমারি অনুযায়ী ৩৭,০৬৭,০১১। প্রতি কিলোমিটারে জনঘনত্ব ৩.৯২ জন। আমাদের পৃথিবীর এই জনবৈচিত্রের চরম বৈষাম্যই আজ আমাদের মাঝে সবচেয়ে বড় বিপদ হয়ে উঠেছে।যে দেশে আকারে বড় তার জনসংখ্যা আর যে দেশ তুলনায় আকারে ছোট তার জনঘনত্ব দ্বিগুন কোথাও কোথাও তিনগুন চার গুন বেড়ে চলেছে।যাকে অনেক ক্ষেত্রেই নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব হয়না।ফলে জনঘনত্বের মহারণে পড়ে প্রাণী জগতের বাসযোগ্য অঞ্চলে ক্রমেই মানষের থাবা বসছে।যারই দরুণ আজ অসংখ্য বন জঙ্গল সাফ করে মানুষের বসতি গড়ে উঠছে।ধ্বংস হচ্ছে প্রকৃতি ও তার পরিবেশ।গত কয়েক দশকে আমাদের দেশের নদীমাতৃক সুন্দর বন অঞ্চলের অনেক জায়গা মানুষের করাল গ্রাসে চলে গেছে বলা যায়।একদা ১০৪ টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত সুন্দর বনের এখন মাত্র ৪৮ টিতে বনজ পশু পাখির দেখা মেলে।যাতে নিরাপত্তার কোনো বালাই নেই।মাঝে মধ্যেই বনপ্রাণী হত্যার অভিযোগ পাওয়া যায়।একই ভাবে গত ২০১৯এ আগষ্টে যেভাবে ব্রাজিলের আমাজন জঙ্গলকে পুড়িয়ে সেখানে বন্যপ্রাণী হত্যার তান্ডব লীলা চালানো হয়েছিল তা যে পৃথিবী ধ্বংসের এক ট্রেলার দেখানো ছিল তা বলাই যায়।এর সাথে গোটা বিশ্বজুরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে চলছে পরমাণবিক বোমা তৈরির কারখানা।ভয়ঙ্কর ধ্বংসাত্বক সেই বোমার অতিরশ্মির কারণে পৃথিবীর বুক ক্রমেই তপ্ত হয়ে উঠছে।যার সাথে বেড়ে চলেছে অনিয়ন্ত্রিত ভাবে মাটির তলা থেকে জল সিঞ্চন।শুকিয়ে যাচ্ছে মাটির জলধারণ ক্ষমতা।ফলে ভুপৃষ্ঠের উষ্নতায় ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে সমুদ্রের উচ্চতা। গত ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবসের থিম ছিল বায়ু দূষণ।প্রায় ১০০ টি দেশ এই অনুষ্ঠানে যোগদান করে।যার প্রধাণ আলোচ্য সুচিই ছিল কিভাবে বায়ুতে দূষণের মাত্রা কমানো সম্ভব তার পদক্ষেপ গ্রহণ।যেখানে আমাদের দেশের চিত্রটাও বেশ খানিকটা হতাশা ব্যাঞ্জক।যাকে ঘিরে দেশ বিদেশের পরিবেশ পন্ডিতদের উদ্বেগ আশঙ্কা কিছু কম ছিল না।কিন্তু এসবকেই বুড়ো আঙুল দেখিয়ে চলেছে গোটা বিশ্বের তাবর শক্তিমান দেশগুলি।যার মধ্যে চীনের দ্বারা বায়ু দূষণের মাত্রা সবচেয়ে বেশি হলেও তাতে নূন্যতম ভ্রুক্ষেপ বেজিং কোনোদিন দেখায়নি।যাতেই আবার নতুন করে দূষণের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে ব্রাজিলের জাহেদ বোলাসেনা আমাজন ধ্বংসের তাস খেলে।যাকে কিনা পৃথিবীর ফুসফুস বলে যেখান থেকে পৃথিবীর ২০ শতাংশ অক্সিজেন তৈরি হয়।মোট ২.১ মিলিয়ন বর্গ মাইল এলাকা জুরে বিস্তৃত এই জঙ্গলের ৪০% শতাংশ ব্রাজিলে পড়লেও এর বাকি অংশ পেরু,ভেনেজুয়েলা,ইকুয়েডর,বলিভিয়া,গায়না,ও সুরিনামের মধ্যেও বিস্তৃত।বলা ভাল এই রেন ফরেষ্টকে যদি একটা দেশ হিসাবে ধরা যায় তাহলে সেটা বিশ্বের মধ্যে নবমতম দেশ হিসাবে আত্মপ্রকাশ করতে পারতো।যেখানে কম পক্ষে ৪০ হাজার প্রজাতির গাছ,৩ হাজার প্রজাতির মাছ ১৩০০ প্রজাতির পাখি,ও ২.৫ মিলিয়ন প্রজাতির কীট পতঙ্গের বাস আছে। শুধু তাই নয় এখানে ৫০ টি গোত্রের ২১ মিলিয়ন আদিবাসী মানুষ বাস করে যাদের জীবন জীবিকা সবটাই এই জঙ্গল নির্ভর।অথচ প্রতি সেকেন্ডে এখানকার বনপ্রাণী থেকে পরিবেশ ধ্বংসের মারণ কর্ম প্রয়াস চলছে।যারই রাষ্ট্রীয় যড়যন্ত্রের শিকার হয়ে এই বিশাল বনাঞ্চলের তেত্তিশ শতাংশ অঞ্চল সম্পুর্ণ ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিল গত জুন জুলাই আগষ্টে।প্রায় তিনমাস ধরে জ্বলতে থাকা জঙ্গলের লেলিহান শিখা নাকি মহাকাশের স্যাটেলাইটেও ধরা পড়েছিল।যারই বার্তা স্বয়ং উপরোয়ালার কানে হয়তো পৌছে গিয়েছিল।সৃষ্টির স্রষ্ট্রা সেদিন হয়তো কম্পিত হয়ে ছিলেন। লোভি মানুষের এই ভয়নক লালসা দেখে বোধহয় প্রতিশোধ নিতেই আজ এই মারাত্মক ভাইরাসের আনয়ন।যার কোপে পৃথিবীর এক তৃতীয়াংশ মানুষের মৃত্যু যদি নিশ্চিত হয় তাহলে এটাও সত্যি এই বিপুল জনসংখ্যায় মানুষের ঘরবন্দি আদপে এই ব্রম্ভ্রান্ডের বুকে অন্য প্রাণী কীট পতঙ্গদের বেঁচে থাকার অধিকার ফিরিয়ে দিচ্ছে।যারই কিছু কিছু ছবি দেরাদুনের রাস্তায়,কখনো মুম্বাইয়ের সীবিচে তো কোলকাতার গঙ্গায় দেখা যাচ্ছে।