গল্প ও কবিতা

দেশে এখন হবুচন্দ্র রাজার গবুচন্দ্র মন্ত্রীসভা,তাই কলুর বলদসম দেশবাসি”দ্রিঘাংচু”খাচ্ছে।


নীরব মুশাফির–শুনলে অবাক হবেন আমরা এখন এমন এক দেশের নাগরিক যে দেশের রাজা হবুচন্দ্র আর পারিষদরা সবাই গবুচন্দ্র।হ‍্যা গবু অর্থাৎ গরুর মগজ সমৃদ্ধ চন্দ্রবিন্দুর পুঁটকির মত।যে দেশে রাজা মুর্খ হলেও তার চালচলন হাবভাবে কিন্তু খাঁটি ইংরেজীয়ানা।রাজাবাবুটি ঠাঁটবাঁটে আর পাঁচটা দেশের থেকে একদমই আলাদা।যিনি এক কোটি টাকার কোর্ট গায়ে চাপিয়ে দেশোপ্রেমের গল্প শোনান,গরীব মধ‍্যমবর্গ ক্ষেতমজুর মেহনতি মানুষদের নিয়ে সবকা সাথ সবকা বিকাশের স্বপ্ন দেখান,শুধু তাই নয় নোটবন্দি,জি এস টি,তে মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে মারা গেলেও তিনি নির্ধিদায় বলতে পারেন,”মিত্রোঁ মুঝে স্রেফ পঁচাশ দিনো ক‍্যা সময় দিজিয়ে,ম‍্যায় আপকো এক ন‍্যায়া ভারত দেঙ্গে”।মনে পড়ে কবিগুরুর ,হিংটিংছট,কবিতায় হবুরাজার রাজদবারের কথা,”হবুপুর রাজ‍্যে আজ দিন ছয়সাত,চোখে কারো নিদ্রা নাই,পেটে নাই ভাত”। তবুও রাজা চলেন,রাজা দেখেন, রাজা শোনান,কিন্তু রাজা শোনেন না।কারণ দেশের গরীব গুর্ব প্রজাদের যন্ত্রণার কথা শোনার মত ধৈয্য তার নেই।তিনি বলেন ভালো, তাই তার বক্তব‍্য বড়ই শ্রুতিমধূর।তিনি সাধারণত রাজপ্রাসাদের অন্তরালে থাকলেও মাঝে মধ‍্যে দেশ বিপদে পড়লে তখন অবগুন্ঠন ভেঙে টিভিতে মুখ দেখান।শুধু মুখ দেখান না,বরং দেশের ভিখ মাঙ্গাই প্রজাদের নিকট আরো ত‍্যাগের কথা বলে তাদের মুল‍্যবান জীবনটি ভিক্ষা চান।যদিও হবুরাজা এই কথাটা সরসরি বলেন না।তিনি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে এনিয়ে বিনিয়ে যেটা বলেন তার মর্মাথ করলে এটাই দাঁড়ায়”দুনিয়া যায় ভাঁড় মে,হ‍্যাম রাহেঙ্গে আরাম মে”।এই ধরুণ বর্তমানে রাজার এই দেশে লক ডাউন চলছে।করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে এখন প্রজাদের গৃহের ভিতর বন্দি থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।ঠিক যেমন রাজার মন্ত্রীসভার হবুচন্দ্রমন্ত্রীরা তাদের অপার বিদ‍্যাবুদ্ধি সমৃদ্ধ মগজের তিন ফুঁটো তুলো দিয়ে জ‍্যাম করে রাখেন পাছে তা অপ্রয়োজনে বাইরে বেরিয়ে যায়।গত ২৭ মার্চ দিল্লির রাজ দরবারে রাজার পারিষদ দেশের এই দুর্দিনে প্রজাকুলের মহা সর্বনাশ দেখে উৎকন্ঠিত উদ্বিগ্ন রাজার তরফে কিছু অনুদানের কথা ঘোষণা করলেন।একশো সাঁত্রিশ কোটি জণসংখ‍্যার এই দেশে রাজার ঘোষণা,প্রধাণমন্ত্রী জণকল‍্যান যোজনা,যার ফলে ১ লক্ষ৭০ হাজার কোটি টাকার আর্থিক প‍্যাকেজ।বলা হয়েছে এই প্রকল্পের দরুণ দেশের একশো দিনের কাজের শ্রমিকদের মজুরি ১৮২টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০২/টাকা হল।যার সুবিধা তারা আগামী তিনমাস পাবেন।সত‍্যি, এরকম ঘোষণায় দেশের কলুর বলদগুলো যে খুশীতে নিত‍্য করবেন তা আর বলার অপেক্ষা রাখে কি?কিন্তু ওই যে সুকুমার রায়ের মত আমরা এলেবেলে “মুর্খমাছি”।