প্রয়াত রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের স্মৃতি চারণে স্বপন দত্ত বাউল
প্রয়াত রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের স্মৃতি চারণে স্বপন দত্ত বাউল ।।।।।।।।।।।।
সংবাদ দাতা —– সেই দিন গুলো সত্যি আজ আর নেই । ভারতের প্রাপ্তন রাষ্ট্রপতি প্রনব মুখোপাধ্যায় আমাদের সকলকে ছেড়ে চিরতরে চলে গেছেন , তার প্রয়ানে দেশের এক অভুতপূর্ব ক্ষতি হলো এক উজ্জ্বল নক্ষত্র পাত, দেশবাসীর জীবনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে ,সাত দিন রাষ্ট্রীয় শোক পালন চলছে । সব জায়গায় তার ছবি আজ শুধুই স্মৃতি ।প্রয়াত রাষ্ট্রপতির চরণে শত কোটি প্রনাম জানিয়ে তার বিদেহ আত্মার শান্তি কামনা করে শ্রদ্ধাঞ্জলি দিয়ে পূর্ব বর্ধমানের বাউল শিল্পী স্বপন দত্ত শ্রদ্ধেও রাষ্ট্রপতির স্মৃতি চারণা করেছেন এবং শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করে আর বিদেহ আত্মার শান্তি কামনা করে বলেন । রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় আমার জীবনে যেন বট গাছের ছায়া তার কাছে এত ভালোবাসা পেয়েছি তার কত কথা শুনেছি তিনি আমার একজন অবিভাবকের মত ছিলেন। প্রনব মুখোপাধ্যায় হয়ত আমাদের কাছে লোক চোখে আজ আর নেই কালের নিয়মে আমাদের সকলকেই এই পৃথিবী থেকে অভিনয় শেষ হয়ে গেলে চিরতরে ভব সিন্ধুর পাড়ে বিদায় নিতে হবে তবু রাষ্ট্রপতিকে আমরা ” হৃদ মাঝারে রাখব ছেড়ে দেব না , হৃদ কমলে রাখব তাকে ছেড়ে দেব না ” । অর্থাৎ রাষ্ট্রপতি লোক চোখে না থাকলেও দেশ বাসীর হৃদয় কলমে আসন অলংকৃত করে থাকবেন যুগ যুগ ধরে । তিনি সকল মানুষকে তো ভালোবাসতেনই আর সকল রাজনৈতিক দলের মানুষকেও সমান ভালোবাসতেন কারো সঙ্গে তার ঝগড়া বিবাদ মনোমালিন্য ছিলো না । অর্থাৎ তিনি কোনো তর্কে যেতেন না সকলের কথা শুনতেন, তাই সকলের মুখে একটাই কথা প্রনব বাবু রাষ্ট্রপতি ছিলেন খুব ভালো মনের মানুষ । কলকাতা নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে এক রাজ্য সম্মেলনের বড় অনুষ্ঠানে তার সঙ্গে আমার প্রথম আলাপ । আকাশবাণী ভবনে কলকাতায় আমি একটি অনুষ্ঠান করতে গিয়ে ওইদিন যোগ দিয়েছিলাম ওই সম্মেলনে তার আগেই অনুষ্ঠানের পক্ষ থেকে আমাকে ওই দিন সম্মান দেওয়া হবে আমি জানতাম । নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে মন্ত্রী জয়রাম রমেশ , অধীর চৌধুরী , আবু হেনা , আব্দুল মান্নান , মোহাম্মদ সোয়ারব , প্রদীপ ভট্টাচার্য , দীপা দাস মুন্সী , মোসোম নূর ও শাকিল আহম্মেদ ছাড়াও বহু বিশিষ্ঠ ব্যক্তিত্ব মঞ্চে আসন অলংকৃত করে ছিলেন এবং কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রী প্রনব মুখোপাধ্যায় ছিলেন প্রধান অতিথি । ওনারা সকলেই তাদের মূল্য বান স্বাক্ষর করে আমাকে সম্মানপত্র সংবর্ধনা দেন অগণিত দর্শক বৃন্দের মাঝে ।