মতামত

‘সেই লড়াই এখনও বেঁচে আমার মধ্যে ’, টুইট মমতার সিঙ্গুর-অনশনের ১৬ তম বছরে

নিজস্ব সংবাদদাতা: ২০০৬ সালের ৪ ডিসেম্বর। এরকমই এক শীতের কলকাতায় মেট্রো চ্য়ানেলে অনশনে বসলেন সে সময়ের বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । ধর্মতলার সেই মঞ্চ থেকে আমরণ অনশনের ডাক দিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। দাবি, কৃষকদের মত ছাড়া সিঙ্গুরে জমি অধিগ্রহণ করা যাবে না। সেই ডিসেম্বরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার বুকে আন্দোলনের যে মন্ত্র ছড়িয়েছিলেন, ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটে সেই আন্দোলনের ঝাঁঝে কার্যত ছত্রখান হয়ে যায় ৩৪ বছরের বাম রাজ্যপাট। আজ সেই ৪ ডিসেম্বর।

দিনটিকে মনে করে টুইট করলেন আজকের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। টুইটারে তিনি লেখেন, ‘আজ থেকে ঠিক ১৬ বছর আগে সিঙ্গুরের কৃষক ও গোটা দেশের জন্য আমি আমার অনশনের লড়াই শুরু করেছিলাম। শক্তির কাছে যারা অসহায়, তাদের পাশে দাঁড়ানো আমার নৈতিক কর্তব্য ছিল। লড়াইয়ের সেই আগুন এখনও আমার মধ্যে জ্বলছে। আমি কোনওদিন ভয় দেখিয়ে মানুষের অধিকার কেড়ে নিতে দেব না।’

২০০৬ সালে বামেরা এ রাজ্যে ফের ক্ষমতায় আসার পর তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের প্রথম সাংবাদিক বৈঠক। সেই বৈঠকেই বুদ্ধবাবু ঘোষণা করলেন, এ রাজ্যে গাড়ির কারখানা তৈরি করতে চলেছে টাটা। সিঙ্গুরে টাটা তাঁদের একলাখি গাড়ি ন্য়ানোর কারখানা তৈরি করবে বলে পরে জানান রতন টাটা।

৭০০ একর জমিতে গাড়ির কারখানা ও ৩০০ একর জমিতে অনুসারি শিল্প গড়ে উঠবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। সে বছর মে মাস থেকেই জমি অধিগ্রহণকে কেন্দ্র করে শুরু হয় কৃষক-বিরোধিতা। পথে নামেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়ে মমতার দাবি ছিল, কোনওভাবেই কৃষক স্বার্থকে পায়ে ঠেলা যাবে না।

৪ ডিসেম্বর মমতা যে অনশনের সূচনা করেন ২৬ দিন ধরে চলে তা। ততদিনে সাধারণ মানুষের একটা বড় অংশের সমর্থন তাঁর সঙ্গেই। বামফ্রন্টের তীব্র নিন্দায় পথে ছাত্র-যুব থেকে অশীতিপর বৃদ্ধও। মোড় ঘোরা শুরু হল বঙ্গ রাজনীতির পটের। দু’বছরের মধ্যে জোর থেকে আরও জোরাল হল আন্দোলন। ২০০৮ সালের অক্টোবরে সিঙ্গুর ছাড়ার কথা ঘোষণা করলেন রতন টাটা। ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটে রাজ্যে হল পালাবদল। তৃণমূল এল ক্ষমতায়।

তবে চলতি বছর অক্টোবরে শিলিগুড়ির এক অনুষ্ঠানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলতে শোনা গিয়েছিল, “কেউ কেউ বাজে কথা বলে বেড়াচ্ছে, আমি টাটাকে নাকি তাড়িয়ে দিয়েছি। টাটাকে আমি তাড়াইনি, সিপিএম তাড়িয়েছে। আপনারা লোকের জমি জোর করে দখল করতে গিয়েছিলেন। আমরা জমি ফেরত দিয়েছি। জায়গার তো অভাব নেই। আমি জোর করে কেন জমি নেব? আমরা এত প্রোজেক্ট করেছি, কই জোর করে তো জমি আমরা নিইনি।

আমি পরিষ্কার করে বলি, আমাদের এখানে যত শিল্পপতি রয়েছেন, কারও মধ্যে ভেদজ্ঞান করি না। আমরা প্রত্যেককে চাই। তাঁরা বাংলায় বিনিয়োগ করুক। বিনিয়োগ করে এখানে দরকার হলে অনেক কর্মসংস্থান তৈরি করুক।”

Related Articles

Back to top button