গ্রামের পাতায়

প্লাস্টিক চাল গ্রাম বাংলার অসাধুচক্রের হাত ধরে দোকানে পৌঁছাচ্ছে

পশ্চিমবঙ্গে গত কয়েকদিন ধরে এমন গুঞ্জন উঠেছে। শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়; দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশসহ বেশ কিছু রাজ্যে ঝড়গতিতে প্লাস্টিকের চাল বিক্রির খবর ছড়াচ্ছে, এটা যে সত্যি তা প্রমাণিত হয়ে যাচ্ছে অনেক ক্ষেত্রেই।

প্লাস্টিকের চালের ভাত একদম সত্যিকারে ভাতের মতন দেখলেও বোঝা যায় না, তবে সহজ উপায় ভাত রান্না করে ভাত গুলো রুটি করে গোল গোল গোল গোল করলেই বলের মত হয়ে যাচ্ছে এবং সেই বলটাকে যখন উপর থেকে নিচে ফেলছে প্লাস্টিকের বল যেভাবে ডব খায় ঠিক সেভাবে ডব খাচ্ছে, অন্যদিকে সত্যিকারে চালের ভাত এইরকম হচ্ছে না ।

এদিকে  কলকাতার সহ জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম গুলোতে মিনিকেট চালের বস্তাগুলো বেশিরভাগ এক শ্রেণীর  অসাধু ব্যবসায়ীর হাত ধরে প্লাস্টিকের চাল বিক্রি হচ্ছে। কয়েকটি বাজারে একইভাবে প্লাস্টিকের চালের অভিযোগ উঠতে শুরু করে। যা নিয়ে রাজ্য সরকারের এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চ এখন অতি-সক্রিয় আছে কিনা তা আমাদের অনেকে জানানেই। যদিও এখন পর্যন্ত প্লাস্টিকের ডিমের মতো প্লাস্টিকের চালের অভিযোগের বাস্তব ভিত্তি খুঁজছে সংশ্লিষ্টরা। পশ্চিমবঙ্গের বহু নাগরিক প্লাস্টিক চালের বন্ধের আবেদনও জানিয়েছে ভিডিও বার্তার মাধ্যমে। তবে

প্লাস্টিকের চাল’ শব্দটি সর্বপ্রথম সীমিত আকারে সামনে আসে ২০১০ সালে। চীনের ‘উচ্যাং’ নামে একটি ব্র্যান্ডের সুগন্ধি চালের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসার পর প্লাস্টিকের চালের বিষয়টি সামনে আসে। ওই ব্র্যান্ডের চাল সেদেশে বিখ্যাত ছিল, কারণ এতে মেশানো হতো এক ধরনের কৃত্রিম ফ্লেভার। যে কারণে রান্নার পর ভাতে এক ধরনের সুগন্ধ থাকতো। সাধারণ চালের মধ্যে ফ্লেভার মিশিয়ে বাজারজাত করায় এই চালের বিরুদ্ধে ‘নকল চাল’বাজারজাত করার অভিযোগ ওঠে।

এছাড়া, নকল চাল (প্লাস্টিকের চাল) এর বস্তার মধ্যে উচ্যাং এর সুগন্ধি মিশিয়ে প্লাস্টিকের চাল বাজারজাত করার গুজবও শুরু হয় তখন।

এরপর ২০১১ সালে কোরিয়ান টাইমস পত্রিকায় উল্লেখ করা হয়, অসাধু ব্যবসায়ীরা চীনের তাইজুয়ান, শানজি প্রদেশে নকল চাল বিক্রি করছে। ওই চাল আলু, মিষ্টি আলু ও প্লাস্টিক মিশিয়ে তৈরি করা হচ্ছে বলেও প্রতিবেদনটিতে অভিযোগ করা হয়। বলাবাহুল্য, এর সপক্ষে কোনো জোরালো প্রমাণ দেখাতে পারেনি ওই প্রতিবেদনে।

২০১৬ সালে নাইজেরিয়ার কাস্টমস কর্তৃপক্ষ আড়াই টন চাল আটক করে এবং শুরুতে দাবি করে যে এসব আসলে প্লাস্টিকের চাল। কিন্তু পরে তারা সেই দাবি যে ভুল ছিল তা স্বীকার করে। নাইজেরিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, প্লাস্টিকের চালের কোন প্রমাণ তারা পাননি।

‘ফ্রান্স টুয়েন্টি ফোর’ চ্যানেলের একজন সাংবাদিক আলেক্সান্দ্রে ক্যাপরন এই প্লাস্টিকের চালের মিথ্যে গল্পের পেছনের কাহিনি অনুসন্ধান করেছেন  ।

তিনি বলছেন, আমদানি করা চাল যাতে লোকে না কেনে, এবং স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত চাল কেনে, সেজন্য উদ্দেশ্যমূলকভাবে এই গুজব ছড়ানো হয়েছিল ।

কিন্তু গুজব ছড়াতে যারা উন্মুখ, তারা ততদিনে যা করার করে ফেলেছে।

তবে আফ্রিকার কোন কোন দেশে এই গুজব এতটাই ব্যাপক প্রচার পেয়েছে যে সরকারগুলো কথিত প্লাস্টিকের চাল বলে যে কিছু নেই, সেই ঘোষণা দিতে বাধ্য হচ্ছে।

ঘানার ফুড অ্যান্ড ড্রাগস অথরিটি ২০১৭ সালে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছায় যে, ঘানার বাজারে কোনো ধরনের প্লাস্টিকের চাল বিক্রি হয়নি।

Related Articles

Back to top button