জগৎ জননী জগদ্ধাত্রীর আরাধনায় ভদ্রেশ্বরের ঘোষ বাড়ি
দুর্গাপূজার আনন্দমুখর মেজাজ কাটতে না কাটতেই বাঙালি মন মেতে ওঠে মা জগদ্ধাত্রীর আরাধনায়। যিনি জগৎকে ধারণ করেন তিনি হলেন জগদ্ধাত্রী ।সিংহবাহিনী ,করীন্দ্রাসুর অর্থাৎ হস্তি রূপে অসুরের পৃষ্ঠে দন্ডায়মান দেবী ত্রিনয়না চতুর্ভূজা। দেবীর উদীয়মান সূর্যের ন্যায় গাত্র বর্ণ, দেবীর চার হাতে রয়েছে শঙ্খ ,চক্র, ধনুক ও বান।
বিশেষত কৃষ্ণনগর ও চন্দননগরের প্রাণশক্তি দেবী জগদ্ধাত্রী। এই দেবীর সূচনার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট নিয়ে রয়েছে অনেক মতবিরোধ। অনেকের মতে স্বপ্নাদেশে দেবী জগদ্ধাত্রী পূজার সূচনা করেন রাজা কৃষ্ণচন্দ্র, তার নিজস্ব রাজবাড়িতে।
কোন স্বপ্নাদেশ নয় ২০০৬ সালে দুই বন্ধু মিলে বড় ঠাকুরের আদলে, নিজ হাতে প্রতিমা গড়ে খেলার ছলে শুরু করেন দেবী জগদ্ধাত্রীর আরাধনা। তখনও কেউ জানতো না ,কালক্রমে এই পুজোই ঘোষ বাড়িতে এত সুন্দর রূপ ধারণ করবে। দেবীর আগমন ঘোষ বাড়িতে না হলেও চার বছর পর থেকে প্রতিবছর দেবী ভদ্রেশ্বরের, ৫ নং তেলিপাড়া লেনের ঘোষ বাড়িতে অধিষ্ঠিত হন। আর্থিক সংকটের কারণে এক বন্ধু পিছিয়ে যায় ঠিক তখনই মায়ের ইচ্ছায় আর এক বন্ধু পরিবারের সকলকে সাথে নিয়ে এই পুজো করার সিদ্ধান্ত নেয়। ১৪৩০ সন অর্থাৎ ২০২৩ সালে এসে মা এবারে এক যুগ পূর্ণতা পেল। তামসিক রূপী দেবী জগদ্ধাত্রী ঘোষ বাড়িতে সাত্ত্বিক মতেই পূজিত হন। সপ্তমী ,অষ্টমী ও নবমী এই তিন প্রহরের পুজো কেবল নবমী তিথিতেই পালিত হয়। তপন বাগের মৃৎশিল্পে, দেবী ঘোষ বাড়িতে দেবীমূর্তি রূপে পূজিত হন। দেবীর হলুদাভ গাত্রবর্ণ। দেবী করিন্দ্রাসুর ও তার বাহন সিংহের ওপর আসীন। দেবীর পরনে থাকে বেনারসি ,দেবী নানা অলংকারে ভূষিত হন। সোনা ও হীরে দ্বারা গঠিত দেবীর ত্রিনয়ন। মায়ের ইচ্ছায় প্রতিবছর কোন না কোন দান সামগ্রী এসেই যায়।
নবমী তিথিতে ভোর ৬ টায় ঘটস্নান দ্বারা দেবী পূজার শুভ সূচনা হয়। মহাসমারহে চলতে থাকে টোলের পন্ডিত দ্বারা দেবীর আরাধনা। রাত ৯ টা নাগাদ সন্ধ্যা আরতি পূজার মাধ্যমে নবমী তিথি পূজার সমাপ্তি ঘটে। মাকে দেওয়া হয় নিরামিষ ভোগ প্রসাদ। ভোগে দেওয়া হয় বাসন্তী পোলাও, খিচুড়ি, আলুর দম, লাবরা ,পায়েস, মিষ্টি । সেই দিনই দ্বিপ্রহরে প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ মানুষের নরনারায়ন সেবার ব্যবস্থা থাকে। শোনা যায়, মায়ের কৃপায় অনেকেই দূরারোগ্য ব্যাধি থেকে ভালো হয়ে উঠেছেন তাই বহু মানুষ এই মায়ের কাছে মানত করেন। মা আমাদের সাক্ষাৎ জগৎজননী।পরের দিন অর্থাৎ দশমী তিথিতে মাঙ্গলিক প্রথা মেনে দেবীর দর্পণের মাধ্যমে বিসর্জন করা হয়। একাদশীর দিন শোভাযাত্রার মাধ্যমে ঘোষ বাড়ির দেবী জগদ্ধাত্রীর মূর্তি রূপ গঙ্গা বক্ষে নিরঞ্জন করা হয় ।
হয়তো পরবর্তীকালে মায়ের ইচ্ছায় আরো আর্থিক সাহায্য পেলে এই পুজো আরো বড় রূপ ধারণ করবে।