আমাকে সংবর্ধনা দিয়েছিলেন অসহায় অনাথ প্রতিবন্ধী মানুষের সাথী ও জনগণের শিল্পী বন্ধু স্বপন দত্তর সমাজ সেবার আলোয় বহুমুখী প্রতিভা শুধু বাংলার নয় ভারতের এক আশ্চর্য্য প্রদীপ সম্মান । প্রনব বাবু নিজে তার মূল্য বান স্বাক্ষর করেন । আমার বহুমুখী প্রতিভার গুনে মুকদ্ধ হয়ে এবং আমার সমাজ সেবার আলোয় বহুমুখী প্রতিভার সকল প্রমান পত্র কাজ দেখে খুশি হয়ে আমাকে অনেক মূল্যবান কথা বলেছিলেন যা আমার কাছে জীবনে চলার পথে আজও পাথেও হয়ে আছে। আমি একজন গরিব ঘরের ছেলে আমার জীবনের কথা শুনে মুখে মিষ্টি হেসে বলেছিলেন স্বপন শিল্পী জীবনটাই বড় কষ্টের কত ঘাত প্রতিঘাত অবহেলা অনাদর সমালোচনা নিন্দা কত ঝড় আসবে , তোমার যে গুন গুলি আমি দেখলাম তুমি বলছ জীবনে সব কিছু তুমি শেখার সুযোগ পাও নাই অনেকটাই তোমার ভগবানের দেওয়া জম্মগত প্রতিভা তাই বলছি তুমি কিন্তূ কখনো ভেঙ্গে পড়বে না চলার পথে পিছু হাঁটবে না । জানবে সমালোচনা নিন্দা যতদিন থাকবে তুমি কিন্তূ বিশেষ কেউ হয়ে সবার মাঝে বেঁচে থাকবে যেদিন সমালোচনা বন্ধ হয়ে যাবে সেদিন তুমি শেষ । তাই তোমার বহুমুখী প্রতিভার মধ্যে যখন ঐশ্বরিক বিদ্যা রয়েছে তখন তোমাকে ঈশ্বর কে ডেকেই পথ চলতে হবে তুমি যদি সাধনায় লক্ষ ভ্রষ্ট না হও একদিন তুমি শিল্পী জীবনে সফলতা পাবেই সেদিন আজকের আমার এই কথা টা শিল্পী তোমার মনে পড়বে । সত্যি সেদিন একান্ত আলাপে প্রনব বাবুর কথা মেনে পথ চলে আজ আমি সফলতা পেয়েছি। অর্থ মন্ত্রী অবস্থায় তিনি আরো বলেছিলেন দেখো তোমার প্রতিভাগুনে সকলেই মুকদ্ধ তাই তোমাকে সংবর্ধনা দেওয়া হলো জানবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এক অনুষ্ঠানে নিজে সংবর্ধনা পেয়ে বলেছিলেন সকল কাজের সেরা কর্মীর সংবর্ধনা ও সম্মান পাওয়া দরকার তা হলে তারা আরো উৎসাহিত হবে তাদের শিল্প কলা নিয়ে কাজ করতে । ঠিক কথাই বলেছিলেন আমি হয়ত জীবনে অনেক টাকা পয়সা পুরস্কার পাই নাই তবু বহু জায়গায় সংবর্ধনা ও সম্মান পেয়ে আমি সবসময় উৎসাহিত হয়েছি। প্রনব মুখোপাধ্যায় রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর দিল্লী তে রাষ্ট্রপতি ভবনে গেছি রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে