মিডিয়ার কণ্ঠরোধ করতে পারে না সরকার, সমালোচনা মানেই প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতা নয়: সুপ্রিম কোর্ট
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা কি আদৌ আছে? থাকলেও তা কতটা আছে, কতটাই বা রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে সেই স্বাধীনতা? এই রক্ষা করার দায়ই বা কার- এই নিয়ে প্রভূত প্রশ্ন উঠেছে সাম্প্রতিক সময়ের নানা ঘটনায়। ঘনিয়েছে নানা বিতর্কও। বলতে গেলে, এই বিতর্ক নতুন নয়।এই ঘটনার পরেই আদালতে গিয়েছিল ওই চ্যানেল। প্রথমে হাইকোর্টে মামলা হয়। সেখানে হাইকোর্টের তরফে রায় দেওয়া হয়, কেন্দ্রের এই ‘ব্যান’ যুক্তিযুক্ত। এর পরে সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যায় মিডিয়া ওয়ান। সেই মামলার সাম্প্রতিক শুনানিতেই পর্যালোচনা করে এই মন্তব্য করেছে শীর্ষ আদালত।
আজ, বুধবার মিডিয়া ওয়ান চ্যানেলের উপর থেকে সমস্ত ‘ব্যান’ বাতিল করে সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট বলে দেয়, ক্ষমতার চোখে চোখ রেখে সমালোচনা করতে চাইলে গণমাধ্যমকে দোষ দেওয়া যায় না। কারণ তাদের কাজই এটা। সত্য উদ্ঘাটনের জন্য তারা অনেক কিছুই করতে পারে। সেই কাজে রাষ্ট্র কখনওই নিষেধাজ্ঞা চাপাতে পারে না, তার কণ্ঠরোধও করতে পারে না। এমনটা ঘটলে গণতন্ত্রের ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়েই প্রশ্ন ওঠে, যা কাঙ্ক্ষিত নয়।তবে এই বিতর্কই আবার চূড়ান্ত প্রাসঙ্গিক হয়ে গেল সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক এক পর্যবেক্ষণে। শীর্ষ আদালত আবারও জানিয়ে দিল, শাসকদলের সমালোচনা মানেই প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতা নয়।
আজ, বুধবার সকালে একটি মামলার শুনানি চলার সময়ে প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়-পরিচালিত একটি বেঞ্চ স্পষ্ট বলে দেয়, কোনও গণমাধ্যম সংস্থা যদি সরকারের কাজের সমালোচনা করলেই সরকার বা শাসক তাকে প্রতিষ্ঠান-বিরোধী বলে দাগিয়ে দিতে পারে না। কারণ, ভারত একটি গণতান্ত্রিক দেশ, সেই দেশের মানুষের স্বাধীনতা আছে, নিজের মতামত বা চিন্তাভাবনা ব্যক্ত করার। এই সাংবিধানিক অধিকার কারও থেকে কেড়ে নেওয়া যায় না। গণমাধ্যমের টুঁটি চেপে ধরলে, সেই অধিকারই ক্ষুণ্ণ হয়।সম্প্রতি একটি মালয়ালাম খবরের চ্যানেলকে ঘিরে এই মামলা চলছে। মালয়ালাম নিউজ চ্যানেলটির নাম মিডিয়া ওয়ান। তার বিরুদ্ধে দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তারা জাতীয় সুরক্ষা ক্ষুণ্ণ করছে। এই অভিযোগে ওই সংবাদমাধ্যমকে ‘সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স’ দিতেও অস্বীকার করে কেন্দ্রীয় সরকার। এই নিয়েই বিতর্কের সূচনা হয়, আদালতের দ্বারস্থ হয় মিডিয়া ওয়ান সংস্থা। সেই মামলার শুনানিতেই সুপ্রিম কোর্ট এই বিশেষ পর্যবেক্ষণের কথা জানিয়েছে।
মিডিয়া ওয়ানের বিরুদ্ধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অভিযোগ ঠিক কী?
জানা গেছে, ২০২০ সালে দিল্লির অশান্তি ও সংঘর্ষ নিয়ে যে সমস্ত খবর দেখিয়েছিল মিডিয়া ওয়ান, তা নিয়েই আপত্তি তুলেছিল কেন্দ্র। কেন্দ্র দাবি করেছিল, ওই চ্যানেলটি ১৯৯৪ সালের ‘কেবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক’ আইন ভঙ্গ করেছে। এর জেরে সেই সময়ে চ্যানেলটিকে ৪৮ ঘণ্টার জন্য বন্ধও করে দেওয়া হয়েছিল।