যেখানে মাকড়সার সান-বাঁধানো আঙিনায় বসতে বলার অর্থ কি সেটা বুঝেই প্রশ্ন তুলে বলি”ঢুকলে তোমার জালের ঘেরে,কেউ কোনদিন আর কি ফেরে? বাপ্ রে!সেথায় ঢুকতে মোদের মানা”।তাই রাজাবাবুর দিকে আঙুল উঁচিয়ে বলতে পারি,”লক ডাউনের এই সময় কালে,একশো দিনের কাজ কোথায় পেলে? যেখানে লোক জোটানো মানা,একসাথে অনেক হলেই, সেথায় পুলিশ দেয় যে হানা”।সুতরাং ঢপের প‍্যাকেজ ছড়িয়ে দিয়ে দেশের কলুর বলদদের আবারো একবার ধোঁকা দেওয়ার প্ল‍্যান।আরো আছে,রাজা মশাই আশ্বাস দিয়েছেন,লক ডাউনের এই কঠিন সময় মধ‍্যবিত্ত দেশের মানুষ চাইলে তাদের জমানো গচ্ছিত প্রভিডেন্ট ফান্ডের থেকে টাকা এখনই তুলে নিতে পারেন।যেখানে পি এফের টাকাটা দেশের মানুষের অর্জিত অর্থ যারই একটা অংশ সরকার কেটে রেখে নির্ধারিত অবসর সময়ের পর সেই ব‍্যাক্তিকে ফেরত দেয় সুদ সমেত।যা এখনই তুলে নেওয়ার অর্থ আপনার টাকার উপর আর অতিরিক্ত সুদ সরকারকে গুণতে হবে না।অর্থাৎ এই কঠিন সময়েও হবুচন্দ্র রাজার বদবুদ্ধি কাজ করছে যার ফাঁদে পা দেওয়ার অর্থ মাকড়সার জালে মাছি হয়ে ফেঁসে যাওয়ার সামিল।আরো আছে,বলা হয়েছে প্রতিটি উজ্জ্বলা প্রকল্পের আওতায় এলপিজি গ্রাহককে আগামী তিনটি গ‍্যাস সিলিন্ডার ফ্রিতে দেওয়া হচ্ছে।হবুরাজার গবুচন্দ্ররা চন্দ্রবিন্দুর পুঁটকির মত মন্ত্রীরা বুদ্ধিটা একটু বেশিই এযাত্রায় সান দিয়ে ফেলেছেন। ভেবেছেন কলুর বলদদের যা হোক বোঝালেই চলবে।যেখানে ৮ কোটি উজ্জ্বলা গ‍্যাসের এই ভর্তুকিটা যে আগামী দিনে দ্বিগুন বৃদ্ধি করে পুষিয়ে নেওয়া হবে না সেটার কোন নিশ্চয়তা দিচ্ছেন না।অতএব এক্ষেত্রেও সেই মাছি ধরার মাঁকড়সার জাল আরো বিস্তৃত করার চেষ্টা।এখন ভার আপনাদের উপর।এই দেশে কলুর বলদ হয়ে থাকবেন না কি মুর্খ মাছি হবেন?মনে রাখতে হবে হবু চন্দ্রের রাজ দরবারে আমরা কিন্তু সবাই সুকুমার রায়ের হ য র ল ব।আমাদের নিয়ে খেলা যায়,ছলচূঁত করা যায় আর নিদেন পড়লে পাছায় লাথি মেরে দেশ থেকে ভাগিয়েও দেওয়া যায়।এই যেমন দেখলাম,দিল্লির আনন্দবিহারে।হবুরাজার রাজধানীতে কাজ হারানো অসংখ‍্য মানুষ যখন ঘরে ফেরার তাড়া নিয়ে মাইলের পর মাইল ভুখা পেটে হাঁটছে তখন রাজাবাবু টিভিতে লাইভ শো করে মানুষকে শরীরি কুশলতা শেখালেন।যা দেখে আবার সেই কবি সুকুমার রায়ের ভাষাতেই বলি,”হলদে সবুজ ওরাং ওটাং,ইঁট পাটকেল চিৎ পটাং,মুস্কিল আসান উড়ে মালি,ধর্মতলায় কর্মখালি”।রাজামশাই এখন এই কটি লাইন ভালই মুখোস্হ করেছেন মাঝে মধ‍্যেই যা তিনি তার মনকি বাত অনুষ্ঠানে বলছেন।আর কলুর বলদগুলো ঘন্টা বাজিয়ে নেচে কুঁদে রাজাবাবুর জয়ধ্বনি দিচ্ছে।বাদ সেধেছি আমরা এই মুর্খ মাছির দল।যারা দিবারাত্র গুয়ে মাছির মতন ভনভন করে চলেছি।পারলে দু একটা রাজাবাবুর নাকে কানে ঢুকে আরো গোল বাদিয়ে তুলছি।যাকে হাজার মাকড়সার জালেও বন্দি করা সম্ভব হচ্ছে না।উড়ছি আর বসছি, খাচ্ছি না,খাচ্ছি শুধু”দ্রিঘাংচু”।
‌ সৌজন‍্যে- সংবাদ সোচ্চার।

Related Articles

Back to top button