আমাকে সম্মানের সঙ্গে আশির্বাদ দিয়েছেন এবং আমার জীবনে বড় পাওয়া রাষ্ট্রপতির গ্রাম বীরভূমের মিরিটির বাড়িতে দুর্গা পুজোয় আমার একবছর ডাক পড়েছিলো । বীরভূম বাউলের আতুর ঘর সেখানে শুধুমাত্র স্বপন দত্ত বাউলের ডাক এ যেন ঈশ্বরের আশির্বাদ রাষ্ট্রপতি থাকা কালীন আমাকে তার বাড়িতে দুর্গা পূজায় অন্ন সেবা করিয়েছিলেন তার নাট মন্দির ঘুড়ে ঘুড়ে গান গেয়ে বেড়িয়েছি । ঢাকিদের তালে তালে গান গেয়ে নেছেছি আজ সবই স্মৃতি । তিনি আমাকে একটি একতারা ও কোল ডুগি পুরস্কার দিয়েছিলেন এবং আর্থিক সম্মান ও দিয়েছিলেন । জিজ্ঞাসা করেছিলেন বাউল তুমি এখুন কি করছো আমি বলেছি বি কম হিসাব শাস্ত্রে অনার্স পাস করে কোনো চাকরি পাই নাই গান তবলা ছবি আঁকা শেখাই আমরা খুবই গরিব । আমার বাবা মৃত বৃদ্ধা মা আছেন শুনে বললেন বাউল মাকে পুজোয় শাড়ি দিয়েছো আমি বললাম না তখন আমার মায়ের জন্য শাড়ি কেনার টাকা ও আমার পায়জামা পাঞ্জাবি কেনার টাকা দিয়েছিলেন ।রাষ্ট্রপতির উপহার দেওয়া শাড়ি আজও মা যত্ন করে পড়ে আমার জীবনে বড় পুরস্কার আমার মাকে রাষ্ট্রপতি শাড়ি দিয়েছেন । খুব বড় মাপের মনের মানুষ ছিলেন তিনি সলক গুণের সমাদর করতেন কাউকে কখনো ছোটো করে দেখেন নি। রাষ্ট্রপতির দেওয়া পুরষ্কার একতারা কোলডুগি নিয়ে আমি দেশে বিদেশে পাড়ি দিয়ে ভারত মাতার সম্মান রাখার চেষ্টা করে চলেছি । আমার বাউলগানে সমাজ সচেতনের কাজে আমি রাষ্ট্রপতির দেওয়া একতারা ও কোলডুগি নিয়ে পথে নেমে মানুষ কে জনগণকে ও সচেতন করে সমাজের কুসংস্কার কুপ্রথা ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপতির দেওয়া একতারায় সুর তুলে কোল ডুগি বাজিয়ে আমার লোক নৃত্যের তালে তালে বাউলগানে প্রতিবাদের ঝড় তুলে সমাজের অনেক সমস্যার সমাধান করে একজন মানুষ হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারি সবই তার আশির্বাদ পেয়ে । আজ তিনি নাই তার কথা বলতে গিয়ে জল ভরা চোখে শ্রদ্ধাঞ্জলি দিয়ে তাকে শত কোটি প্রনাম জানিয়ে তার আত্মার শান্তি কামনা করি । তিনি যেখানেই থাকেন আমার সারা জীবনে যেন রাষ্ট্রপতির আশির্বাদের হাত আমার মাথার উপরে থাকে ঈশ্বরের কাছে আমার এই শুধু কামনা ।স্বপন দত্ত বাউলের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি কে নিয়ে স্মৃতি চারণায় সকল দেশবাসীর উদ্দেশ্যে একটা মূল্য বান কথা উঠে এসেছে যে শ্রদ্ধেও রাষ্ট্রপতি প্রনব মুখোপাধ্যায় আপনাকে আমরা সকলেই হৃদ মাঝারে রাখব ছেড়ে দেব না । আপনাকে হৃদ কমলে রাখব ছেড়ে দেব না ।